হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক যুবককে নিয়ে দিনহাটায় শুরু হয়েছে ‘রাজনৈতিক চাপানউতোর’। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই যুবকের নাম কানাই বর্মন। তাঁর বাড়ি সিতাইয়ের বাজিচাতরা এলাকায়। গত রবিবার রাতে বাড়ির লোকজন ওই যুবককে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করান। ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি, জখম যুবক তাদের দলের সমর্থক। শনিবার দিনহাটার সিতাইয়ের চামটা আদর্শ হাইস্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লক ও তৃণমূল কংগ্রসের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে কানাইবাবুর কোমরে গুলি লাগে। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, বাড়িতে নজরবন্দি করে রাখার পর পুলিশের কাছে কানাইবাবুকে তৃণমূল কর্মী পরিচয় দিয়ে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়। তিনি গুলিতে জখম হয়েছেন বলে জানানোর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিনহাটা থানার পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তার পরেই পুলিশ গিয়ে জখম ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে। আর জেলা পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “তৃণমূলের এক নেতার গোলমালের সময় গুলি চালানোতেই তিনি জখম হন বলে এ দিন পুলিশের কাছে কানাইবাবু জবানবন্দি দিয়েছেন। আমরা ওই অভিযোগকে এফআইআর হিসাবে ধরে মামলা রুজুর দাবি জানিয়েছি।” |
উদয়নবাবুর অভিযোগ, “কানাইবাবু আমাদের সমর্থক। তাঁকে নিজেদের কর্মী বলে তৃণমূল প্রচার করতে চেয়েছিল। এরজন্য শনিবার ঘটনার পর থেকে ওঁকে বিনা চিকিৎসায় নজরবন্দি করে রাখা হয়। রবিবার রাতে ওঁর বাড়ির লোকজন কোনওমতে হাসপাতালে ভর্তি করান। পুরো বিষয়টি জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে মৌখিক জানানো হয়েছে। লিখিত অভিযোগ করা হচ্ছে।” হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে জখম কানাইবাবু বলেন, “আমি ফরওয়ার্ড ব্লক সমর্থক। শনিবার স্কুল ভোটে আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া দেখতে গিয়েছিলাম। গোলমালের মধ্যে পড়ে যাই। সেই সময় এলাকার এক তৃণমূল নেতা আমাকে লক্ষ্য করে রিভলবার থেকে গুলি চালান। কোমরে ওই গুলি লাগতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ি।” জখমের অভিযোগ, “ওই নেতার লোকেরাই তৃণমূল কর্মী বলে পরিচয় দিয়ে পুলিশে অভিযোগ করার জন্য চাপ দেন। রাজি না হওয়ায় বাড়িতে বিনা চিকিৎসায় নজরবন্দি করা রাখা হয়। পুলিশকে ওই নেতার বলেছি।”তৃণমূল কংগ্রেস ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সাজানো অভিযোগ তুলে ফরওয়ার্ড ব্লক নাটক শুরু করেছে। ওই ব্যাক্তি গুলিতে জখম হয়েছেন কি না তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের এত বহিরাগত সশস্ত্র লোক ওই দিন জমায়েত হয়েছিলেন যে নিজেদের লোককে চিনতে না পেরে গুলি করেছে, এমন সম্ভবনা একশো ভাগ। ঘটনার তদন্ত হলেই সব স্পষ্ট হবে।” আর দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক সৌমজিৎ রায় বলেন, “এক্সরে রিপোর্ট, ফরেনসিক ছাড়া ক্ষত গুলির আঘাতে হয়েছে বলা যাবে না। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” ভারপ্রাপ্ত সুপার উজ্জ্বল আচার্য বলেন, “ক্ষত নিয়ে ভর্তি হওয়া ওই ব্যক্তির চিকিৎসার ত্রুটি হচ্ছে না।” |