খুচরোর আকালে জেরবার বনগাঁয় মুশকিল আসান কুপন
নিকাশির অবস্থা বেহাল। পানীয় জল নিয়েও বাসিন্দাদের অভিযোগের অন্ত নেই। তদুপরি যানজট সমস্যা আর বেহাল রাস্তা নিয়ে নাকাল এখানকার মানুষ। কিন্তু এই মুহূর্তে বনগাঁর মানুষকে প্রতিমুহূর্তে চরম নাকাল হতে হচ্ছে খুচরো সমস্যায়। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়েছে যে উত্তর ২৪ পরগনার এই সীমান্ত শহরে খুচরো নিয়ে প্রতিনিয়ত নান অপ্রীতিকর ঘটনার মুখে পড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
স্টেট ব্যাঙ্কের বনগাঁ শাখার মুখ্য আধিকারিক সুখময় চৌধুরীর অবশ্য দাবি খুচরো তেমন সমস্যা নেই। তাঁর কথায়, “গত দু’মাসে দুই লরি খুচরো দেওয়া হয়েছে। ভেন্ডার মেশিন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসে সেখান থেকে খুচরো সংগ্রহ করতে পারেন। বাসমালিকদেরও যথেষ্ট খুচরো দেওয়া হয়েছে। তবে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী খুচরো আটকে রাখায় এমন সমস্যা হচ্ছে বলে অনুমান। তবে আমরা প্রচুর খুচরো সরবরাহ করছি।”
গোটা মহকুমাশহর জুড়ে চলছে এমনই কুপন।—নিজস্ব চিত্র।
স্টেট ব্যাঙ্কের তরফে এমন তথ্য দেওয়া হলেও বাস্তব চিত্র অবশ্য ভিন্ন। দ্রুত ট্রেন ধরবেন বলে বনগাঁর বাটার মোড় থেকে ভ্যানরিকশায় চেপেছিলেন জনৈক নির্মল রায়। ভ্যান যখন বনগাঁ স্টেশনে চত্বরে পৌঁছলো তখন ট্রেন ছাড়তে মিনিট দুয়েক বাকি। বাটার মোড় থেকে স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ৬ টাকা। নির্মলবাবু ভ্যানচালককে ১০ টাকার একটি নোট দিলেন। ভ্যানচালক সেটি ফেরত দিয়ে খুচরো দিতে বললেন। কাছে খুচরো না থাকায় নির্মলবাবু পাশেই এক দোকানে খুচরোর জন্য গেলেন। কিন্তু দোকানদারও খুচরো দিতে পারলেন না। এদিকে ট্রেনও স্টেশন ছাড়তে চলেছে। অগত্যা ভ্যানচালকের হাতে ১০ টাকা গুঁজে দিয়ে ছুট লাগালেন ট্রেন ধরতে।
শুধু নির্মলবাবুই নন, বনগাঁয় ভ্যানরিকশায় যাতায়াতকারী বহু মানুষ আজ খুচরো সমস্যায় পড়েছেন। ভ্যানে উঠলেই শুনতে হচ্ছে, ‘দাদা, খুচরো দেবেন’। যাঁদের কাছে আছে তাঁরা দিচ্ছেন। না থাকায় অনেকে নেমে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ আবার বেশি পয়সা দিচ্ছেন। কেউ পরে ওই ভ্যানেই চড়ে গচ্ছিত টাকার হিসাব মেলাচ্ছেন। শুধু ভ্যানরিকসায় নয়, দোকান-বাজার সর্বত্রই একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বনগাঁবাসীকে।
তবে খুচরো নিয়ে নাকাল হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে কিছু কিছু উপায়ও বের করেছেন ব্যবসায়ী থেকে বাসমালিক সংগঠন। স্থানীয় চাকদহ বাস সিন্ডিকেটের অধীনে ৫৬টি বাস চলাচল করে। বনগাঁ থেকে ভায়া নিমতলা হয়ে চাকদহ ইত্যাদি রুটে বাসগুলি যাতায়াত করে। টিকিট কাটার সময় যাত্রীদের খুচরো দেওয়া- নেওয়া নিয়ে নিত্য ঝামেলা এড়াতে কুপন পদ্ধতি চালু হয়েছে। কাগজের উপরে ৫ টাকার ছাপ দেওয়া কুপন। সত্য সিংহ ও অজিত রুদ্র নামে দুই কন্ডাক্টর জানালেন, “ভাড়ার খুচরো পয়সা ফেরত দিতে না পারলে বা যাত্রীরা খুচরো দিতে না পারলে তর্কাতর্কি বেধে যাচ্ছে। এই ব্যবস্থায় তা অনেকটা সামাল দেওয়া গিয়েছে।” বনগাঁ থেকে চাকদহ যাওয়ার পথে সাতবেড়িয়া পর্যন্ত ভাড়া ৪ টাকা। এখন কোনও যাত্রী ১০ টাকা দিলে কন্ডাক্টর তাঁকে এক টাকার কয়েনের সঙ্গে ৫ টাকার একটি কুপন ধরিয়ে দিচ্ছেন। যা দেখিয়ে যাত্রী পরে তাঁর টাকা ফেরত নিতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। নিত্যযাত্রী এই ব্যবস্থা মেনে নিলেও যাঁরা দূরের যাত্রী বা একবারের জন্য বাসে উঠেছেন তাঁদের কুপন দেওয়ার ক্ষেত্রে আপত্তি উঠছে। কারণ ফের তাঁরা ওই বাসে যাতায়াত করবেন এই নিশ্চয়তা নেই। ফলে অনেকে কুপন নিতে চাইছেন না।
বনগাঁ আদালত চত্বর থেকে বসিরহাটের বদরতলা পযর্ন্ত রুটে চলাচল করা বাসের কর্তৃপক্ষ প্লাস্টিকের এক, দুই ও পাঁচ টাকার কুপন তৈরি করিয়েছেন। কন্ডাক্টররা খুচরো দিতে না পারলে ওই সব কুপন যাত্রীদের দিচ্ছেন। ওই রুটের এক কন্ডাক্টর জানান, এ ভাবে সমস্যার এখন অনেকেটাই সুরাহা হয়েছে। যাত্রীরাও এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। স্বপন পাল নামে এক বাসচালকের কথায়, “একটি বাস বনগাঁ থেকে বসিরহাট চারবার যাতায়াত করলে খুচরো লাগে ১২০০ টাকার মতো। বাজার থেকে আগে ১০০ টাকার খুচরো পেতে হলে ১৫ থেকে ২০ টাকা বাটা দিতে হত। কুপন চালু করার পরে এখন দিতে হয় ৫ থেকে ৬ টাকা।” খুচরো সমস্যা মেটাতে কুপন চালু হয়েছে বিভিন্ন দোকানেও। বনগাঁ টাউন হল এলাকার একটি মিষ্টির দোকানে সাইন বোর্ডে লেখা, ‘খুচরো দিয়ে দ্রব্য ক্রয় করবেন’। প্রায় সব দোকানেই এই একই সুর। শ্যামাপ্রসাদ মণ্ডল নামে এক মিষ্টির দোকানের মালিক জানালেন, “খুচরোর জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। সিঙারার দাম তিন টাকা। ২০টা সিঙারা বিক্রি করলে ৪০ টাকা খুচরো দিতে হচ্ছে। সকলেই বড় বড় নোট দিচ্ছে। আমরা কোথায় খুচরো পাই বলুন তো? তাই সমস্যা মেটাতে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েছি। কাউকে এক টাকা ফেরত দিতে হলে তাঁকে লজেন্স দিচ্ছি। অনেকেই আপত্তি করছেন। কিন্তু উপায় কোথায়?” কুপন ব্যবস্থা চালু হয়েছে সব্জি বাজারেও।
বনগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক বিনয় সিংহ বলেন, “খুচরোর সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে শুনেছি। এক টাকার কয়েন পাওয়া যাচ্ছে না। খুচরো নাকি বাংলাদেশে চলে যাচ্ছে। তা দিয়ে ব্লেড তৈরি হচ্ছে। সমস্যার ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হবে।”
বনগাঁ নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ বসু বলেন, “এক শ্রেণির মানুষ খুচরো নিজেদের কাছে আটকে রেখেছেন। তাঁরাই কৃত্রিমভাবে অভাব তৈরি করছেন। তা ছাড়া ব্যাঙ্ক থেকেও ৫ টাকার কয়েন দেওয়া হচ্ছে না।”
স্টেট ব্যাঙ্কের বনগাঁ শাখার মুখ্য আধিকারিক সুখময় চৌধুরীর অবশ্য দাবি খুচরো তেমন সমস্যা নেই। তাঁর কথায়, “গত দু’মাসে দুই লরি খুচরো দেওয়া হয়েছে। ভেন্ডার মেশিন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এসে সেখান থেকে খুচরো সংগ্রহ করতে পারেন। বাসমালিকদেরও যথেষ্ট খুচরো দেওয়া হয়েছে। তবে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী খুচরো আটকে রাখায় এমন সমস্যা হচ্ছে বলে অনুমান। তবে আমরা প্রচুর খুচরো সরবরাহ করছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.