বাপের বাড়িতে ২০ দিন ‘বন্দি’ বৌ
ভাঙা সিঁড়ি, পাইপ বেয়ে উদ্ধার অভিযান পুলিশের
পুলিশ থেকে স্পাইডারম্যান!
হঠাৎ থমকে গিয়েছে প্যাঁচালো সিঁড়ি। দোতলার পিছল পাইপের সামনে দাঁড়িয়ে রবিবার সন্ধ্যায় চন্দ্রকোনা থানার পুলিশকর্মীরা বোধহয় সে কথাই ভাবছিলেন।
হ্যাঁচোর প্যাঁচোর করে শেষ পর্যন্ত অবশ্য তাঁরা বাড়ির ছাদ পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন। দোতলার বারান্দায় তখন আর্তনাদ জুড়েছেন এক তরুণী। ক্রমাগত বলে চলেছেন, “আমাকে ছেড়ে দাও।” আর তাঁর পা ধরে তাঁকে আটকে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন তাঁর মা। কুঁয়াপুরের মানুষ অবশ্য তত ক্ষণে বিস্ময়ে হতবাক। মেঘলা দিনে ভর সন্ধ্যায় এ কী অদ্ভুতুড়ে দৃশ্য! চারদিকে থইথই ভিড়। সকলেই বুঝতে চাইছেন, হচ্ছেটা কী!
সেই তরুণী মৌমিতাকে নিয়ে অবশেষে পুলিশ বাইরে বেরোলে রহস্য একটু একটু করে প্রকাশ পেল।
পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার কুঁয়াপুরে প্রাথমিক-শিক্ষক কিঙ্কর ঘোষের বড় মেয়ে মৌমিতা। তাঁকে উদ্ধার করতেই সেই দিন কিঙ্করবাবুর বাড়িতে গিয়ে পুলিশ দেখে, সদর দরজায় ঝুলছে মস্ত তালা। বাড়িতে লোক থাকলেও অনেক ডাকাডাকিতেও দরজা খোলেনি। তালা ভাঙলে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠবে। তাই উপায় খুঁজতে গিয়ে বাড়ির পিছনের পরিত্যক্ত লোহার সিঁড়ি আর পাইপে নজর যায় তাঁদের। আলোআঁধারিতে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই তাতে চড়লেন তিন পুলিশকর্মী, সাব-ইন্সপেক্টর সুব্রত বিশ্বাস, বিকাশচন্দ্র সাউ এবং কনস্টেবল মীরা ভট্টাচার্য। কিছুটা ভাঙা সিঁড়ি, কিছুটা পাইপ বেয়ে পা ফেলে ছাদে উঠলেন তিন জনই। ছাদের দরজা খোলাই ছিল। সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় মৌমিতার কাছে পৌঁছতে আর বেগ পেতে হয়নি। ফেরার সময় সদর দরজা খুলে দিয়েছেন মৌমিতার মা-ই।
কিন্তু সে তো ছিল ক্লাইম্যাক্স। শুরুটা যেন বায়োস্কোপের মতোই এক বিয়ে বাড়িতে। চন্দ্রকোনা বিদ্যাসাগর মহাবিদ্যালয়ে বাংলা অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী মৌমিতা বছর দু’য়েক আগে গড়বেতা থানার রসকুণ্ডুতে তাঁর মামার বিয়েতে গিয়ে প্রেমে পড়েছিলেন রামদুলাল চৌধুরী নামে এক যুবকের। বিয়েবাড়ির ছবি তুলতে এসেছিলেন রামদুলাল। তারপরে আস্তে আস্তে প্রেম পরিণয়ে পরিণত করার সিদ্ধান্তও নেন দু’জনে। তবে সবই হয়েছে চুপিসাড়ে। দু’বাড়ির কেউ টেরটি পাননি। টের যখন পেলেন, ততদিনে দু’জনে বিয়েটা সেরে ফেলেছেন। গত ১৩ জানুয়ারি মেদিনীপুরে গিয়ে রেজিস্ট্রি করেন রামদুলাল-মৌমিতা। রামদুলালের পরিজনেরা সব মেনেও নেন। কিন্তু ‘জাঁদরেল’ বাবার ভয়ে জীবনের সব থেকে বড় পদক্ষেপটির কথা বাড়িতে জানাতেই পারেননি মৌমিতা।
সম্প্রতি মৌমিতার বিয়ের তোড়জোড় শুরু করেন কিঙ্করবাবু। অবস্থা বেগতিক দেখে বিয়ের কথা জানান মৌমিতা। তারপরই রুদ্রমূর্তি ধরেন কিঙ্করবাবু। মৌমিতা জানিয়েছেন, ২০ দিন বাবা তাঁকে বাড়িতে একেবারে ‘বন্দি’ করে রেখেছিলেন। মোবাইলও কেড়ে নেন। বাড়ির ল্যান্ড ফোনেরও ধারে কাছে যাতে সে পৌঁছতে না পারে, সে জন্য ছিল মায়ের কড়া নজরদারি। তবু এক দিন লুকিয়ে সেখান থেকেই ফোন করে রামদুলালকে সব জানান মৌমিতা।
রামদুলাল বলেন, “আমি তার পরে একবার শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। ও বাড়িতে আর গেলে পরিণাম ভাল হবে না বলে হুমকিও দেওয়া হয়।” তবে হাল ছাড়েননি রামদুলাল। জনা কয়েক বন্ধুর সঙ্গে গিয়ে একাধিক বার মৌমিতাকে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শ্বশুরমশাইয়ের ‘ব্যূহ’ ভেদ করতে পারেননি। শেষমেশ বউকে ঘরে আনতে পুলিশের দ্বারস্থ হন। রবিবার বাবা বলরাম, দাদা দেবাশিস, মা সুচিত্রা ও বন্ধুদের নিয়ে তিনি হাজির হন চন্দ্রকোনা থানায়। ওসি শীর্ষেন্দু দাসকে সব খুলে বলেন। বিয়ের শংসাপত্রও দেখান। এরপরই মৌমিতা উদ্ধার-অভিযানে নামে পুলিশ।
রবিবার ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলেন না কিঙ্করবাবু। দুই মেয়ে আর বউকে বাড়িতে রেখে বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে একটু বেরিয়েছিলেন। ছেলে গিয়েছিল পড়তে। কিঙ্করবাবু যখন ফিরলেন, তত ক্ষণে মৌমিতাকে নিয়ে চলে গিয়েছে পুলিশ।
মৌমিতাকে সোজা থানায় নিয়ে আসা হয়। বাবার বিরুদ্ধে জোর করে আটকে রাখা, মারধরের অভিযোগ দায়ের করেন মৌমিতা। রবিবার সন্ধ্যায় থানা থেকেই স্বামীর সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি চলে যান তিনি। মৌমিতার কথায়, “আমরা খুশি। শীঘ্রই বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।” কিন্তু আপনার বাবা? “দয়া করে বাবাকে নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না” মৌমিতার গলা একটু কেঁপে গেল যেন!
কিঙ্করবাবুরও মুখে কুলুপ। থানায় গিয়েছিলেন। পুলিশ বুঝিয়েছে, দু’জনেই সাবালক। আইনত এই বিয়ে বৈধ। কিন্তু সব বুঝেও বুঝছেন না কিঙ্করবাবু।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.