ছ’বছর পরে পুলিশের জালে ধরা পড়ল পাপিয়া ঘোষ হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মূল অভিযুক্ত মহম্মদ মুস্তকিম ওরফে সামিম। ওই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত অন্য চার জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে আর এক অভিযুক্ত সংযোগ রায় এখনও ফেরার।
গত শুক্রবার পুলিশের একটি বিশেষ দল জামশেদপুরের কান্দ্রা এলাকা থেকে মুস্তকিমকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের দাবি, জেরায় সামিম পাপিয়া ঘোষ হত্যাকাণ্ডে যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করেছে। পুলিশের কাছে সামিম জানিয়েছে, ঘটনার পরে সে মধ্যপ্রদেশে পালিয়ে যায়। পরে জামশেদপুরে এসে একটি গাড়ির চাকা সারাইয়ের দোকানে কাজ নেয়। পটনার সিনিয়র পুলিশ সুপার অমৃত রাজ বলেন, “এই ঘটনায় পুলিশের যে বিশেষ দলটি তৈরি করা হয়েছিল তারাই জামশেদপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে। অন্য অভিযুক্তের খোঁজ চলছে। আশা করছি তার সন্ধানও মিলবে।” অমৃতের আশা, সামিমকে জেরা করে আর এক ফেরার অভিযুক্ত সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে।
পটনার অভিজাত পাটলিপুত্র এলাকায় ২০০৬ সালের ২ ডিসেম্বর খুন হন পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের শিক্ষিকা পাপিয়া ঘোষ এবং তাঁর পরিচারিকা মালতী দেবী। অভিযোগ ওঠে, পাপিয়া দেবীর জমি-বাড়ি হাতিয়ে নিতে অনেক দিন ধরেই তাঁর উপরে চাপ দিচ্ছিল জমি-মাফিয়াদের একটি চক্র। সেই কারণেই ওই খুনের ঘটনা ঘটে। বিরোধী দল আরজেডি-র পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ঘটনার পিছনে মোকামায় জেডিইউয়ের দুই বাহুবলী নেতাও রয়েছেন। পাপিয়া দেবীর বোন কেয়া সেন-সহ পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাপিয়াদেবীর ছাত্রছাত্রী এবং সহকর্মী ও ঘনিষ্ঠেরা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে আবেদন জানান। সেখানেও তাঁদের অভিযোগ ছিল, বাড়ি ও জমি হাতিয়ে নিতেই পাপিয়াদেবীকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক দিন ধরে তাঁকে জমি-মাফিয়াদের একটি চক্র হুমকি দিচ্ছিল।
যদিও পুলিশের দাবি, ডাকাতির উদ্দেশ্যেই পপিয়াদেবীর বাড়িতে সে দিন রাতে ঢুকেছিল অভিযুক্তেরা। ডাকাতিতে বাধা দিতে গিয়েই খুন হন পাপিয়াদেবী এবং তাঁর পরিচারিকা। ঘটনার ১৩ দিনের মাথায় পটনা ও সংলগ্ন দীঘা ও কুরজি এলাকা থেকে শঙ্কর সাউ, আশিসকুমার রায়, অনিলকুমার ওঁরাও এবং মনোহরকুমার ঠাকুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের কাছ থেকে পাপিয়া দেবীর বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া টেলিভিশন, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, বিদেশি মূদ্রা-সহ বহু জিনিসপত্র উদ্ধার হয়েছে বলেও দাবি পুলিশের। ধৃত চার জনকে পটনার এক আদালত ইতিমধ্যেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। লুঠ করা জিনিসপত্র কেনার অপরাধে আইনজীবী রামচন্দ্র মাহাতোকেও একই শাস্তি দেয় কোর্ট। |