কয়লা ব্লক বণ্টন সংক্রান্ত আর্থিক কেলেঙ্কারির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে সংসদে আক্রমণ শানাতে চাইছে বিজেপি নেতৃত্ব। একের পর এক দুর্নীতির ঘটনায় ‘চোখ বুজে থাকার’ অভিযোগে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি চেয়ে আগামিকাল সংসদে সরব হতে চলেছে সিপিএম নেতৃত্বও।
নিলাম না করে সুপারিশের ভিত্তিতে কয়লা ব্লক বণ্টন করায় সরকারের প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে গত শুক্রবারই সংসদে রিপোর্ট জমা দিয়েছে ‘কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল’ (সিএজি)। ইউপিএ সরকারের আট বছরের মধ্যে পাঁচ বছরই প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কয়লা মন্ত্রক থাকায় সে দিনই প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা দাবি করেছিল বিজেপি। তিন দিন বন্ধ থাকার পরে আগামি কাল সংসদের অধিবেশন বসার কথা। কয়লা ব্লক বণ্টনের ঘটনাকে স্বাধীন ভারতের সর্ববৃহৎ আর্থিক কেলেঙ্কারি অ্যাখ্যা দিয়ে সরকারকে চেপে ধরতে চায় বিজেপি।
আজ সন্ধ্যায় বিজেপির কোর গ্রুপের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কয়লা কেলেঙ্কারিতে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে আগামী দু’-তিন দিন সংসদে সরব হবে বিজেপি নেতৃত্ব। নিলামের নীতি রূপায়ণ নিয়ে বিলম্ব কেন হয়েছে, তা নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি চাইবে বিজেপি। দল মনে করছে, দেড় বছর পরেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে সরকারকে কোণঠাসা করার যে সুযোগ পাওয়া গিয়েছে তা কোনও ভাবেই হাতছাড়া করা উচিত হবে না দলের। রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলির বক্তব্য, এ যাবৎ যে ক’টি দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে তাতে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি কোনও ভূমিকা ছিল না। কিন্তু সরকারের যে বিশাল রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, তার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী এড়াতে পারেন না। কারণ তিনি সে সময়ে ওই মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। |
সিপিএমও প্রধানমন্ত্রীর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলছে। দলের বক্তব্য, সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ কে এন বালগোপাল তিন বার প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে দুর্নীতির বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু জবাব মেলেনি। সুতরাং ধরেই নেওয়া যায় যে প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছাকৃত ভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছেন। অসম হিংসা বা কৃষকদের আত্মহত্যার জন্যও আজ সরকারের নীতি-পঙ্গুত্বকে দায়ী করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। অসম সমস্যার পিছনে কংগ্রেসের ‘ভুল নীতি’কেই এ দিন দায়ী করেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী। দলের বক্তব্য, চলতি হিংসার জন্য দায়ী মূলত অনুপ্রবেশ। নির্বাচন কমিশনের একটি রিপোর্টের উল্লেখ করে বিজেপি বলেছে, অনুপ্রবেশের কারণে অসমে ২৭টি জেলার মধ্যে ১১টি জেলার জনসংখ্যার চরিত্র বদলে গিয়েছে। কিন্তু ভোট-ব্যাঙ্কের কথা ভেবে স্বাধীনতার পর থেকে চুপ থেকেছে কংগ্রেস নেতৃত্ব। যার খেসারত এখন দেশকে দিতে হচ্ছে।
কেন্দ্রের কৃষক-নীতি নিয়েও আজ সরব হন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের অভিযোগ, কেন্দ্র কৃষকদের প্রতি বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে, যার ফলে কৃষকদের ঋণ বেড়েই চলেছে। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। এই পরিস্থিতিতে ফের বিতর্কে জড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী বেণীপ্রসাদ বর্মা। কাল বরাবাঁকিতে বেণী বলেন, “জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় আমি খুশি। এতে কৃষকেরা পণ্যের জন্য অতিরিক্ত দাম পাচ্ছেন।” বেণীর মন্তব্যের সূত্র ধরে স্বভাবতই সরকারকে আক্রমণ করতে ছাড়েনি বিজেপি নেতৃত্ব। দলের নেতা মুখতার আব্বাস নকভি টেনে আনেন ‘মিঃ ইন্ডিয়া’ ছবির খলনায়ক ‘মোগাম্বো’র বিখ্যাত সংলাপ ‘মোগাম্বো খুশ হুয়া’র কথা। তাঁর কথায়, কেন্দ্র ‘মেহঙ্গাই কা মোগাম্বো।’ নকভি বলেন, “দাম বাড়বে, বেকারি বাড়বে, কৃষক আত্মহত্যা করবেন আর মোগাম্বো খুশি হবে।” কংগ্রেস শিবির বিষয়টি বেণীর ব্যক্তিগত মত বলে এড়িয়ে যেতে চেয়েছে। |