স্কুলস্বাস্থ্যে খরচ হয়নি পুরো টাকা, ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় সরকার
রুটিন টিকাকরণ, পালস পোলিওর পর এ বার স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম। কেন্দ্রের দেওয়া টাকা পুরোটা খরচ করতে না-পারায় আবার কাঠগড়ায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কেন্দ্র যথেষ্ট টাকা না-দেওয়ায় বিভিন্ন প্রকল্প দেরি হচ্ছে বলে রাজ্যের মন্ত্রীদের অভিযোগ রয়েছে। ঠিক সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই প্রশ্ন উঠছে, টাকা ঠিকমতো দিলেও তার সদ্ব্যবহার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কতটা করতে পারবে?
স্কুলস্বাস্থ্য কার্যক্রমে গত আর্থিক বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়েছিল কেন্দ্র। নতুন আর্থিক বছরের জন্য নতুন করে টাকা চাওয়ার সময় দেখা গিয়েছে, এর প্রায় ৩০ লক্ষ টাকাই খরচ করতে পারেনি রাজ্য। অনেক জেলা অগ্রিম হিসাবে কয়েক লক্ষ টাকা নিয়েছিল। সেই টাকাও কী ভাবে খরচ হয়েছে বা আদৌ খরচ হয়েছে কি না, তার ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এ বছর রাজ্যকে স্কুলস্বাস্থ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু টাকা খরচের এই ‘নমুনা’য় ক্ষুব্ধ কেন্দ্র জানিয়েছে, যে টাকা গত বার খরচ হয়নি সেটা এ বারের বরাদ্দ থেকে কেটে নেওয়া হবে। জুলাইয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দফতরের কর্তাদের দিল্লিতে ডেকে ভর্ৎসনাও করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
স্কুলস্বাস্থ্য কার্যক্রমে সরকারি স্কুলে নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের চোখ, দাঁত, নখ পরীক্ষা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখা, রক্তাল্পতা দূর করা, বয়ঃসন্ধির নানা রকম মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সমাধান করার কথা। গুরুতর সমস্যা হলে রেফার করা হবে হাসপাতালে। শিক্ষকদেরও এই কার্যক্রমে আলাদা প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা, যাতে প্রাথমিক ভাবে তাঁরা ছাত্রদের শারীরিক সমস্যা চোখে দেখে আন্দাজ বা চিহ্নিত করতে পারেন ও চিকিৎসকের কাছে পাঠাতে পারেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণের শীর্ষকর্তারা জানিয়েছেন, এই কার্যক্রমে এক জন প্রোগ্রাম অফিসার থাকলেও এত দিন কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
স্কুলস্বাস্থ্যে টাকা খরচের হাল
মালদহ ৩ লক্ষ ৩ লক্ষ
মুর্শিদাবাদ ২ লক্ষ ৯৫ হাজার
দক্ষিণ ২৪ পরগনা ৪ লক্ষ ৩৪ হাজার
বর্ধমান ৬ লক্ষ ৩ লক্ষ
বাঁকুড়া ৪ লক্ষ ৪ লক্ষ
পশ্চিম মেদিনীপুর ৬ লক্ষ ১ লক্ষ
তথ্যসূত্র রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর
গত এক বছরে কত ছাত্রের দাঁত পরীক্ষা হয়েছে, কত জন চশমা পেয়েছে, কত জনকে হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে, তা বলতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছেন কর্তারা। তা-ও নিজেদের দোষ ঢাকতে উল্টে কোন্দ্রকে দোষারোপ করতে চাইছেন। রাজ্যের পরিবার কল্যাণ অফিসার জ্যোতির্ময় চাকী যেমন বলেছেন, “দিল্লি নিজেও এত দিন স্কুল স্বাস্থ্য কার্যক্রম নিয়ে কোনও আগ্রহ দেখায়নি। হঠাৎ তাদের টনক নড়েছে। কাজের গতি আর টাকাপয়সার খোঁজ নেওয়ার তাগিদও বেড়েছে।”
মূলত দিল্লির তাগাদাতেই এ বার রাতারাতি স্কুলস্বাস্থ্য কার্যক্রমের খোলনলচে বদলে ফেলছে রাজ্য। স্কুলস্বাস্থ্যের নতুন প্রোগ্রাম অফিসার পল্লব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যপরীক্ষায় এত দিনে ব্লক স্তরে তৈরি হচ্ছে আলাদা দল। প্রত্যেক দলে এক জন চিকিৎসক ও এক জন ফার্মাসিস্ট থাকবেন। ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া হচ্ছে হেলথ কার্ড, যা দেখিয়ে সব সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার ক্ষেত্রে তারা অগ্রাধিকার পাবে। রাতবিরেতে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলেও তাদের আগে শয্যা দেওয়া হবে। প্রতিটি ব্লকে স্বাস্থ্য দফতরের টিম ব্লকের প্রতিটি স্কুল বছরে দু’বার পরিদর্শন করবে। রাজ্যে আরও বেশি বয়ঃসন্ধি ক্লিনিক খোলা হবে।
তবে, এই নতুন কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও কতগুলি প্রশ্ন উঠে এসেছে। প্রথমত, রাজ্যে এমনিতেই চিকিৎসকের আকাল। এর মধ্যে আবার স্কুলস্বাস্থ্য কার্যক্রমের জন্য প্রতিটি ব্লকে আলাদা চিকিৎসক কী করে নিয়োগ করা হবে? তা ছাড়া, সরকারি হাসপাতালে শয্যা সর্বত্র চাহিদার তুলনায় কম। রাতবিরেতে কোনও ছাত্র বা ছাত্রী গুরুতর অসুস্থ হলে তার কাছে থাকা হেলথ কার্ড দেখে কি আদৌ হাসপাতালে তার ভর্তি নিশ্চিত করা যাবে? আরও প্রশ্ন উঠছে, এত দিন সময়ের অভাব এবং কাজের চাপ দেখিয়ে অনেক শিক্ষক প্রাথমিক ভাবে ছাত্রদের অসুস্থতা চিহ্নিতকরণের কাজ করতে রাজি হননি বলে অভিযোগ। রাতারাতি তাঁদের মানসিকতা কি বদলে যাবে?
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস এ ব্যাপারে বলেন, “ব্লকের টিমে আয়ুর্বেদ, ইউনানি ও হোমিওপ্যাথি ডাক্তারদেরও নেওয়া হবে। এমডি-এমএসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদেরও হাতেকলমে প্রশিক্ষণ হিসেবে কিছু দিন ওই টিমে কাজ করানো যায় কিনা ভাবা হচ্ছে। ফলে ডাক্তারের অভাব হবে না।” তিনি আরও জানিয়েছেন, শয্যার অভাব থাকলেও কোনও ছাত্র হাসপাতালে গেলে যাতে তাকে শয্যা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আর শিক্ষকশিক্ষিকাদের সহযোগিতা পাওয়ার ব্যাপারে স্কুলশিক্ষা দফতরের উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.