অসম হিংসার ব্যাপারে উস্কানিমূলক লেখা বা ‘পেজ’ বন্ধ করতে রাজি না হওয়ায় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট টুইটার-এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার হুমকি দিল কেন্দ্র। টেলিযোগাযোগ সচিব আর চন্দ্রশেখর আজ এক টেলিভিশন চ্যানেলে জানান, টুইটার সহযোগিতা করছে না। এবং সহযোগিতা না পেলে সরকার এ ধরনের ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে। আজ এ ধরনের ৬৫টি পেজ বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। কিছু পেজ ঠিক কোথা থেকে আপলোড করা হয়েছে, তা জানতে আমেরিকা এবং সৌদি আরবের সাহায্যও চাওয়া হয়েছে।
টুইটার, ফেসবুক এবং গুগল-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে উস্কানিমূলক লেখার জেরে অসমে হিংসা ছড়িয়েছে, দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আতঙ্কে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন উত্তর-পূর্বের বাসিন্দারা। এর অধিকাংশ পেজ বা ভিডিও পাকিস্তান থেকে ‘আপলোড’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। তাতে পাকিস্তানের দু’টি রাজনৈতিক দল জামাত-ই-ইসলামি ও ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং একটি পাক টিভি চ্যানেলের নাম রয়েছে। কিছু পেজ সৌদি থেকেও আপলোড করা হয়েছে।
টুইটারে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের (পিএমও) একটি অ্যাকাউন্ট আছে। ঠিক একই রকম আরও ছ’টি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাতেও উস্কানিমূলক লেখা রয়েছে। পিএমও-র আশঙ্কা, ওই অ্যাকাউন্টগুলিকে পিএমও-র অ্যাকাউন্ট বলে ভাবতে পারেন ব্যবহারকারীরা। বড় সমস্যার আশঙ্কায় ওই ছ’টি অ্যাকাউন্টও বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
ঠিক কোন কম্পিউটার থেকে বিতর্কিত পেজ আপলোড করা হয়েছে, তা বিস্তারিত জানতে পেজ-এর ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস (আইপি) প্রয়োজন। তাই এগুলোর আইপি অ্যাড্রেস জানানোর জন্য আমেরিকা এবং সৌদি আরবে আইনি চিঠি (লেটারস রোগেটরি) পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে পাওয়া তথ্য আদালতে গ্রাহ্য। তাই এ সব তথ্য পাওয়ার পরে পাকিস্তানকে দেওয়া হবে। পাক সাইটের উস্কানিমূলক প্রচার বন্ধ করতে ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদকে বলেছে নয়াদিল্লি। আবার উস্কানিমূলক এসএমএস এবং এমএমএস পাঠানোর অভিযোগে কেরলের ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া’কে সন্দেহ করছেন গোয়েন্দারা।
ইতিমধ্যে ছয় সদস্যের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল ধুবুরির ২০টি ত্রাণ শিবির ঘুরে দেখেছে। নেতৃত্বে ছিলেন বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সচিব আর কে শ্রীবাস্তব। আজ, প্রতিনিধিদলটি প্রথমে বাঙালিপাড়ার মাছপাড়া শিবিরে যায়। সঙ্গে ছিলেন ধুবুরির জেলাশাসক কুমুদচন্দ্র কলিতা এবং এসএসপি প্রদীপচন্দ্র শালৈ। কাল তাঁরা চিরাং, বাক্সা ও কোকরাঝাড় যাবেন। নিরাপত্তার কথা ভেবে চিরাং জেলায় মোটরবাইকের পিছনে যাত্রী নেওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। রাজ্যের হিসেবে, এখনও ২২৪টি শিবিরে ২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৭৭ জন শরণার্থী রয়েছেন। সাতটি শিবিরে গিয়ে রিপোর্ট জমা দিয়েছেন যোজনা কমিশনের সদস্য সইদা হুসেন এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনের সদস্য কে এন দারুওয়ালা। মানবাধিকার সংগঠনগুলির অভিযোগ, রিপোর্টটি পক্ষপাতদুষ্ট। এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইট্সএর অধিকর্তা সুহাস চাকমা বলেন, “একপেশে রিপোর্ট প্রকাশ হলে একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অন্য গোষ্ঠীকে উস্কানি দেওয়া হয়।” পুনে ও বেঙ্গালুরু থেকে আতঙ্কে মণিপুরী ছাত্রছাত্রীরা এখনও ফিরে আসছেন। আজ, বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রী এবং নানা সংস্থার কর্মী মিলিয়ে ১২৯ জন মণিপুরি মাও গেট দিয়ে মণিপুরে ঢোকেন। ভয় কাটাতে কর্নাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর অশোক শীঘ্রই নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে যাবেন। তবে উত্তর-পূর্ব থেকে বেশ কিছু লোক আবার বেঙ্গালুরুতে ফিরতেও শুরু করেছেন।
|