তাজ প্যালেস হোটেলের ঐতিহাসিক শাহজাহান হলে জার্কাতা এশিয়ান গেমসের সোনা জয়ের স্মৃতি ফেরাবেন প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।
ফেডারেশনের হীরক জয়ন্তী উৎসব পালনের অঙ্গ হিসাবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ’৫১ ও ’৬২ এশিয়ান গেমস সোনা জয়ীদের সংবর্ধনা। সেখানে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট প্রফুল্ল পটেল, কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন ছাড়া বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন শুধু পি-কেই। জাকার্তা এশিয়াডে চার গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন তিনি। ফাইনালেও কোরিয়ার বিরুদ্ধে দু’গোলের একটি ছিল তাঁর। অসুস্থতা সত্ত্বেও যাচ্ছেন ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ’৫১-র দিল্লি এশিয়াডের সোনা জয়ী দলের একমাত্র জীবিত সদস্য আমেদ খান দিল্লিতে আসতে পারবেন কি না এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ফেডারশেন কর্তারা। কারণ, তিনি অসুস্থ। তাঁকে আনার চেষ্টা চলছে। ’৬২-র চ্যাম্পিয়ন টিমের বেঁচে আছেন ১১ জন। ‘আর্থিক সাহায্য না পেলে অনুষ্ঠানে যাব না’, অধিনায়ক চুনী গোস্বামীর নেতৃত্বে এই দাবি তুলে দিল্লি যাবেন না ঠিক করেছিলেন সবাই। শেষ পর্যন্ত ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রফুল পটেলের ফোন ও আশ্বাস পেয়ে ‘বয়কট’ তুলে নেন চুনী-প্রদ্যোৎ বর্মন-চন্দ্রশেখররা।
আসছেন না দু’জন। অসুস্থতার জন্য অরুণ ঘোষ আর ‘চির-বিদ্রোহী’ তুলসীদাস বলরাম। কলকাতায় ফোনে ধরা হলে বলরাম বললেন, “অনেক প্রতিশ্রুতি দেখেছি। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেলে ওই রুপোর প্লেট আর শাল নিয়েই বসে থাকতে হবে। চোখের সামনে তিন বন্ধু রামবাহাদুর, থঙ্গরাজ, ইউসুফ খানকে অসহায় ভাবে মরে যেতে দেখেছি। প্লেট নিয়ে গেলে হাসপাতাল কি আমাকে বিনা পয়সায় চিকিৎসা করাবে। আমি কোনও দিন টাকা চাইনি। কিন্তু এখন চাইছি। কারণ আমি দরিদ্র। তাই নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। ওদের সঙ্গে একমত নই।” যা শুনে চুনীর প্রতিক্রিয়া, “বলরাম এখনই টাকা চায়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দু’বার ফোন করেছেন। তাঁর কথা ফেলা যায়? আশা করব, উনি কথা রাখবেন।”
মুম্বইয়ের বিখ্যাত গ্রুপ ‘সামাক দেওয়ার’-এর গান আর কোরিওগ্রাফির মাঝে হবে সংবর্ধনা। স্মৃতিচারণ। পাঁচ তারা হোটেলের বলরুমে চুনী-পিকেদের হাতে তুলে দেওয়া হবে রৌপ্য ফলক ও কাশ্মীরি শাল। ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগের নায়করা যখন স্মৃতির কথা বলবেন বা সম্মানিত হবেন তখন সেখানে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন না সুনীল-নবি-সুব্রতরা। পরের দিন সিরিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ। ভারতীয় দল যেখানে আছে সেই গ্রেটার নয়ডা থেকে তাজ প্যালেসে যেতে-আসতে প্রায় তিন ঘণ্টার বাস-যাত্রা করতে হবে। সে জন্যই তাদের ডাকা হয়নি অনুষ্ঠানে। থাকছেন শুধু জাতীয় কোচ উইম কোভারম্যান্স এবং দু’একজন ফুটবলার, যাদের টিমে খেলার সম্ভাবনা নেই। অনুষ্ঠানে ভারতীয় ফুটবলের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রব বান দেখাবেন তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার রুপরেখা। কীভাবে তিনি বদলে দিতে চাইছেন ভারতীয় ফুটবলকে। পেতে চাইছেন সাফল্য।
ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের সবথেকে খারাপ র্যাঙ্কিং থেকে বের হতে আপাতত যা দরকার সেই নেহরু কাপ জয়ের দিকে এখন তাকিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা। গ্রেটার নয়ডার জেপি গ্রিনস রিসর্টে আপাতত সেই সফল্য পাওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন নবি-মেহতাবরা। এ দিন বিকেলে অনুশীলনের পর সেটাই শোনা গেল গৌরমাঙ্গিদের মুখে। বললেন, “সাফল্য পেতেই হবে। দলে অনেক নতুন ছেলে এসেছে। আমাদের কাজ তাদের গাইড করা।” বহু দিন পর জাতীয় দলে ফেরা মেহতাব ‘ঈদ মোবারক’ করার ফাঁকে বলে গেলেন, “বহুদিন পর দলে ফিরেছি। প্রথম একাদশে ফিরে নিজেকে প্রমাণ করতে চাই।” হাউটনের আমলের লং বল সিস্টেম বদলে মাটিতে বল রেখে খেলা রপ্ত করাচ্ছেন ডাচ কোচ কোভারম্যান্স। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলল এ দিন বিকেলেও। স্বর্ণযুগ নিয়ে উৎসব পালনের পর দিনই যে মাঠে নেমে খেলতে হবে সুনীল ছেত্রীদের! |