বছর পঁচিশের যুবতী বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে। কপালে, গায়ে আঘাতের চিহ্ন। বহু ধাক্কাতেও সাড়া না পেয়ে মঙ্গলবার ভোরে বারাসত থানার বামনগাছির মাঝেরপাড়ার বাসিন্দারা ধরে নেন, যুবতী মৃত। বস্তা এনে ঢাকা হয় তাঁর দেহ। খবর যায় পুলিশে। যদিও পুলিশ এসে বোঝে, যুবতী ‘আচ্ছন্ন’। ‘ঘোর’ কাটতে পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেন, সোমবার রাতে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবারই ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বারাসত আদালতে এ দিন যুবতীর গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়। ধৃতদের মধ্যে দেবজ্যোতি করভৌমিক নামে এক জনকে বারাসত আদালতের বিচারক ৪ দিন পুলিশ-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বাকিদের এ দিন আদালতে তোলা হয়নি।
বারাসত হাসপাতালে মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার পুষ্পেন্দু সেনগুপ্ত বলেন, “রিপোর্ট পেলে বোঝা যাবে, ওই মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না।” আপাতত যুবতীটি ওই হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “ধর্ষণে অভিযুক্ত সকলকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। কী ভাবে এই কাণ্ড ঘটল, তার তদন্ত চলছে।” চলতি মাসেই বারাসত থানা এলাকায় ৫টি ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ফলে, এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশের দাবি, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধরা পড়েছে ‘দোষী’রা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গাইঘাটার বাসিন্দা ওই যুবতীর বছর কয়েক আগে বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। বছর পাঁচেকের ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকেন তিনি। কিছু দিন হল গান গাইতে শুরু করেছিলেন মধ্যমগ্রামের একটি বার-এ। মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা দেবজ্যোতি বার-এ গান-বাজনার সঙ্গে যুক্ত। তিনিই ওই যুবতীকে বার-এ কাজের সুযোগ জুটিয়ে দেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি।
সোমবার ঈদ উপলক্ষে বার বন্ধ ছিল। মাঝেরপাড়া এলাকায় একাই থাকেন দেবজ্যোতি। স্থানীয় বাসিন্দা দেবাশিস রায়, বাকিবুর সর্দারেরা জানান, সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ দেবজ্যোতির বাড়িতে বেশ কয়েকজন যুবক-যুবতী ভিড় করেন। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, রাত বাড়তে ওই বাড়িতে ‘গোলমাল’ শুরু হয়। ‘ভাঙচুরের’ শব্দও পাওয়া যায়। এ দিন ভোর ৪টে নাগাদ বাড়ির বাইরে মুখ ধুতে গিয়ে দেবজ্যোতির পড়শি (দু’টি বাড়ি পরে থাকেন) বাঞ্ছারাম মণ্ডল তাঁর কলতলায় ওই যুবতীকে পড়ে থাকতে দেখেন। ঘণ্টা দু’য়েক পরে পুলিশ পৌঁছে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলার পরে দেবজ্যোতিকে খবর পাঠায়। পুলিশের সামনেই ওই যুবতী দেবজ্যোতিকে দেখে বলে ওঠেন, “দাদা, তোমরা আমার এত বড় ক্ষতি করতে পারলে!” বছর আটত্রিশের দেবজ্যোতিকে সেখান থেকেই গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তাঁর ভাগ্নে বছর সাতাশের ব্যোমকেশ মুখোপাধ্যায় এবং দেবজ্যোতির পরিচিত রানা, তিয়াস এবং ছোটকা নামে তিন যুবককে ধরা হয়।
যুবতী পুলিশকে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, নতুন কাজের খোঁজ দেওয়ার কথা বলেই সোমবার দেবজ্যোতি তাঁকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করেছিলেন। সেখানে আরও কয়েকজন পরিচিত ছেলেমেয়ে হাজির ছিল। তাঁকে জোর করে মদ্যপানে বাধ্য করেন দেবজ্যোতিরা। তার পরে তাঁর আর কিছু মনে নেই। ভোরে চোখ খুলে তিনি দেখেন, আশপাশে ভিড়। গায়ে কোনও পোশাক নেই। শারীরিক যন্ত্রণা থেকে ওই যুবতীর অনুমান, রাতে তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়েছে।
যুবতীর মায়ের কথায়, “অভাবের সংসার বলেই মেয়ে বার-এ গান গাইতে বাধ্য হয়েছে। ওর এত বড় ক্ষতি হবে, ভাবতে পারিনি!”
সোমবার রাতে দেবজ্যোতির বাড়িতে গিয়েছিলেন আর এক বার-গায়িকা। তিনি বলেন, “আমাকেও অনুষ্ঠানের কথা বলে ডাকা হয়েছিল। পরে জানতে পারি, তেমন কোনও অনুষ্ঠান নেই। রাতে ওই মেয়েটির সঙ্গে দেবজ্যোতিদের ঝামেলা বাধে। মেয়েটি বলছিল, ‘আমাকে এখানে কেন ডাকা হল?’ বচসার মধ্যে ধাক্কায় একটা কাচের টেবিল ভেঙে যায়। সে সব দেখে রাত ১০টা নাগাদ বেরিয়ে আসি।” দেবজ্যোতির দিদি ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায় থাকেন মাঝেরপাড়াতেই। তাঁর দাবি, “আমার ছেলে ও ভাইকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। তদন্ত হলেই সত্য সামনে আসবে।” |