দত্তক নিতে অবিরাম ফোন
লিলুয়ার নালা থেকে কলকাতার হোমে
জ্বর কমেছে। সর্দিও রয়েছে একটু। তবে দেড় বছরের শিশুটি আপাতত মোটামুটি সুস্থ। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বদলে গেল তার ঠিকানা। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে কলকাতার একটি হোম বা উদ্ধার আশ্রমই এখন তার নতুন ঠিকানা। হাল না-ছেড়ে শিশুটির পরিচয় জানার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
সাইকেলে চড়ে এসে একটি পুরুষ ও এক মহিলা রবিবার রাতে লিলুয়া স্টেশন রোডের একটি বড় নিকাশি নালায় শিশুটিকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। গুণবাহাদুর শর্মা নামে এলাকার এক প্রৌঢ় রাস্তার কলে জল নিতে গিয়ে ব্যাপারটা দেখে ফেলেন। নালায় নেমে তিনিই শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান থানায়। পুলিশ শিশুটিকে জয়সোয়াল হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল। চিকিৎসকেরা জানান, জলে ডুবে জ্বর-সর্দি হয়েছিল তার। তবে দ্রুত হাসপাতালে এনে চিকিৎসা শুরু করায় রক্ষা পায় সে।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে শিশুটি আর তেমন কান্নাকাটি করেনি। নার্স-আয়াদের তত্ত্বাবধানে খেলা করেছে সারা বেলা। সে যে সুস্থ হয়ে উঠছে, তার স্বাভাবিক ছটফটানি থেকেই সেটা বুঝতে পেরেছেন চিকিৎসকেরা। তখনই তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, এ দিনই তাকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হবে। তার পরেই হাসপাতাল থেকে খবর যায় বালি থানায়। দুপুরে হাসপাতালেই ভাত ও মাছ খাওয়ানো হয় শিশুটিকে।
সেই শিশু। —নিজস্ব চিত্র
এক আয়া বলেন, “জ্বর থাকায় সোমবার ভাত দেওয়া হয়নি। বেবি ফুডই খেয়েছিল। এ দিন জ্বর কমে যাওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে ভাত খাওয়ানো হয়।”
এ দিন বিকেল ৪টের পরে বালি থানার পুলিশকর্মীরা শিশুটিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালে হাজির হন। তাকে পরানো হয় পুলিশকর্মীদের আনা নতুন জামা। হাসপাতালের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম মেটানোর পরে এক জন মহিলা কনস্টেবল শিশুটিকে কোলে নিয়ে উঠে বসেন জিপে। ভিড় করে জিপ ঘিরে দাঁড়ান জয়সোয়াল হাসপাতালের মহিলা বিভাগের আয়া, নার্স ও অন্য রোগীদের আত্মীয়রা। দু’দিনের অতিথি ফুটফুটে বাচ্চাটিকে ছাড়তে কারও মন চাইছিল না। তবু সকলের শুভেচ্ছা নিয়ে শিশুটি চলল তার নতুন আশ্রয়ে। হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয় লিলুয়া হোমে। সেখানে রয়েছে জেলা শিশু কল্যাণ কমিটির দফতর। পুলিশের তরফে ওই দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয় শিশুটিকে।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, লিলুয়া হোমে এত ছোট বাচ্চা রাখার সুবিধা নেই। জেলা শিশু কল্যাণ কমিটি তাই কলকাতার কিড স্ট্রিটে সরকার অনুমোদিত এবং স্বেচ্ছাসেবী পরিচালিত একটি হোমে পাঠিয়ে দেয় শিশুটিকে। সেটাই এখন ওর ঠিকানা।
কিন্তু রবিবার রাতে আলো-আঁধারি রাস্তায় নালার মধ্যে কারা শিশুটিকে ফেলে গিয়েছিল, তা নিয়ে এখনও ধন্দ রয়েছে। তার বাবা-মায়ের খোঁজ চলছে। সোমবার সকাল থেকেই বালি থানায় গিয়ে বাচ্চাটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন অসংখ্য মানুষ। এক পুলিশকর্মী বলেন, “আমরা বোঝাতে পারছি না যে, থানা থেকে দত্তক দেওয়ার বিষয়ে আমাদের কিছুই করার নেই।” বহু লোক শিশুটির ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন সংবাদপত্রের দফতরেও। ফোনে জানতে চাইছেন, ‘বাচ্চাটি কেমন আছে? কোথায় আছে? কী ভাবে তাকে দত্তক নিতে পারব?’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.