ডিভিসি জল ছাড়লেই রাতের ঘুম ছুটে যেত উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দাদের। ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের দৌলতে এ বারে তার ব্যতিক্রম ঘটল। কয়েক দিন আগে ডিভিসি ৮৭ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে গেলেও এক ফোঁটা জল ঢোকেনি উদয়নারায়ণপুরে।
উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকের বেশির ভাগ অংশ রয়েছে দামোদরের পশ্চিম দিকে। এটি হল সেচ দফতরের ভাষায় ‘স্পিল’ এলাকা। এই দিকে রয়েছে সাবেক জমিদারি বাঁধ। এর উপরেই ভরসা করেন উদয়নারায়ণপুর এবং আমতা ২ ব্লকের বাসিন্দারা। যদিও প্রায় প্রতি বছর ডিভিসি একটু বেশি জল ছাড়লেই তা জমিদারি বাঁধ উপচে দু’টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
এই পরিস্থিতিতে আবার ২০০৭ সালে উদয়নারায়ণপুরের ডিহিভুরসুটে জমিদারি বাঁধে প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন হয়। ফলে ওই বছর ব্যাপক বন্যা হয়। কিন্তু ‘স্পিল’ এলাকা হওয়ার ফলে পরবর্তীকালে জমিদারি বাঁধের ভাঙন সারানোর জন্য টাকা বরাদ্দ করেনি সেচ দফতর। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একবার ভাঙন মেরামতির জন্য স্কিম তৈরি হয়। জেলা পরিষদ সেচ দফতরকে অনুরোধ করে তারা যেন ভাঙন মেরামতির কাজটি করে দেয়। কিন্তু সেচ দফতর সাফ জানায়, দামোদরের পশ্চিম পাড়ের বাঁধের ভাঙন মেরামতির জন্য তারা টাকা বরাদ্দ করবে না। দফতরের পক্ষ থেকে জেলা পরিষদকে পাল্টা অনুরোধ করা হয়, তারা যদি টাকা দেয় তা হলে মেরামতির কাজটি করা যেতে পারে। জেলা পরিষদ পিছিয়ে গিয়েছিল। |
ভাঙন মেরামতি না-হওয়ায় ২০০৭ সালের পর থেকে ডিভিসি যখনই জল ছেড়েছে পরিমাণ যত কম হোক না কেন ডিহিভুরসুটের কাছে বাঁধের ভাঙন থেকে এসে তা বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে।
পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর পূর্ত, সেচ প্রভৃতি দফতরকে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে সামিল হওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করছে। পূর্ত, সেচ দফতর যদি কোনও কাজ করে তার জন্য টাকা বরাদ্দ হবে ১০০ দিনের কাজ থেকে। সেচ দফতরের হাওড়া ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার সুমন্ত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ডিহিভুরসুটে মাটি প্রচুর রয়েছে। ফলে ১০০ দিনের প্রকল্প থেকে ভাঙন মেরামতির টাকা পেতে অসুবিধাও নেই। ৪০০ মিটার ভাঙন মেরামতির জন্য ১০০ দিনের কাজের স্কিম তৈরি করে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরে পেশ করি। সেটি অনুমোদিত হয়।”
সেচ দফতর সূত্রের খবর, ৪০০ মিটার ভাঙন মেরামতির জন্য ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। মাসখানেক আগে কাজ শুরু হয়। রামপুর-ডিহিভুরসুট-আসন্ডা (আরডিএ) গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে মোট ২০০ জন জবকার্ডধারীর নাম চাওয়া হয়। তাঁরাই কাজ করে ভাঙন মেরামতি করেন। সেচ দফতরের আমতা সাব ডিভিশনের এসডিও স্বপনকুমার দত্ত বলেন, “জবকার্ডধারীদের হাজিরা আমরা নিয়েছি। সুপারভাইজারের মাধ্যমে আমরাই তাঁদের ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মজুরি মিটিয়েছি।”
সপ্তাহখানেক আগে ডিভিসি ৮৭ হাজার কিউসেক জল ছাড়ে। সেই জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইলেও তা বন্যার কারণ হয়নি। সেচ দফতরের দাবি, জলের উচ্চতা এতটা বেশি ছিল যে ভাঙন মেরামতি না হলে জল কিন্তু ঢুকে পড়ত। শুধু ডিহিভুরসুটেই নয়, বিকেবাটি, সিংটি, গাজিপুর প্রভৃতি এলাকায় ১০০ দিনের প্রকল্পে দামোদরের পশ্চিম দিকের বাঁধের ভাঙা অংশগুলি মেরামত করছে সেচ দফতর। এইসব ভাঙন মেরামতির জন্য সেচ দফতর টাকা দিত না। কিন্তু ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে প্রায় ২ কোটি টাকার স্কিম করা হয়েছে বলে সেচ দফতর সূত্রের খবর। দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “জেলায় গিয়ে আমি দফতরের বাস্তুকারদের বলেছি, ১০০ দিনের প্রকল্পের সুযোগ নিতে হবে। সেটাই করেছেন আমাদের বাস্তুকারেরা।” জেলাশাসক শান্তনু বসু বলেন, “গত বছর থেকেই সেচ দফতরকে বলা হয়েছে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে বাঁধ মেরামতির কাজ করতে। সেটা তারা করছে। তারই ফল হিসাবে ডিভিসির জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে গেলেও আমরা তা উদয়নারায়ণপুরে ঢুকতে দিইনি।” |