সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রেও সংরক্ষণ ব্যবস্থা কায়েম রাখতে শেষ পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাবে রাজি হল কেন্দ্র। যদিও এর জন্য কোনও সময়সীমা স্থির হয়নি। কিন্তু ‘বিতর্কিত’ এই বিষয়টি নিয়ে আজ সর্বদল বৈঠকের পর কর্মিবর্গ দফতরের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামী জানান, সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে তফসিলি জাতি ও উপজাতির সংরক্ষণের ব্যাপারে কেন্দ্র সম্মত।
উত্তরপ্রদেশের কিছু সরকারি কর্মীর পদোন্নতির ক্ষেত্রে মায়াবতী সরকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা প্রয়োগ করার পর থেকেই বিতর্কের শুরু। সুপ্রিম কোর্ট মায়াবতী সরকারের সেই পদক্ষেপ খারিজ করে দেয়। আদালতের বক্তব্য, সরকারি চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ দিতে গেলে রাজ্যকে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান দিয়ে দেখাতে হবে যে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তফসিলি জাতি বা উপজাতির যথাযথ প্রতিনিধিত্ব নেই। সংরক্ষণের আওতায় যাঁদের পদোন্নতি হবে, তাঁরা যে প্রকৃত অনগ্রসর, তা-ও দেখাতে হবে। সমস্যা তৈরি হয়েছে সেখানেই। আর সে কারণেই সংবিধান সংশোধনের দাবি তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলি।
সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে আজ সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাসভবনে সর্বদল বৈঠক হয়। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তফসিলি জাতি-উপজাতি সহ অনগ্রসর শ্রেণির সংরক্ষণের জন্য এর আগেও চার বার সংবিধান সংশোধন হয়েছে। সরকার এ ব্যাপারে খোলা মন নিয়ে চলছে।”
স্বাভাবিক ভাবেই সংবিধান সংশোধনের জন্য সব থেকে সরব ছিল বহুজন সমাজ পার্টি। বৈঠকে উপস্থিত বসপা নেত্রী মায়াবতী বলেন, চলতি অধিবেশনেই সংশোধন প্রস্তাব আনা হোক। সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। লোকসভায় তৃণমূল নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আদালতের মাধ্যমে তফসিলিদের সংরক্ষণের সুযোগ কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করতে হবে বলে মনে করে তৃণমূল।” বস্তুত কমবেশি সব রাজনৈতিক দলই সংবিধান সংশোধনের পক্ষে রায় দিয়েছে।
তবে অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণিকে নিয়ে রাজনীতি করে যে সব রাজনৈতিক দল তাদের এতে আপত্তি রয়েছে। বিশেষ করে আপত্তি রয়েছে সমাজবাদী পার্টির। সপা নেতা মুলায়ম সিংহের বক্তব্য, এই ব্যবস্থা চালু হলে সরকারি চাকরিতে অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) কর্মীরা পিছিয়ে পড়বে। বিজেপি আবার কোনও পক্ষ না নিয়ে কৌশলগত দূরত্ব রাখতে চেয়েছে। লোকসভার বিরোধী দলনেতা সুষমা স্বরাজের কথায়, সরকার যে সংবিধান সংশোধন প্রস্তাব আনলে সেটাও সর্বোচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
তবে রাজনৈতিক ভাবে সপা-র আপত্তির বিষয়টি কংগ্রেসের কাছে উদ্বেগজনক। কেন না সংসদের ভিতরে বাইরে এখন সপা-র সমর্থন কংগ্রেসের খুবই জরুরি। আর সে কথা বিবেচনা করেই সরকার আজ সংবিধান সংশোধনের কোনও সুনির্দিষ্ট সময়সীমার কথা বলেনি বলে মনে করা হচ্ছে।
|