সম্পাদকীয় ২...
সুস্থবুদ্ধির দায়
সমে সাম্প্রদায়িক হানাহানির প্রতিক্রিয়ায় দেশের বিভিন্ন রাজ্যে উত্তর-পূর্বের পড়ুয়া বা চাকুরিজীবীদের উপর দুষ্কৃতীদের যে হামলা হইয়াছে, তাহার পরিণামে লক্ষ-লক্ষ মানুষ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিজ-নিজ রাজ্যে ফিরিতেছেন। এই হামলা ও হুমকির পিছনে গুজবের ভূমিকা রহিয়াছে এবং সেই গুজব নাকি মোবাইল টেলিফোনের এস এম এস, এম এম এস এবং ইন্টারনেটের সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট মারফত দেশময় ছড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে। এই অপকর্মের পিছনে পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থবাদীদের হাত আছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠিয়াছে এবং সরকারি স্তরে ভারত-পাকিস্তান চাপান-উতোরও চলিতেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক, সন্দেহ নাই। আরও উদ্বেগজনক এই জন্য যে, আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য লইয়া গুজবকে বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়া এখন আর মোটেই কঠিন নয়। এক জন লোক একটি ঘরে বসিয়াই গোটা অপকাণ্ডটি সংগঠিত করিতে পারে।
প্রশ্ন উঠিবে, এই পরিস্থিতির প্রতিবিধান তবে কী? প্রতিবিধান একটাই গুজবে অবিশ্বাস করা। গুজবকে সন্দেহ করা, তাহার সত্যতাকে চ্যালেঞ্জ জানানো। কাকে কান লইয়া গিয়াছে শুনিয়াই কাকের পিছনে দৌড়াইয়া বেড়ানো নয়, নিজের মাথার দুই পাশে হাত দিয়া পরখ করা, সত্য সত্যই কান স্বস্থানে রহিয়াছে, না কি কাকের পাখনায় ভর করিয়া উড়াল দিয়াছে। গুজবের প্রামাণিকতা বিষয়ে নিঃসংশয় হওয়া বস্তুত এতটাই সহজ। কিন্তু যদি কেহ গুজবে বিশ্বাস করিবার জন্য আগাম প্রস্তুত হইয়া থাকেন, তবে তাঁহাকে ঠেকাইবে কে? মুশকিল হইল, জনসাধারণ বলিতে যাঁহাদের বুঝায়, তাঁহাদের বৃহদংশই গুজবে বিশ্বাস করার জন্য কার্যত মুখাইয়া থাকেন। ইতিহাসে অনেক বৃহৎ কাণ্ড জনগণের এই মানসিক প্রবণতার জন্যই সংঘটিত হইতে পারিয়াছে। ফরাসি বিপ্লব হইতে সিপাহি বিদ্রোহ, গুজবের ভূমিকা, গুজবে বিশ্বাস করিয়া সমবেত সিদ্ধান্ত লইবার প্রবণতা ইতিহাসের গতিপথকে পর্যন্ত প্রভাবিত করিয়াছে। স্বাধীনতার আগে ও পরে ভারতে যত সাম্প্রদায়িক হানাহানি ঘটিয়াছে, দেশভাগের সময় যে অনন্ত রক্তক্ষয়, তাহার পিছনেও গুজবের নেতিবাচক ও তাৎক্ষণিক ভূমিকা অস্বীকার করা যাইবে না।
প্রযুক্তিকে ঠেকানো যায় না। কিন্তু গুজবে বিশ্বাস করিবার প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। ভারতবাসীকে এই লড়াইটাই করিতে হইবে। কে কোথায় মোবাইল ফোনে এস এম এস পাঠাইয়া একটা মিথ্যা গুজব প্রচার করিয়া দিল, অমনি তাহা জনে-জনে পাঠাইয়া এবং সংঘবদ্ধ হইয়া ত্রিশূল কিংবা তরবারি লইয়া রে রে করিয়া রাস্তায় নামিয়া পড়িতে হইবে কিংবা এত কালের প্রতিবেশীদের ঘরে আগুন লাগাইতে কেরোসিনের টিন খুঁজিতে হইবে এই মানসিকতার মধ্যেই লুকাইয়া রহিয়াছে সাম্প্রদায়িক হানাহানির বারুদ। অবিশ্বাস এবং সন্দেহের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা, সেই শঙ্কা হইতে আগাম প্রতিরোধক বা নিবারক পদক্ষেপ করিবার ব্যগ্রতা প্রায়শ একটা অস্তিত্বহীন ঘটনাকে অস্তিত্বময় করিয়া তোলে। যাহা ঘটে নাই, তাহা ঘটিয়াছে বলিয়া প্রতিভাত হয় এবং তাহার পাল্টা বা জবাবি ঘটনার প্রস্তুতি চলিতে থাকে। গুজবকে সন্দেহ করিতে শিখিতে হইবে, গুজব যাহারা ছড়াইতেছে, তাহাদের অভিপ্রায়কেও সন্দেহ করিতে শিখিতে হইবে। প্রতিবেশীর অভিপ্রায়কে সন্দেহ করিবার চেয়ে সেটা অনেক বেশি কাজের। এই সুস্থবুদ্ধি যাঁহাদের আছে, তাঁহাদের উদ্যোগী হইতে হইবে, যাহাতে অসুস্থ বুদ্ধিকে প্রতিহত করা যায়। সমাজের প্রকৃত সংস্কারের জন্য তাহা জরুরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.