ডেঙ্গি রোগী কত, ঠিক জানে না পুরসভা বা রাজ্য
ডেঙ্গি নিয়ে এক অদ্ভুত চাপানউতোর! এক দিকে কলকাতা বা সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতাল, অন্য দিকে পুরসভা ও স্বাস্থ্য দফতর।
বেসরকারি হাসপাতালগুলি বলছে, ডেঙ্গি রোগীর পরিসংখ্যান তারা পুরসভা কিংবা স্বাস্থ্য দফতরকে দিয়েছে। পুরসভা এবং স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, ডেঙ্গি রোগী সংক্রান্ত পুরো হিসেব তাদের কাছে নেই!
ডেঙ্গিতে আক্রান্তের তথ্য জানার জন্য ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর একটি কেন্দ্র চালু করেছে। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ জানিয়েছেন, বিভিন্ন নার্সিংহোম এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গি রোগীদের নাম-ধাম জানানোর জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু অনেক হাসপাতালই নিয়মিত ভাবে সেই তথ্য পাঠাচ্ছে না। তিনি বলেন, “রোগীর নাম-ধাম পেলে সঙ্গে সঙ্গে পুরকর্মীরা ওই এলাকায় গিয়ে মশার বংশবৃদ্ধি রোধে প্রতিষেধক ব্যবহার করতে পারবেন।” প্রয়োজনীয় তথ্য না মেলায় সেই কাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে জানান তিনি।
ডেঙ্গির হালফিল চিত্রটা যে যথেষ্ট উদ্বেগজনক, তা মেনে নিচ্ছেন শহরের বহু চিকিৎসকই। রোগের উপসর্গ বদলে যাওয়া নিয়েও রীতিমতো উদ্বিগ্ন ওই চিকিৎসকরা। স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের প্রাক্তন অধিকর্তা ও কীটপতঙ্গ-বিশেষজ্ঞ অমিয় হাটির চেম্বার বড়বাজার এলাকায়। তিনি বলেন, “জুলাইয়ের তুলনায় অগস্টে অনেক বেশি ডেঙ্গি রোগী পাচ্ছি। বেশির ভাগই সল্টলেক এবং মধ্য তথা উত্তর কলকাতার লোক।” তাঁর বক্তব্য, “যত রোগী জ্বর নিয়ে আসছেন, তাঁদের ২৫ শতাংশই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত।” ট্রপিক্যালের অন্য এক প্রাক্তন অধিকর্তা ও পরজীবী-বিশেষজ্ঞ অমিতাভ নন্দীর চেম্বার দক্ষিণ কলকাতায়। তিনি বলেন, “প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন নতুন ডেঙ্গি রোগী পাচ্ছি। জ্বর নিয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁদের শতকরা ৮০ ভাগেরই ডেঙ্গি ধরা পড়ছে। এঁদের মধ্যে কসবা এলাকার রোগীই বেশি।” তিনটি নার্সিংহোমে এখন ২০ জন রোগী অমিতাভবাবুর চিকিৎসাধীন।
চিকিৎসক সুব্রত মৈত্র আবার বলছেন, “গত তিন সপ্তাহে ৪২ জন ডেঙ্গি রোগী আমার অধীনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।” বেলেঘাটায় কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজ’ (নাইসেড) সূত্রে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে ৬০ জনের রক্তের নমুনায় ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। অগস্টে এখনই সংখ্যাটা ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। নাইসেডে বেশির ভাগ রক্তের নমুনাই আসে আইডি হাসপাতাল থেকে। তবে তিন চিকিৎসকই বলছেন, ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ ডেঙ্গিতে জীবনহানির আশঙ্কা নেই। হেমারেজিক ডেঙ্গিতে কিছুটা ভয় থাকে। ওই ভাইরাসের সংক্রমণে শরীরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়।
অমিয়বাবু এ বছর এখনও পর্যন্ত একটিও হেমারেজিক ডেঙ্গি রোগী পাননি। অমিতাভবাবু দুটি হেমারেজিক ডেঙ্গি রোগীর চিকিৎসা করেছেন। তাঁর মধ্যে এক জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। আর এক জন এখনও চিকিৎসাধীন। সুব্রতবাবুও এক জন হেমারেজিক ডেঙ্গি রোগীর চিকিৎসা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পেটে অসহ্য ব্যথা নিয়ে ওই রোগী এসেছিলেন। সঙ্গে জ্বর। ওই উপসর্গ তাঁদের অচেনা ছিল। পরে বোঝা গিয়েছিল, ডেঙ্গি সংক্রমণের ফলে পেটের ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাই পেটে ব্যথা হচ্ছিল।
ডেঙ্গির অচেনা উপসর্গ নিয়ে উদ্বিগ্ন অমিতাভবাবু। তিনি জানিয়েছেন, যে সব ডেঙ্গি রোগী আসছেন তাঁদের অন্তত ৬০ শতাংশের পেটের ডান দিকে চাপ ব্যথা ছিল। অনেকের শরীরে লসিকা গ্রন্থিগুলিতে (লিম্ফ গ্ল্যান্ড) তীব্র ব্যথা। সঙ্গে জলের মতো পায়খানা। ডেঙ্গির উপসর্গ বলে এত দিন এ সব জানা ছিল না। অমিতাভবাবু বিস্মিত এ বার সংক্রমণের তীব্রতা দেখেও। তিনি বলেন, “এত দিন ধরে ডেঙ্গি রোগের চিকিৎসা করছি। একটা নির্দিষ্ট এলাকায় এত তাড়াতাড়ি রোগ ছড়িয়ে পড়তে দেখিনি।”
অমিতাভবাবু মনে করেন, পরিবেশ এবং আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তনের ফলে মশা, ডেঙ্গি ভাইরাস কিংবা দুটিরই জিনগত কোনও পরিবর্তন হয়ে পরিস্থতি জটিল হতে পারে। এ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। ডেঙ্গি এমন ভাবে বেড়ে যাওয়ায় শুধু পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতর কিংবা পরিবেশের দোহাই দিতে নারাজ চিকিৎসকেরা। তাঁরা মানুষকে আরও দায়িত্বশীল হতে পরামর্শ দিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.