রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে মাজদিয়ার সুধীরঞ্জন কলেজ। অধ্যক্ষকে হেনস্থার অভিযোগে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল রাজ্যে। রায়গঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ দে সরকার কাজে ইস্তফাই দিয়ে দেন। সেখানে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম দেখা গেল হুগলির বলাগড়ের বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ে। অধ্যক্ষ দেবব্রত ঘোষ অন্যত্র চাকরি পেয়ে চলে যাওয়ার কথা বলায় তাঁর পথ আটকে দাঁড়ালেন ছাত্রছাত্রীরাই।
ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, ‘সুষ্ঠু ভাবে’ কলেজ পরিচালনা করেন অধ্যক্ষ। ‘বাস্তবসম্মত’ সিদ্ধান্ত নেন। তাই দেবব্রতবাবুকে যেতে দেবেন না বলে মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে কয়েক ঘণ্টা তাঁকে ঘেরাও করে রাখেন ছাত্রছাত্রীরা। নাছোড়বান্দা পড়ুয়াদের ‘আবদার’ ফেলতে পারেননি তিনিও। সিদ্ধান্ত ‘ভেবে দেখবেন’ বলে জানিয়েছেন। আপাতত তাতেই খুশি ছাত্রছাত্রীরা। মাস খানেক আগে চন্দননগর খলিসানি কলেজেও অধ্যক্ষের বদলি আটকাতে ছাত্রছাত্রীরা ঘেরাও করেছিলেন অধ্যক্ষকেই। তাতে সামিল হন শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা।
ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, দেবব্রতবাবু কারও মন জুগিয়ে চলেন না। |
রায়গঞ্জ ও মাজদিয়ায় অভিযোগ ছিল ঠিক উল্টো। এ বছর ৫ জানুয়ারিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে ওই রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের দিলীপবাবুকে কার্যালয়ের বাইরে টেনে এনে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তার দু’দিন পরেই বহিরাগতেরা কলেজে অবাধে ঘুরে বেড়ায় অভিযোগে মাজদিয়ায় অধ্যক্ষ সরজেন্দ্রনাথ করকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছিল এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে।
সেখানে দেবব্রতবাবু সম্পর্কে তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সুপ্রতিম ঘোষ বলেন, “স্যার ছাত্রছাত্রীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। উনি যে আমাদের মন জুগিয়ে চলেন এমনটা নয়। কিন্তু ওঁর নেওয়া সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বাস্তবোচিত। সব ক্ষেত্রেই অত্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবে কলেজ চালান।” তৃণমূলের বলাগড় ব্লক শিক্ষক সংগঠনের নেতা তপন দাস বলেন, “অধ্যক্ষ দৌড়ঝাঁপ করে কলেজের পরিকাঠামো উন্নয়নের যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। চারিত্রিক দিক থেকেও তিনি অত্যন্ত মজবুত। কেউ অন্যায় করলে মুখের উপর বলে দেন। অনেক সময় আমাদের সংগঠনের সঙ্গে ওঁর মতানৈক্য হয়েছে। কিন্তু ওঁর সদিচ্ছা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই।” |
একই সুর এসএফআই নেতাদের গলাতেও। সংগঠনের হুগলি জেলা সম্পাদক পার্থ দাস বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা চান না, দেবব্রতবাবু কলেজ ছেড়ে যান। ফলে, এসএফআই-ও চায় তিনিই অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলান।” কলেজের বর্ষীয়ান শিক্ষক আকবর হোসেনের কথায়, “কলেজের সকলেই চান দেবব্রতবাবু অধ্যক্ষের পদে থাকুন।”
বিজয়কৃষ্ণ মহাবিদ্যালয় বলাগড় ব্লকের একমাত্র কলেজ। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৮০০। দেবব্রতবাবু অধ্যক্ষ হিসাবে এই কলেজে কাজে যোগ দেন ২০০৫ সালের ১ জুন। সম্প্রতি কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে খণ্ডঘোষের একটি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হতেই ছাত্রছাত্রীরা তাঁকে বাধা দিতে উঠে পড়ে লাগেন। তাঁদের আর্জি কলেজ ছেড়ে যাওয়া চলবে না অধ্যক্ষের। এই দিন আন্দোলনকারীদের অনেকের হাতে এই দাবিতে প্ল্যাকার্ডও ছিল।
দেবব্রতবাবুর বক্তব্য, তাঁর বাড়ি বর্ধমান শহরে। সেখান থেকে জিরাটে কলেজের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার। খণ্ডঘোষের কলেজটি বরং বাড়ির কাছে। তাই তিনি ওই কলেজে চলে যেতে যান। কিন্তু কে শোনে কার কথা! শেষমেশ অধ্যক্ষ জানান, তিনি সিদ্ধান্ত ‘পুনর্বিবেচনা’ করে দেখবেন। এরপরেই বেলা ৩টে নাগাদ ঘেরাও ওঠে।
এ দিনের ঘটনাপ্রবাহে দৃশ্যতই আপ্লুত দেবব্রতবাবু। তাঁর কথায়, “সুষ্ঠু ভাবে কলেজ চালানোর স্বার্থে অনেক পড়ুয়াকেই হয় তো কড়া কথা বলেছি। তারাও দেখছি আমাকে আজ যেতে দেবে না বলছে। সত্যি, ভীষণ ভাল লাগছে। আমি আপ্লুত। তবে একই সঙ্গে দোলাচলেও।” |