মুশকিল একটাই। অষ্টমীতে দিল্লি সফরে আসতে পারেন স্পেনের রাজা ডন জুয়ান কার্লোস! রাষ্ট্রপতি ভবনের উঠোনে রাজার ‘সেরিমোনিয়াল রিসেপশন’ ও পরে নৈশভোজ নিয়েই এখন চিন্তা! তবু এ বারও দুর্গা পুজোয় মিরিটির ভিটেয় যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে বলা হচ্ছে, বীরভূমের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিষয়টি ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, সম্ভবত পঞ্চমী থেকে দশমী কীর্ণাহারে নিজের বাড়িতেই থাকবেন প্রণববাবু।
প্রণববাবুর বড় ছেলে তথা নলহাটির কংগ্রেস বিধায়ক অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “মিরিটির পৈতৃক বাড়িতেই পুজো হবে। সেখানে দুর্গামণ্ডপের সংস্কারের কাজও প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তার থেকে তিন কিলোমিটার দূরে কীর্ণাহারের বাড়িতে রাতে থাকবেন বাবা। তার পর একাদশীর দিন দিল্লি ফিরে আসবেন।”
কিছু দিন আগেও ছিলেন ইউপিএ সরকারের অলিখিত দু’নম্বর ব্যক্তি। কিন্তু দিল্লিতে শত কাজ সত্ত্বেও গত সাত বছরে প্রতিবারই দুর্গা পুজোয় মিরিটিতে কাটিয়েছেন তিনি। পুজোর মুখে এক বার মার্কিন সফরে যেতে হয়েছিল। তবে সে বারও ওয়াশিংটন থেকে ফিরে সপ্তমীর সকালে সোজা পৌঁছে গিয়েছিলেন মিরিটিতে। আর এক বার যখন পুজোয় চণ্ডী পাঠে বসেছেন, তখন জরুরি প্রয়োজনে ফোন করেছিলেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব ডোনাল্ড রামসফেল্ড। দিল্লি থেকে যোগাযোগ করা হয় দেশের বাড়িতে। কিন্তু চণ্ডী পাঠ শেষ করার পরেই প্রণববাবু ফোনে কথা বলেন রামসফেল্ডের সঙ্গে। |
স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে থেকেই প্রশ্ন উঠছিল, পুজোয় কী করবেন তিনি?
শুধু সাংবাদিকরা নন রাজনীতিতে সতীর্থরাও তাঁকে এই প্রশ্ন করেছিলেন। এমনকী মন্ত্রিসভার এক সতীর্থ মজা করে বলেছিলেন, রায়সিনা হিলে দুর্গা পুজো করলে কেমন হয়? ওখানে তো একটা শিব মন্দিরও রয়েছে শুনেছি।” জবাবে কীর্ণাহারের ব্রাহ্মণসন্তান হেসে বলেন, “তা হলে আর ইমপিচমেন্টের প্রয়োজন হবে না। দেখা যাক ভেবে কিছু একটা উপায় বার করা যাবে।”
কী উপায় বার হল? রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের এক আমলার কথায়, উপায় বার করাটা সহজ ছিল না। দেশের রাষ্ট্রপতি তিনি। তাঁর যে কোনও সফর নিয়েই প্রোটোকলের সহস্র প্যাঁচ থাকে। নিয়মকানুন ঘেঁটে দেখা গেল রাষ্ট্রপতির নাকি কোনও ‘ছুটি’-ই নেই। তিনি তাই কীর্ণাহার যাবেন ব্যক্তিগত প্রয়োজন দেখিয়ে।
রায়সিনা হিলের ওই আমলা আরও জানান, গোড়ায় স্থির হয়েছিল, পুজোর দিনগুলিতে রাতে কলকাতার রাজভবনে থাকবেন তিনি। সকালে কলকাতা থেকে বিমানে পানাগড়ে নামবেন। সেখান থেকে মিরিটি যাবেন। তার পর পুজোর পর প্রতি রাতে ফিরে আসবেন রাজভবনে। কিন্তু এতে ঝঞ্ঝাট হবে আঁচ করে সেই প্রস্তাব গোড়াতেই বাতিল করা হয়েছে। ঠিক হয় কীর্ণাহারেই থাকবেন তিনি। ‘ব্যক্তিগত প্রয়োজনে’ তাঁর এই সফরও অবশ্য মোটামুটি সরকারি নিয়মে বাঁধা। রাষ্ট্রপতি বিদেশে গেলে রাষ্ট্রপতি ভবনে যে সব নিয়মকানুন পালন করা হয়, এ ক্ষেত্রেও তেমনই হবে। বীরভূমের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে সেই অনুযায়ী নিরাপত্তা ও অন্যান্য আয়োজন রাখার কথাও বলা হয়েছে। তবে রাষ্ট্রপতির সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রণববাবু চাইছেন না যে নিরাপত্তার খুব বাড়াবাড়ি করা হোক। কারণ পুজো মানে তাঁর কাছে শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। সাবেক প্রতিমা পুজো, চণ্ডী পাঠ থেকে শুরু করে লোক খাওয়ানো এই সব কিছু ঘিরেই তাঁর উৎসাহ। পুজোর সময় বাড়িতে গ্রামের সকলের নিমন্ত্রণ থাকে। নিরাপত্তার বাড়াবাড়ি হলে অসুবিধে হতে পারে তাঁদেরও। অভিজিৎ জানালেন, “আগের মতো সবই হবে, তবে আগে যেমন হই-হই করে ঢুকে পড়ার ব্যবস্থা থাকত, এ বার তা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হবে।”
গত কয়েক বছরে প্রণববাবুর পুজো নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কম হইচই হয়নি। টিভি ক্যামেরা, ওবি ভ্যানের ভিড় লেগেই থাকে। পুজোর দিনগুলিতে সময়-সুযোগ পেলে কীর্ণাহারের বাড়িতে বসে সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারও দিতেন প্রণববাবু। এ বার যখন রাষ্ট্রপতি চণ্ডী পাঠে বসবেন, তখন হুড়োহুড়ির আশঙ্কা থাকছেই। তবে অভিজিতের কথায়, “এ বার সেই সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। চাইলে যে কেউ পুজোয় আসতে পারেন। পঙ্ক্তিভোজনে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু ক্যামেরার প্রবেশ নিষিদ্ধ হবে। সাক্ষাৎকারেরও কোনও প্রশ্ন নেই।” স্পেনের রাজার সফরের কী হবে? রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের এক কর্তা বলেন, সেই চিন্তাটাই রয়ে গিয়েছে। মাদ্রিদ এখনও তারিখ জানায়নি। তবে ডন জুয়ান কার্লোস অষ্টমীতে এলে, হয়তো পুজোর মধ্যে এক দিনের জন্য রাইসিনা হিলে ফিরে আসতে হতে পারে রাষ্ট্রপতিকে। |