শূদ্রায়ণ নয়, এই সর্বগ্রাসী অন্ধকারের স্রষ্টা হল বৈশ্যায়ন। তার মূল মন্ত্র:
যে ভাবে পারো, টাকা করো। সভয় বিতৃষ্ণায় সমকালকে দেখছেন
অশোক মিত্র |
বছর পঞ্চাশেক আগের কাহিনি। তখন-সাড়া-জাগানো বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলনের সান্ধ্যানুষ্ঠানে বাংলা কবিতার হাল হকিকত নিয়ে আলোচনা। মঞ্চে উপবিষ্ট আলোচকদের মধ্যে এক টগবগে তরুণ কবি, এক জন দু’জন প্রাজ্ঞ অধ্যাপক-সমালোচক গোছের কেউ কেউ, সামনে উপবিষ্ট কয়েকশো উদ্গ্রীব শ্রোতা। প্রবীণতর এক প্রবন্ধলেখক তরুণ তুর্কিটিকে মৃদু অনুরোধ জানালেন, নবীনতর কবিদের কিছু-কিছু ছন্দ-বিন্যাস বুঝতে মাঝে মাঝে তাঁর ঈষৎ অসুবিধা হয়, যদি দয়া করে কিঞ্চিৎ ব্যাখ্যা করে বলেন। গভীর তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উদীয়মান কবিপ্রবর জানালেন— সেটা পণ্ডশ্রম হবে। তাঁরা নতুন প্রজন্মের কবিকুল পুরনো ঐতিহ্য ভেঙেচুরে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণ নতুন এক ভাবনা-কল্পনা তথা ভাষাবৃত্তে পৌঁছেছেন। পুরনো রুচি, নান্দনিকতাবোধ ও ভাষাছন্দ সংস্কার ভিত্তি করে তা বোঝা সম্ভব নয়।
সে দিনের সেই উঠতি কবিটি— এখন অবশ্য তিনি খ্যাতির সুউচ্চ শিখরে— যে উদ্ধত-সাহসী উক্তি করেছিলেন, তা হকচকিয়ে দিয়েছিল। সত্যিই কি প্রজন্মে প্রজন্মে এত তফাত, সংস্কৃতির কি আদৌ কোনও ঐতিহ্য নেই, ধারাবাহিকতা নেই, এক যুগ আগে যা ঘটে গেছে তার সঙ্গে এখন যা ঘটছে, তা সম্পূর্ণ সম্পর্কশূন্য? অথচ সেই অবিশ্বাস্যেও যেন ইদানীং আর স্থিত থাকতে পারছি না। সর্বক্ষেত্রে চার পাশে যা ঘটছে তা যেন অর্ধশতাব্দী আগে শোনা সেই দম্ভোক্তিটিকে জোরালো সমর্থন জোগাচ্ছে।
শুধু সাহিত্য বিচারের কথা-ই বলছি না। আপাতত সংবাদমাধ্যমে তথা বিবিধ আলোচনায় এ বছর বর্ষার মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নিয়ে গুঞ্জন ঘনীভূত। আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বৃষ্টিপাতের ঘাটতি গড়পড়তা হিসেবের কুড়ি শতাংশও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তার পরিণাম নিয়ে জল্পনা তো অবশ্যম্ভাবী! কয়েক বছর আগে হলেও আমরা ধরেই নিতাম প্রশাসনের দায়িত্বে যে জননায়কেরা, তাঁদের কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ পড়বে, অনাবৃষ্টির ফলে খাদ্যাভাব দেখা দেবে, এখানে-ওখানে দুর্ভিক্ষের মৃদু লক্ষণ, যথাযথ খাদ্য সরবরাহ ও খয়রাতির ব্যবস্থা না-করে উঠতে পারলে কয়েক হাজার গরিব নিরন্ন মানুষ হয়তো মারা যাবেন, দেশ জুড়ে হাহাকার। চমকে উঠলাম একটি ছোট্ট খবর পড়ে। বর্ষণের ঘাটতির পরিমাণ জেনে আমাদের জাতীয় যোজনা পরিষদের দায়িত্বে সমাসীন প্রধান রাজপুরুষ বিচলিত হয়েছেন। কিন্তু আরও কিছু লোক এ বছর অনাহারে মৃত্যুমুখে পতিত হবেন সেই গ্লানিময় ভাবনা ভেবে নয়, তিনি মুষড়ে পড়েছেন স্রেফ এই হেতু যে, খরার ফলে জাতীয় উৎপাদনের সামগ্রিক হার এ বছর উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে আসবে, বিদেশিদের কাছে লজ্জায় পড়তে হবে, বিদেশিরা ভারতে তাঁদের অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়তো ফের দু’পা পিছিয়ে যাবেন। |
নিত্যকর্মপদ্ধতি। রাহুল দেববর্মনের ছবিতে মাল্যদান করছেন মুখ্যমন্ত্রী। |
দৃষ্টিভঙ্গি বলুন, মানসিকতা বলুন, আগাপাশতলা পরিবর্তিত। পুরনো পরিচিত সংজ্ঞাগুলি হারিয়ে গেছে, দেশের লোকগুলি না-খেয়ে মরবে, সেটা এমন কিছু নয়। বিদেশিদের প্রতিক্রিয়া কী হবে তা নিয়েই যত মাথাব্যথা। আমরা জানতেও পারিনি কখন কী উপায়ে এ ধরনের মস্ত পরিবর্তন, যুগান্ত, সংসাধিত হয়েছে।
অন্য একটি উদাহরণ পেশ করছি। হঠাৎ একটি বিজ্ঞাপনে চোখ ঠেকে গেল। অমুক আসবাবপত্রটি মাত্র ৪৭,৯৯৯ টাকায় ইচ্ছুক ক্রেতার ঘরে পৌঁছে দেওয়া হবে। জানতেও পারলাম না কবে থেকে টাকা এত খোলামকুচি হয়ে গেছে। সাতচল্লিশ হাজার নশো নিরানব্বই পরিমাণ টাকার কবে থেকে এই মাত্রত্ব প্রাপ্তি ঘটল। এ যেন অনেকটা রবীন্দ্রনাথের গানের ‘আমি তখন ছিলেম মগন গহন ঘুমের ঘোরে’ ব্যাপারটির মতো, কিন্তু তিমিরনিবিড় রাতে যা উন্মোচিত হল তা কি সত্যিই আমাদের স্বপ্নস্বরূপ, এমনধারা সমাজব্যবস্থাই কি আমরা কল্পনা করে এসেছিলাম যে, দেশের তিরিশ শতাংশ মানুষ এক-পেট খিদে নিয়ে নিশি গভীর হলে নিদ্রান্বেষণ করবে, অন্য দিকে হাতেগোনা কয়েক জন সাতচল্লিশ হাজার নশো নিরানব্বই টাকায় সংগৃহীত আরামকেদারায় গা এলিয়ে দেবেন?
জাতির দিকদিগন্ত বিস্তার ছেড়ে বাঙালিবৃত্তে অবরোহণ করি। পর পর অনেক কিছু ঘটে যাচ্ছে আমাদের নিজস্ব পরিমণ্ডলে। একটি সদ্য কুঁড়িফোঁটা কিশোরী সন্ধ্যাবেলা জেলা শহরে বিদ্যায়তন থেকে বাড়ি ফিরছিল। কয়েক জন যুবক তার উপর হামলে পড়ল। স্থানীয় বিধায়ক অতীব চিত্তাকর্ষক প্রাথমিক বিবৃতি দিলেন: আজকালকার মেয়েরা ছেলেদের উত্তেজিত করবার জন্য খোলামেলা পোশাক পরেন; এই ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে, ছেলেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মেয়েটি সফল হয়েছে, উপরি হিসাবে না-হয় একটু আধটু টিটকিরি কিংবা সামান্য দৈহিক উৎপীড়নও মিলেছে, তা নিয়ে এত শোরগোল তোলা কেন!
আমাদের ঘিরে তো আপাতত এমনধারা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের রুদ্ধশ্বাস ছড়াছড়ি। শিক্ষাজগৎ থেকে তিনটি উদাহরণ: এক কলেজ-অধ্যক্ষ তাঁরই কলেজের ছাত্রদের দ্বারা প্রহৃত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। রাজ্য প্রশাসনের একেবারে শীর্ষে যিনি অধিষ্ঠান করছেন তাঁর মন্তব্য: ছোট্ট ঘটনা, বাচ্চারা করেছে, ক্ষমাঘেন্না শ্রেয়। দ্বিতীয় ঘটনা, দশম না একাদশ শ্রেণির ক্লাসে বিজ্ঞান শিক্ষক গণিতের কোনও সূত্রের একটি বিশেষ ব্যাখ্যা সবাইকে বুঝিয়ে দিলেন। তড়াক করে এক ছাত্র উঠে প্রতিবাদজ্ঞাপন করল: স্যার, আপনি আমার বাবাকে কথা দিয়েছিলেন এই ব্যাখ্যাটা শুধু আমাকেই আলাদা করে শেখাবেন। জানা গেল, শিক্ষক মহোদয় ওই ছাত্রটিকে তার বাড়িতে গিয়ে পড়ান মোটা টাকার বিনিময়ে, ছাত্রটি তাই ধারণা করতে শিখেছে স্যার তার কেনা গোলাম। সব শেষের উজ্জ্বল উদাহরণ শান্তিনিকেতনে পাঠভবনে যা ঘটেছে। একদা শান্তিনিকেতন থেকে বাঙালি সংস্কৃতিচেতনার প্রথম পাঠ গ্রহণ করত। কী আর করা!
এ বার অতি বিপজ্জনক সীমারেখার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে হয়। শাসনের কেন্দ্রবিন্দু মহাকরণে গণতন্ত্রীকরণের ঝোড়ো হাওয়া বইছে। ধুন্ধুমার কর্মকাণ্ডবিধি, যার প্রথম ধারা বলে মুখ্যমন্ত্রীকে সামান্য অস্বস্তিকর প্রশ্ন করা অগণতান্ত্রিক, রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। করেছ কি কোতল হয়েছ। অন্য একটি ধারা বলে মুড়ি ও মুড়কিকে একাসনে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি কাজের দিনে প্রয়াত কোনও যশস্বী দেশবাসীর প্রতিকৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী সহযোগী মন্ত্রী-আমলা-পুলিশের বড় কর্তা পরিবৃত হয়ে আজ ঊনবিংশ শতকীয় বাঙালি উজ্জীবনের এক মহারথীকে মালা পরাচ্ছেন, কাল মালা দিচ্ছেন গত শতকের চল্লিশের দশকের চলচ্চিত্রের খ্যাতনামা কৌতুক অভিনেতার ছবিতে, শুক্রবার সকালে মাল্যভূষিত হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর নিজের পাড়ার সদ্য প্রয়াত একদা-দাপুটে সেন্টার ফরওয়ার্ড। সবাইকে এক আসনে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, গণতন্ত্রের প্রকৃষ্টতর উদাহরণ আর কী হতে পারে!
তবে এখানে অন্তত ধারাবাহিকতাহীনতার অনুযোগ সত্যিই আনতে পারি না। সাংস্কৃতিক বিবর্তনের একটি ছোঁক-ছোঁক আভাস যেন গত দুই কুড়ি বছর ধরে প্রস্ফুটিত হচ্ছিল। কলকাতার উত্তর-পূর্ব উপকণ্ঠে একটি সরকারি ক্রীড়াপ্রাঙ্গনে যে ঐতিহ্যের সূচনা তাই-ই যেন এখন পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে। অন্য একটি তথ্যও মনে না-আনা অসাধুতা হবে। যাঁরা একই সান্ধ্যযজ্ঞে এক সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও সুকান্তকে জবাই করার সূচনা করেছিলেন তাঁরা তিন জনকেই যে সমান অপমানিত করেছিলেন, কিন্তু আদর্শে অবিচল প্রত্যয়ে অনড় যে কবিকিশোর স্রেফ পুষ্টির অভাবে মাত্র একুশ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সমাসনে বসিয়ে তাঁর স্মৃতিকে এ ভাবে অপমান ক্ষমার বাইরে। রবীন্দ্রনাথ তো বরাবরই সর্বংসহা। অনেকে তত্ত্ব জুড়বেন, যা ঘটেছে, ঘটছে তা শান্ততার সঙ্গে মেনে নিতে হয়। গোটা ভারতবর্ষ শূদ্রায়ণকে এড়াতে পারেনি, এড়ানো অসম্ভব, আমাদের রাজ্যেও অসম্ভব। যে অভুক্ত, রোগগ্রস্ত, নিরক্ষর মানুষজন, তাদেরও কিন্তু এখন একটা করে ভোট, এই গরিবগুর্বোরা এখনও অতটা সংগঠিত হয়নি যে সংবিধানে অঙ্গীকৃত অধিকারগুলি ছিনিয়ে নিতে পারে। এখনও তারা এখানে ওখানে না-খেয়ে মারা যাচ্ছে। এখনও তারা পরিব্যাপ্ত শোষণের শিকার। কিন্তু তারা মাঝে মধ্যে দপ করে জ্বলে ওঠার বিদ্যা আয়ত্ত করেছে। মাঝে মধ্যে তারা দাঙ্গা বাধায়, লুঠপাট চালায়, কারখানার ম্যানেজারকে পুড়িয়ে মারে। তারা কর্কশ, অভব্য ভাষায় কথা বলে, তাদের পছন্দ অপছন্দের মানদণ্ড যথেষ্ট প্রাকৃত। যে হেতু তাদের ভোটের মূল্য আছে, রাজনৈতিক দলগুলি তাদের তোয়াজ করতে শিখেছে। সেই তোয়াজ করার সূত্রেই রাজনীতির ভাষা তথা আচার-আচরণ বদলে গেছে, যাচ্ছে, দৈনন্দিন আচার-কলায় তার ছায়া পড়ছে। সমাজ যত বেশি শূদ্রায়ণের দিকে এগোবে সংস্কৃতির তত বেশি রূপান্তর ঘটবে। সুতরাং স্থিত ভব।
তাই কি? যদি সত্যিই শূদ্রশ্রেণি দেশ জুড়ে নিজেদের কর্তৃত্ব ক্রমশ জাহির করতে পারতেন, তা হলে যোজনা কমিশনের সর্বোচ্চ রাজপুরুষ নিজের দফতরে প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে শৌচাগার সাজাতে পারতেন না, আর সেই সঙ্গে দরিদ্রতর শ্রেণিভুক্তদের ডেকে ফরমান জারি করার সাহস পেতেন না: শোনো হে, তোমরা প্রত্যেক দিনে তিরিশ টাকা রোজগার করছ, তোমরা তো সচ্ছল, তোমাদের সস্তাদরে খাদ্যশস্য বিলানো এখন আর সম্ভব নয়। কিংবা মুম্বইয়ে শতকরা সত্তর ভাগ মানুষ যেখানে কোনও ক্রমে বস্তিতে-ঝুপড়িতে থেকে সারা জীবন কাটিয়ে দেন, সেখানে এক শিল্পপতি কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে নিজের জন্য আবাসগৃহ তৈরি করতে দ্বিধা বোধ করতেন।
মনে হয়, সংস্কৃতির যে রূপান্তর তা আসলে বৈশ্যায়নপ্রসূত। বিগত কুড়ি-বাইশ বছর ধরে বিশ্বের সঙ্গে অন্বিত হওয়ার উদগ্র উৎসাহে কর্তাব্যক্তিরা দেশবাসীদের যে মূল মন্ত্রে দীক্ষিত করার অনবচ্ছিন্ন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন তার সারাৎসার অতি সহজ টাকা করো, যে করেই হোক টাকা করো; যে করেই হোক মুনাফার বহর বাড়াও, চুরিচামারি করে হলেও ক্ষতি নেই। এখন দেশের প্রতিটি প্রান্তে, সমাজের প্রতিটি স্তরে অর্থের সাধনা। মন্ত্রীরা টাকা লুটছেন, সান্ত্রিরা টাকা লুটছেন, চিত্রতারকারা যেমন ফুলে-ফেঁপে উঠছেন, ক্রিকেট তারকারাও। মাস্টারমশাইরাও পিছিয়ে থাকবেন কেন, তাঁরা ঠেকে শিখেছেন, সকাল-বিকেল বাড়িতে ছাত্রছাত্রী পড়াচ্ছেন, অথবা পড়াবার ভান করছেন। পরীক্ষার নিয়ামক হয়তো অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষার্থীর প্রাপ্য নম্বর বাড়িয়ে দিচ্ছেন। জ্ঞানবৃক্ষ চতুর্দিকে উন্মীলিত হচ্ছে, জীবনের সাফল্য রহস্য সবাই জেনে গেছে। ছাত্ররাও জেনে গেছে, ফেলো কড়ি মাখো তেল। এ রকম সমাজব্যবস্থায় কেউই আর কাউকে শ্রদ্ধা করে না, কেউ আর কাউকে ভয় পায় না। গুন্ডাভোগ্য বসুন্ধরা! বৈশ্য সম্প্রদায়ের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের প্রকল্পে যে হেতু শূদ্রদের কখনওসখনও শামিল করেন, তাদের মর্জি-মেজাজে একটু তাল দিতেই হয়, কিন্তু রাশটা নিজেদের হাতেই রাখেন।
প্রয়াত অভিনেতা রবি ঘোষ একদা একটি নিভৃত পারিবারিক গল্প বলেছিলেন। রবির পিতৃদেব জেলা আদালতে সেরেস্তাদারের কাজ করতেন। এ ধরনের কাজে বাড়তি উপার্জনের অঢেল সুযোগ। কিন্তু ভদ্রলোকটি দৈত্যকুলে প্রহ্লাদ। কোনও দিন অসৎ উপায়ে প্রবৃত্ত হননি। বৃহৎ উদ্বাস্তু সংসার সামলাতে রবি-জননী বরাবর অকূলপাথারে হাবুডুবু খেয়েছেন। রবি কোনও ক্রমে বি কম পাশ করলে ওর অভিনয়-প্রতিভায় মুগ্ধ এক জেলা জজ সেরেস্তাদারের দফতরে ওকেও কাজ পাইয়ে দিলেন। রবি যে দিন নতুন কাজে যোগ দিল, তার অর্থাভাবে-ক্লিষ্টা জননী তাকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে মাথায় গালে আদর করে অস্ফুট স্বরে একটি হৃদয়বিদারক কথা বললেন: দ্যাখ, বাবুর মতো হইস্ না, মাঝে-মাঝে একটু নিসটিস! রবি অবশ্য সে কাজে এক মাসও টেকেনি।
গোটা জাতি গর্ববোধ করতে পারি: আমরা আস্তে-আস্তে নিস-টিস প্রক্রিয়ার ছন্দ-ব্যাকরণ চমৎকার রপ্ত করার দিকে এগোচ্ছি, অন্য লক্ষণগুলি যা চোখে পড়ছে তারা উপসর্গমাত্র। |