চুনীদের সোনার দিন ব্রোঞ্জ হয়ে ফিরে এল
তাজ প্যালেসের বিশাল বলরুমের দু’পাশে জায়ান্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠল ১৯৬২-র জার্কাতা এশিয়াডের সোনা জয়ী ভারতীয় ফুটবল দলের ছবি।
বলরুমের বাঁ দিকের বড় টেবিলটায় গোল হয়ে বসেছিলেন যাঁরা, তাঁদের কারও মুখের সঙ্গেই ওই ছবির মুখগুলোর তেমন আর মিল নেই ২০১২-এ। চুনী গোস্বামী, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদ্যোৎ বর্মন, প্রশান্ত সিংহ, আফজল, ফ্র্যাঙ্কো, ইথিয়ারাজ, অরুময়নৈগমরা একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছেন খানিকটা বিস্ময়ে। যেন নিজেরাই নিজেদের নতুন করে চিনছেন। একের পর এক ডাক আসছে মঞ্চ থেকে। হাততালিতে ফেটে পড়ছে শাহজাহান রুম। ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল প্রত্যেকের গায়ে জড়িয়ে দিচ্ছেন কাশ্মীরি শাল। হাতে তুলে দিচ্ছেন রৌপ্যফলক। সবাই একসঙ্গে দাঁড়ালেন। ফটো সেশন হল। চুনী গোস্বামী বক্তৃতা দিলেন। মনে করালেন, “এক লাখ কুড়ি হাজার দর্শক সে দিন ফাইনালে আমাদের বিরুদ্ধে ছিল। তবু আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম।” প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “পঞ্চাশ বছর আগের স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে। জেতার পর বুঝতে পারিনি কত বড় একটা মাইলস্টোন তৈরি করে ফেলেছি। কিন্তু তার পরিবর্তে তো কিছুই পাইনি।” প্রদ্যোৎ বর্মন স্মৃতিচারণ করলেন, “এশিয়াড চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফেরার পর অতুল্য ঘোষ আইএফএ অফিসে বসিয়ে আমাদের চা-সিঙ্গাড়া খাইয়েছিলেন এটুকুই মনে আছে।”
পি কে-চুনী সংবর্ধিত
ফেডারেশনের হীরক জয়ন্তী উৎসবের অঙ্গ হিসাবে ’৬২-র সোনাজয়ীরা সংবর্ধিত হলেন ঠিকই, কিন্তু চুনী গোস্বামীদের সেই সোনার দিন ৬০ বছর পরে যেন ব্রোঞ্জ হয়ে ফিরে এল। মঞ্চে ওঠার আগে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট বলছিলেন, “ওঁরা কিছু টাকা চেয়েছিলেন। আমরা বলেছি চেষ্টা করব। আপনাদের পাশে থাকব।” কিন্তু প্রফুল্ল পটেল যে রাজনীতির জগতের মানুষ সেটা বিলক্ষণ বুঝিয়ে দিলেন মঞ্চে ওঠার পর। যখন চুনী-পিকে সহ সোনার টিমকে পাশে দাঁড় করিয়ে বললেন, “আপনাদের প্রত্যেকের বয়স হয়েছে। আপনাদের সামান্য কিছু স্বীকৃতি দিতে চাই। আপনারা যদি চান, তা হলে প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ চিকিৎসার সব খরচের ভার আমরা নিতে পারি। আপনারাই বলুন, কী চান?”
নাকের বদলে নরুণ! চুনী মাথা নাড়লেন। অন্যরা চুপ। ক্ষমতাবান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সামনে কে আর মুখ খোলে! তুলসীদাস বলরামকে অত রাতে ফোনে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পাওয়া গেলে বিদ্রোহী ফুটবলার নিশ্চয়ই বলতেন, “আমি কী সাধে যাইনি!” ’৫১-র এশিয়াডের সোনাজয়ী দলের একমাত্র জীবিত ফুটবলার আমেদ খান সংবর্ধনা নিতে আসেননি। ’৬২-র দলের বেঁচে থাকা ১১ জন ফুটবলারের মধ্যে ৮ জন এসেছিলেন। বলারামের সঙ্গে অনুপস্থিত অরুণ ঘোষ আর চন্দ্রশেখর। দিল্লিতে আসা এই আটজনকে কাল নেহরু স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হবে সুনীল-নবিদের উদ্বুদ্ধ করতে।
যাঁদের ঘিরে অনুষ্ঠান, তাঁদের কোনও আর্থিক পুরস্কার ফেডারেশন এ দিন না দিলেও, পাঁচতারা হোটেলের অনুষ্ঠানটি ছিল জাঁকজমকের। আই লিগের বিভিন্ন ক্লাবের প্রতিনিধিরা যেমন এসেছিলেন, তেমনই দেখা গেল সাম্প্রতিক ভারতীয় ফুটবলের সবথেকে সফল অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়াকে। গান-নাচের মধ্যে প্রকাশ হল স্মারক পত্রিকা। ’৬২-র সোনাজয়ীদের সঙ্গে ভাইচুং, ইন্দর সিংহ, পারমিন্দর সিংহদের ডেকে নেওয়া হল মঞ্চে। সামনের চেয়ারে তখন ইস্টবেঙ্গল ম্যানেজার স্বপন বলের পাশে বসে মোহনবাগানের অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত খোশগল্পে মশগুল। কে বলবে টোলগেকে নিয়ে দুই প্রধানের মধ্যে ‘যুদ্ধ’ চলছে আড়াই মাস ধরে। সব রাজ্যের সচিব বা প্রেসিডেন্ট এলেও দেখা যায়নি আইএফএ-র কোনও প্রতিনিধিকে। ফেডারেশনের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রব বানের সঙ্গে দেখা গেল জাতীয় কোচ কোভারম্যান্সকে। দু’জনেই নেহরু কাপে বুধবারের প্রতিপক্ষ সিরিয়া নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। পুরনো সোনার-স্মৃতির চেয়ে তাদের কাছে যে আগামী দিনের গুরুত্ব অনেক বেশি।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.