শুধু যেতে অস্বীকার নয়, অসুস্থ যাত্রীকে মার ট্যাক্সিচালকের
ডাক্তার দেখাতে যাবেন এক অসুস্থ যুবক। মাকে নিয়ে ট্যাক্সি ডাকতে গিয়েছিলেন। ট্যাক্সিচালক যথারীতি প্রত্যাখ্যান করলেন। প্রতিবাদ করায় তেড়ে এলেন চালক। চলল মারধর। যুবকের মা-ও হেনস্থার হাত থেকে রেহাই পাননি বলে অভিযোগ।
গন্তব্য পছন্দ না হলে প্রত্যাখ্যান করার অভিযোগ কলকাতার ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে নিত্যদিনের ঘটনা। এ বার দলবল জুটিয়ে গায়ে হাত তুলতেও পিছপা হলেন না চালক। মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১০টায় ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার ড্রেনেজ ক্যানাল রোডের নতুন রাস্তার মোড়ে। হেনস্থার শিকার, বৃন্দাবন মল্লিক লেনের বাসিন্দা প্রীতম চট্টোপাধ্যায়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রধান অভিযুক্ত মুন্না সাউয়ের খোঁজ চলছে।
কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থার পদস্থ কর্মী প্রীতমবাবু বেশ কয়েক দিন ধরে ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত। এ দিন সকালে তাঁকে কলকাতার বৌবাজারে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর মা কৃষ্ণাদেবী। বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁরা বাড়ি থেকে রিকশা চেপে নতুন রাস্তার মোড়ের ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে আসেন। প্রীতম লিখিত ভাবে পুলিশকে জানিয়েছেন, ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে গিয়ে তিনি বৌবাজার যাওয়ার কথা বললে মুন্না সাউ নামে এক চালক প্রত্যাখান করেন। প্রীতম তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, কেন তিনি যাবেন না? প্রীতমের অভিযোগ, এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই চালক তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। প্রতিবাদ করায় শুরু হয় বচসা। প্রীতম বলেন, “এর মধ্যে ওই চালকের সঙ্গে আরও কয়েক জন যোগ দেয়। সবাই মিলে আমাকে ঘিরে ধরে মারতে থাকে।”
চোট মায়ের কনুইয়ে, ছেলের হাঁটুতে। —নিজস্ব চিত্র
কৃষ্ণাদেবী জানান, তিনি কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন। ছেলেকে মার খেতে দেখে তিনি এগিয়ে যান। তাঁর অভিযোগ, ছ-সাত জন ট্যাক্সিচালকের হাত থেকে প্রীতমকে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও মারধর করা হয়। তিনি বলেন, “শুধু মারধরই নয়। ওরা গালিগালাজও করছিল। মায়ের বয়সী এক জনের সঙ্গে কেউ এমন ভাষায় কথা বলে, জানা ছিল না।”
পুলিশ জানায়, সেই সময় নতুন রাস্তার মোড়ে ডিউটি করছিলেন এক ট্রাফিক সার্জেন্ট। প্রীতম ও কৃষ্ণাদেবীকে ট্যাক্সিচালকেরা ঘিরে ধরে মারধর করছেন দেখতে পেয়েই তিনি সেখানে চলে আসেন। রাস্তার অন্য প্রান্ত থেকে ওই পুলিশ অফিসারকে চেঁচাতে চেঁচাতে আসতে দেখে বাসস্টপের অন্য যাত্রীরাও ট্যাক্সিচালকদের তাড়া করেন। পুলিশ ও যাত্রীদের ছুটে আসতে দেখে চম্পট দেন ট্যাক্সিচালকেরা। তবে প্রেম সিংহ নামে এক ট্যাক্সিচালককে ধরে ফেলেন প্রীতম।
খবর পেয়ে চ্যাটার্জিহাট তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। প্রেম সিংহকে গ্রেফতার করা হয়। প্রীতম ও কৃষ্ণাদেবী ট্যাক্সিচালকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করতে চাইলে তাঁদের থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। হাওড়া সিটি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ট্রাফিক) অখিলেশ চর্তুবেদী বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েই মামলা দায়ের করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত মুন্না সাউয়ের খোঁজ চলছে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই নতুন রাস্তার মোড়ে ওই বেআইনি ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে জোরজুলুম চালান চালকেরা। প্রতিবাদ করলে জোটে দুর্ব্যবহার। হাওড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় এমন বেআইনি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড চলছে বলে অভিযোগ। পুলিশ এ ব্যাপারে কী করছে? অখিলেশ বলেন, “বেআইনি ট্যাক্সিস্ট্যান্ড সরানোর জন্য মাঝেমধ্যেই অভিযান চালানো হচ্ছে। শহরের কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করার জন্য পুরসভাকে চিঠি লিখেছি।”
ট্যাক্সিচালকদের দুর্ব্যবহার এবং যাত্রী প্রত্যাখ্যান নিয়ে রাশি রাশি অভিযোগ উঠে আসছে রোজ। কিন্তু পরিস্থিতি বদলের লক্ষণ নেই। হাওড়ার ঘটনার আগের রাতেই শহরের কেন্দ্রস্থলে আর একটি ট্যাক্সি-প্রত্যাখ্যানের ঘটনা নিয়ে ‘ফেসবুক’-এ কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ‘পেজ’-এ অভিযোগ করেছেন শুভজয় রায় নামে এক সাংবাদিক।
শুভজয়ের অভিযোগ, সোমবার রাতে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ও ম্যাডান স্ট্রিটের সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। গড়িয়া যাওয়ার জন্য একটি ট্যাক্সি থামান (তার আগে অনেকগুলি ট্যাক্সিই তাঁকে ‘না’ বলেছে)। প্রথমে যেতে রাজি হলেও শুভজয় সহকর্মীদের ডাকছেন দেখে চালক জানতে চান, ক’জন রয়েছেন? চার জন রয়েছেন বলতেই চালক বলেন ৪০০ টাকা দিতে হবে। তিনি কোনও মতেই ওই টাকা দেবেন না, মনস্থির করে এক সহকর্মীকে ট্যাক্সিতে উঠতে বলেন শুভজয়। ওই সহকর্মী দরজা খুলতেই চালক গাড়ি ছুটিয়ে দেন বলে অভিযোগ। শুভজয় সেই অবস্থাতেই লাফ দিয়ে সামনের বাঁ দিকের দরজা খুলে ট্যাক্সিতে ওঠেন। চালক কিন্তু গাড়ি থামাননি। ম্যাডান স্ট্রিটে ঢুকে বাঁ দিকে ঘুরে চাঁদনি চকের ভিতরে ঢোকে ট্যাক্সিটি। শুভজয়ের অভিযোগ, ট্যাক্সিচালক বলতে থাকেন, ‘যেটা বললাম শুনেছো? ৪০০ টাকা লাগবে। এটাই রাতে যাওয়ার নিয়ম।’ তত ক্ষণে ট্যাক্সির পিছনে ছুটতে শুরু করেছেন শুভজয়ের সহকর্মীরা। শুভজয় ট্র্যাফিক কন্ট্রোলে ফোন করছেন দেখে চালক ভয় পেয়ে ট্যাক্সি থামান। ট্যাক্সি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই পালিয়ে যায় সেটি।
প্রশাসন কী বলছে? পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এ দিন মহাকরণে বলেন, “ময়দান মার্কেট, শ্যামবাজার, সাতরাগাঁছি, হাওড়ার বঙ্গবাসী, শিয়ালদহ স্টেশনের মতো জায়গাগুলিতে ট্যাক্সিচালকদের প্রত্যাখ্যানের ঘটনা বেশি ঘটছে। পুলিশকে কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” মন্ত্রী জানান, সন্ধ্যার সময়েই যাত্রীদের বেশি হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। “ইউনিয়নের নেতাদের ওই সময়ে স্ট্যান্ডের একটু দূরে দাঁড়িয়ে চালককে চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।”
ইউনিয়ন কি মন্ত্রীর কথায় কর্ণপাত করবে? ক্যালকাটা ট্যাক্সিচালক অ্যাসোসিয়েশনের নেতা বিমল ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “যাত্রী প্রত্যাখ্যানের পিছনে চালকদের দিক থেকেও অনেক সঙ্গত কারণ আছে। সরকার আগে নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালন করুক! তা হলেই সমস্যা অনেকখানি মিটবে।”
যাত্রীরা এখন কী করবেন? ট্যাক্সি যেতে রাজি না হলে পুলিশে ফোন করার পাশাপাশি যাত্রীদের পরিবহণ দফতরের ৬৪৫১-৬৭১৮ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে অনুরোধ করেছেন মন্ত্রী।


পুলিশ টোল ফ্রি ১০০, ১০৭৩
পরিবহণ দফতর ৬৪৫১-৬৭১৮




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.