অটো চলাচলের উপরে এ বার নিয়ন্ত্রণ চাইছে আসানসোলও। প্রশাসন থেকে সাধারণ শহরবাসী এমনকী পরিবহণ শ্রমিক সংগঠনগুলি চাইছেন, শুধু কলকাতাতেই নয় অটো চলাচল নিয়ন্ত্রিত হোক আসানসোলেও। ইতিমধ্যেই সিটু ও আইএনটিটিইউসি তাদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অটো চালকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছে বলে জানিয়েছে। প্রশাসনিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহকুমাশাসক।
সম্প্রতি কলকাতার বরাহনগরে চলন্ত অটো থেকে পড়ে গুরুতর জখম হয় চার বছরের অদ্রিকা। অভিযোগ, চলন্ত অটো তাকে ছেঁচড়ে টেনে নিয়ে গিয়েছে প্রায় ৩০ মিটার রাস্তা। তার মা চিৎকার করে অটো থামাতে বলছেন। কিন্তু অটো থামাননি চালক। এর পরেই অটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে সরব হয় কলকাতা। সাম্প্রতিক কালে আসানসোলে এই ধরনের ঘটনা না ঘটলেও শহরবাসীর আশঙ্কা, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যে ভাবে অটো চলাচল করছে, তাতে যে কোনও সময় বরাহনগরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। |
আসানসোল শহর-সহ আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন কয়েক হাজার অটো চলাচল করে। সিএনজি ছাড়াও ডিজেল ও কেরোসিন চালিত অটো চলে মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে। অভিযোগ, নির্দিষ্ট আসন সংখ্যার চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহণ করে অটোগুলি। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী ওঠানামা করায়। যাত্রী তোলার জন্য নিজেদের মধ্যে রেষারেষিও করে। সাধারণ যাত্রীরা এ সবের প্রতিবাদও করলেও কোনও লাভ হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “তিন চাকার ওই গাড়িগুলিকে এমনিতেই নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তার উপরে ক্ষমতার বেশি যাত্রী চাপিয়ে অত্যন্ত খারাপ রাস্তা দিয়ে অটোগুলি যাতায়াত করে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।” অপর এক বাসিন্দা মৌসুমী দত্তের অভিযোগ, “অটো চালকদের বেশি কিছু বলাও যায় না। বেনিয়মের প্রতিবাদ করলেই তাঁরা অটো থেকে নামিয়ে দেন।”
অটো চালকদের বিরুদ্ধে ওঠা বেনিয়মের অভিযোগ মানতে চাননি আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত অটো চালক ইউনিয়নের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়া। তাঁর দাবি, “এই অভিযোগ ঠিক নয়। তবে আমরাও চাই অটো চালকেরা যাত্রীদের কথা ভেবে সরকার নির্দেশিত নিয়ম পালন করুন।” রাজুবাবুর পাল্টা অভিযোগ, প্রশাসনিক শিথিলতার কারণে ভিন্ রাজ্য ও জেলার বেশ কিছু অটোচালক আসানসোল-সহ আশেপাশের এলাকায় প্রতিদিন ঢুকছেন ও নিয়মের তোয়াক্কা না করে গাড়ি চালাচ্ছেন। বদনাম হচ্ছেন আসানসোলের অটো চালকেরা।” তাঁর দাবি, “প্রশাসন উদ্যোগী হয়ে ভিন্ রাজ্য ও জেলার অটো আসানসোলে ঢোকা বন্ধ করুক।” তিনি জানান, তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অটো চালকদের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করে প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা, অটোর নম্বর স্থানীয় প্রশাসন ও ইউনিয়ন অফিসে জমা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ইউনিয়ন থেকে দেওয়া ছবি-সহ পরিচয়পত্র বুকে ঝুলিয়ে অটো চালাবেন তাঁরা।
নিয়মনীতি মেনে অটো চালানোর নির্দেশ দিয়েছে সিটুও। সংগঠনের অটোচালক ইউনিয়নের সম্পাদক সত্যপ্রকাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চালকেরা যাতে সরকার সরকার নির্দেশিত নিয়ম মেনে অটো চালান, সে ব্যাপারে আমরা সব রকমের সহযোগিতা করব।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, “অটো পরিবহণের পরিকাঠামোগত উন্নয়ন সরকারকে করে দিতে হবে।” আসানসোলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার ভুঁইয়া বলেন, “সরকারের নির্দিষ্ট নিয়মাবলী হাতে এলেই আমরা কঠোরভাবে সেগুলি কার্যকরী করব।” তিনি আরও জানান, কলকাতার ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে এখানে না ঘটে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন তিনি। |