ধৃত আলফা কম্যান্ডার হীরা শরণিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মিলল একে ৫৬ রাইফেল। হীরার গ্রেফতারের ঘটনা নিয়ে পরেশপন্থী আলফা আলোচনাপন্থীদের দিকে তোপ দাগলেও, আজ আলফা সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া জানান, শান্তি আলোচনায় এই ঘটনার কোনও প্রভাব পড়বে না।
প্রায় ২২ বছর ধরে অসমে নাশকতা, হত্যা, তোলাবাজি, অপহরণ চালাবার পরে গত কাল পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন আলফার সাবেক ৭০৯ নম্বর ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডার হীরা শরণিয়া। গুয়াহাটির এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি ও হত্যা এবং অন্য এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও হত্যা করার দায়ে নলবাড়ির হেলেসা থেকে পুলিশ হীরাকে ধরে। শান্তিপন্থী আলফার সঙ্গেই ছিল হীরা। কিন্তু দলের নেতারা শান্তি আলোচনা শুরু করলেও, হীরা শান্ত হয়ে মোটেই বসে ছিলেন না বলে পুলিশের দাবি। বরং তাঁর তোলাবাজি, ডাকাতি বেড়েই চলেছিল।
রাজ্য গোয়েন্দাদের দাবি, রাজখোয়ারা শান্তি আলোচনা শুরু করলেও এখনও তাঁদের হাতে থাকা অস্ত্র জমা দেননি। সেই অস্ত্রের একটি অংশ বিভিন্ন অপরাধ মূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারই প্রমাণ মিলল আজ। হীরার নলবাড়ির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি একে ৫৬ রাইফেল, ৩০ রাউন্ড গুলি, ১২ লক্ষ টাকা মিলল। |
হীরার দলের হাতে নিহত ব্যবসায়ী বিনীত জৈনের দেহ খুঁজতে ব্রহ্মপুত্রে তল্লাশি শুরু। ছবি: উজ্জ্বল দেব। |
কত অস্ত্র রয়েছে আলোচনাপন্থীদের হাতে? পুলিশ বা গোয়েন্দাদের কাছে তার কোনও সঠিক তথ্য নেই। তবে পরেশপন্থী আলফার দেওয়া আজকের হিসেব অনুযায়ী, প্রথমবার জিতেন দত্ত, প্রবাল নেওগরা দলত্যাগের সময় ৮০টি একে সিরিজের রাইফেল, ৫টি ইউনিভার্সাল মেশিনগান, ৩টি স্নাইপার রাইফেল, ২০টি শেল, ৩টি রকেট প্রপেলার গান (আরপিজি-৭), ২০টি বিভিন্ন ধরণের পিস্তল, ১০০টি গ্রেনেড, নানা বোরের ৫০০০ গুলি ও ৩০ কিলোগ্রাম বিস্ফোরক নিয়ে যায়। আলোচনার দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হওয়ার সময় আলফার অস্ত্রভাণ্ডার থেকে হীরারা ১১২টি একে সিরিজের রাইফেল, ২৫টি শেল, ৫টি আরপিজি-৭, ৫টি স্নাইপার রাইফেল, ২৪টি পিস্তল, ১২৭টি গ্রেনেড, ৮০০০ রাউন্ড গুলি ও ৫০ কিলো উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক নিয়ে যায়। পরেশ বরুয়ার দাবি, “এই লুন্ঠন আমাদের দুর্বল করতে পারবে না। কারণ অসমবাসীর স্বাধীনতা চেতনাই আমাদের প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু ভারত সরকারের হাতে লোক দেখানো সামান্য অস্ত্র সমর্পণ করে বাকি অস্ত্র নিয়ে আলোচনাপন্থীরা কী করছেন তা ভারত সরকার খোঁজ করে দেখুক।”
পরেশপন্থীদের আরও অভিযোগ, হীরাদের হাতে অস্ত্র থাকার কথা জেনেও রাজ্য পুলিশ চুপ করে রয়েছে। ওই অস্ত্র সংগ্রামপন্থীদের হত্যার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ভাবেই হীরার নেতৃত্বে সার্জেন্ট মেজর গণ শরণিয়া, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট শশাঙ্ক বরুয়া, দেবজিৎ গগৈদের হত্যা করা হয়েছে। ‘আলোচনাপন্থী’-র ছদ্মবেশে এই ধরণের অপরাধমূলক কাজে যুক্ত আলফা নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য অসম পুলিশের দুই শীর্ষকর্তার নিন্দাও করেছে পরেশপন্থীরা।
তবে রাজখোয়া মনে করছেন, হীরার ধরা পড়া বা দলের কোনও নেতার অপরাধমূলক কাজে অভিযুক্ত হওয়া নিতান্তই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সমগ্র শান্তি প্রক্রিয়ায় এর কোনও প্রভাব পড়বে না।
আজ আলোচনাপন্থী আলফার প্রচারসচিব মিথিঙ্গা দইমারি বলেন, “আলফা ও ভারত সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রে মেজর হীরা শরণিয়ার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ এখনও প্রমাণিত নয়। আলফার তরফেও হীরার বিরুদ্ধে দলীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই হীরার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।” |