দুর্নীতির অভিযোগ, নার্সিংহোমের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করল বিমা সংস্থা
রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনা প্রকল্পের উপভোক্তাদের চিকিৎসার নামে লক্ষ লক্ষ টাকার ভুয়ো বিল পাঠিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ উঠছিল পুড়শুড়ার একটি নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থা তদন্ত করে নার্সিংহোমটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। জেলা প্রশাসনে নার্সিংহোমটির লাইসেন্স বাতিলের সুপারিশও করেছে ওই সংস্থা। অতিরিক্ত জেলাশাসক আর অ্যালিয়াস ভেজ বলেন, “দুর্নীতি বা কারচুপি ধরা পড়লে বিমা সংস্থা চুক্তি বাতিল করতেই পারে। নার্সিংহোমটির বিষয়ে ওদের থেকে লিখিত রিপোর্ট চেয়েছি। রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনা প্রকল্প চালু হয় ২০০৯-১০ সালে। একটি পরিবারের জন্য মোট বিমাকৃত অঙ্ক ৩০ হাজার টাকা। নির্দিষ্ট চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি হয়ে ওই সমস্ত পরিবার চিকিৎসার সুবিধা নিতে পারেন। হুগলির ১৮টি ব্লকে এই ধরনের চিকিৎসাকেন্দ্রের সংখ্যা ২৭টি। তার মধ্যে পুড়শুড়ার নার্সিংহোমটিও রয়েছে।
বেশ কিছু দিন ধরেই পুড়শুড়া ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েত এলাকা (ভাঙামোড়া, কেলেপাড়া, ডিহিবাতপুর, পুড়শুড়া ১ ও ২, শ্রীরামপুর, চিলাডাঙ্গি এবং শ্যামপুর) থেকে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এবং বিডিও অফিসে নার্সিংহোমটির বিরুদ্ধে যথাযথ পরিষেবা না দেওয়া, উপভোক্তাদের থেকে থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আসছিল। কয়েক দিন আগে বাদশা আলি মোল্লা নামে ভাঙামোড়া পঞ্চায়েতের বৈকুন্ঠপুর গ্রামের এক যুবক রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার হুগলি জেলা কো-অর্ডিনেটর সৌমেন সিংহরায়কে বিষয়টি জানান। সৌমেনবাবু বলেন, “গত তিন মাস এই কাজের দায়িত্ব নিয়েছে আমাদের সংস্থা। খাতাপত্রে দেখি নার্সিংহোমটি প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা বিল করছে। জেলার আর কোথাও থেকে এত বিল আসে না। একটি প্রত্যন্ত গ্রামের নার্সিংহোমে অত অস্ত্রোপচার হচ্ছে কী করে, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে। তারই ভিত্তিতে মঙ্গলবার সরেজমিনে তদন্তে যাই।”
তদন্তে কী দেখা গেল?
ওই বিমা কোম্পানি সূত্রে জানানো হয়েছে, জ্বর-সর্দি নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, এমন রোগীর অ্যাপেন্ডিক্স অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে রিপোর্টে লেখা হয়েছে। মেয়ে জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন, মায়ের নামে অর্শ অস্ত্রোপচারের রিপোর্ট লেখা হয়েছে। বৈকুন্ঠপুরের একটি পাড়া থেকেই ৪ জনের ক্ষেত্রে এমন ‘উলটপুরাণ’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। উদাহরণ হিসেবে সৌমেনবাবুরা জানান পঁয়তাল্লিশ বছরের সাকিলা বেগম (কার্ড নম্বর ০০১৩২৬৮১১৯১৮১২০০৭) উচ্চ রক্তচাপ এবং পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হন। ওই মহিলার অ্যাপেন্ডিক্স অপারেশন করা হয়েছে বলে বিল যায় ৬ হাজার টাকার। অথচ তাঁর অস্ত্রোপচারই হয়নি। বছর আটচল্লিশের খাদেজা বেগমের (কার্ড নম্বর ০০৫৯৩৬৯২১৯১৮১২০০২) জ্বরের চিকিৎসা হয়। অথচ তাঁর জরায়ুর অপারেশন হয়েছে বলে লিখে রিপোর্টে ১০ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে। পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হওয়া যুবক শেখ হিম্মত আলির গলব্লাডার অপারেশন দেখিয়ে ১০ হাজার টাকা বিল করা হয়েছে। টাইফয়েড নিয়ে ভর্তি হয়েছিল এক কিশোরী। তাঁর মায়ের নামে কিশোরীর অর্শ অস্ত্রোপচার দেখিয়ে ৭ হাজার টাকা বিল করা হয়।
সৌমেনবাবু বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যে চিকিৎসার রিপোর্ট দিয়ে বাড়তি টাকার বিল পাঠানো হয়েছে আমাদের কাছে।” পাশাপাশি, জরুরি ওষুধ কেনার কথা বলে ১-৩ হাজার টাকা পর্যন্ত রোগীর বাড়ির লোকের কাছ থেকে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আদায় করেছেন বলেও অভিযোগ।
গোটা বিষয়টি নিয়ে নার্সিংহোমের মালিক তথা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক প্রশান্ত রায়ের প্রতিক্রিয়া, “পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। আমার কোনও বক্তব্য নেই।” পুড়শুড়ার বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “বিষয়টি রাজ্যস্তরে জানিয়েছি। দুর্নীতির প্রতিবিধান চেয়েছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.