জমি-জটের ঘেরাটোপ থেকে এ বার পুজোতেও মুক্তি পেল না কুমোরটুলি। পুরসভা বলছে, কেএমডিএ জমির মালিকানার নথি দাখিল না-করলে প্রস্তাবিত প্রকল্পের নকশা মঞ্জুর হবে না। কেএমডিএ বলছে, এই নথি তৈরির দায়িত্ব ভূমি দফতরের। ভূমি দফতর হাবুডুবু খাচ্ছে কুমোরটুলির জমির আইনি অধিকার নিয়ে। সব মিলিয়ে কুমোরটুলি উন্নয়ন প্রকল্প বিশ বাঁও জলে।
আর মাস দেড়েক বাদেই প্রতিমা যেতে শুরু করবে মণ্ডপে মণ্ডপে। বৃষ্টিতে তাই শিল্পীদের মুখ ভার। নিকাশির পথ রুদ্ধ। অপরিসর রাস্তায় কোথাও কোথাও কাদা। কুমোরটুলির এই বেহাল অবস্থার মধ্যেই পুরোদমে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। আসছেন খদ্দেররাও।
ঘনবসতিপূর্ণ কুমোরটুলির উন্নয়নের জন্য ২০০৮-এর সেপ্টেম্বরে একটি প্রকল্প তৈরি হয়। জেএনএনইউআরএম-এর এই প্রকল্পের জন্য ২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ২০০৯-এর জানুয়ারিতে এর শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু নির্মাণ চলাকালীনই শিল্পীদের সাময়িক থাকার জায়গা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। রবীন্দ্র সরণিতে জনস্বাস্থ্য ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের পরিত্যক্ত একটি গুদাম সরকারি খরচে সংস্কার করে পুরনো কুমোরটুলি থেকে ২৫ জন শিল্পীকে সেখানে সরানো হয়। ঠিক হয়, প্রথম পর্যায়ে ওই গুদামের দু’টি ব্লকে চারতলা বাড়ি হবে। ২০১০-এ সেই বাড়ির ভিত খোঁড়া হয়। |
প্রতি বারের মতো এই বর্ষাতেও এমনই হাল কুমোরটুলির। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
ইতিমধ্যে জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ ওঠে, প্রকল্প রূপায়ণের ব্যাপারে সিপিএম-এর কয়েক জন নেতা দাদাগিরি করছেন। প্রকল্পের বিরোধিতা করে ২০১০-এর মে মাসে প্রতিবাদ-মঞ্চ হয়। ২০১১-র মে মাসে মহাকরণে পালাবদল হয়। সে বছরই ১৮ জুন তৃণমূল নেতৃত্বের আশ্বাসে শিল্পী-বাসিন্দারা ওই মঞ্চ সরান। ‘কুমোরটুলি পল্লি উন্নয়ন ও অধিকার রক্ষা কমিটির’ অন্যতম কর্তা অপূর্ব পাল বলেন, “এর পরে প্রকল্পের নকশা বদলায়। কেএমডিএ-র দফতরে পুর-প্রতিনিধিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করি। কিন্তু দেখা যায়, আবাসিকেরা প্রকল্পে আস্থা হারিয়েছেন।”
সম্প্রতি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সরু রাস্তার ধারে বর্জ্যের স্তূপ। প্রতিমা তৈরির জন্য কিছু দোকানের বাইরে খানিকটা অংশ আটকানো। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে প্লাস্টিকের চাদর দেওয়া। নর্দমা আটকে যাওয়ায় জমে থাকছে বৃষ্টির জল। ম্যালেরিয়ার প্রকোপ নিয়েও শঙ্কিত অনেকে। বছর দুই আগে বেশ কয়েক জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হন। শিল্পীরা অবশ্য জানান, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর মিতালি সাহা এবং পার্থ মিত্র এ ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছেন।
কেন্দ্র অনুমোদিত কুমোরটুলি উন্নয়ন প্রকল্প কি আদৌ হবে? কেএমডিএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার অনুপ ঘোষ বলেন, “পরিবর্তিত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়ি তৈরির নকশা পুরসভায় জমা দিয়েছি। তা চূড়ান্ত হয়নি।” কারণ? পুর-কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা, “জমির মালিকানা কেএমডিএ-র হাতে না এলে নকশা মঞ্জুর করা সম্ভব নয়। কেএমডিএ-কে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” মাসখানেক আগে মহাকরণের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, জমির মালিকানা হস্তান্তরের কাজটি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর দ্রুত করার চেষ্টা করবে। এর পরে মালিকানা নিয়ে ফের জটিলতা দেখা দেয়। কেএমডিএ-র সিইও বিবেক ভরদ্বাজ বলেন, “ভূমি দফতরকে বলেছি জট কাটিয়ে জমির নথি কী ভাবে দাখিল করা যায়, তা দেখতে।” পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “গায়ের জোরে তো শিল্পীদের তুলে প্রকল্প করা যাবে না। স্থানীয় আবাসিকদের ঐকমত্য দরকার।”
সব মিলিয়ে কুমোরটুলি রয়ে গিয়েছে পাঁচ বছর আগের কুমোরটুলিতেই। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে এই জট বেড়েছে বই কমেনি। |