ব্লক প্রায় ২৫০ ওয়েবসাইট
কাজে ফিরছে উত্তর-পূর্ব, সম্প্রীতির ডাক মমতারও
খুশির ঈদে সম্প্রীতি ও ঐক্য অটুট রাখতে কড়া পদক্ষেপ করল কেন্দ্র। গুজবে কান না দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রীতির মিষ্টি বিলি হল অসমের ত্রাণ শিবিরে। আর এই আবহেই আতঙ্কের রেশ কাটিয়ে গুয়াহাটি থেকে বিশেষ ট্রেনে ফের বেঙ্গালুরু রওনা হলেন উত্তর-পূর্বের বহু মানুষ।
পরিস্থিতি আগেই কিছুটা শান্ত হয়েছিল। তার মধ্যেই হিংসার আতঙ্ক ছড়ানো রুখতে এ দিন আড়াইশো’রও বেশি ওয়েবসাইট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তার মধ্যে ১৩০টি সাইট ইতিমধ্যেই ব্লক করা হয়েছে। এই সাইটগুলিতে ভুয়ো ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে উত্তর-পূর্বের মানুষের উপর হামলার প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছিল। আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে আজ কোয়ম্বত্তূরে আরও এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সাইবার-ছায়াযুদ্ধের পিছনে যে একাধিক পাক সংগঠন রয়েছে, সেই প্রমাণ পাকিস্তানকে দেওয়া হবে বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে।
একই সঙ্গে, অসমে সংখ্যালঘু নিপীড়ন নিয়ে অপপ্রচার রোখারও চেষ্টা চলছে। গোষ্ঠী-সংঘর্ষের ফলে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের সাহায্যে সক্রিয় হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তাঁর নির্দেশে আগামিকাল কেন্দ্রের একটি প্রতিনিধি দল দু’দিনের সফরে অসম যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের যুগ্ম সচিবদের নিয়ে তৈরি প্রতিনিধি দলটি মূলত দুর্গতদের পুনর্বাসনের বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
সোমবার কলকাতায় ঈদের নমাজ পড়তে এসে ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলেন, “গুজবে কান দেবেন না। আমরা এ সব সমর্থন করি না। সমস্যা মেটাতে সব ভাবে পাশে আছি।” অসম থেকে জলপাইগুড়ির ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদেরও আশ্বস্ত করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বলেন, “যাঁরা জলপাইগুড়িতে এসে রয়েছেন, তাঁরা আমাদের অতিথি। তাঁদের কেউ যদি এখনই ফিরতে না চান, তা হলে এখানেই থাকবেন। আমরা আশ্রয় দেব।”
অন্য দিকে, এ দিন ক্যাবিনেট সচিব অজিত শেঠ অসমের পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, যোজনা কমিশন ও অন্য সামাজিক মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে ত্রাণ শিবিরগুলি নিয়ে কথা হয়। কেন্দ্রের রিপোর্ট বলছে, ত্রাণ শিবিরে ঠিকমতো স্বাস্থ্য পরিষেবা মিলছে না। ক্ষোভ বাড়ছে। মৌলবাদী সংগঠনগুলি এই ক্ষোভকেই কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা কেন্দ্রের।
এ দিনই কোকরাঝাড়ের ত্রাণ শিবিরগুলিতে মিষ্টি বিতরণ করতে গিয়ে প্রতিবাদের মুখে পড়েন কৃষিমন্ত্রী নীলমণি সেন ডেকা। দীর্ঘদিন শিবিরে থাকার পরেও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা না হওয়ায় উৎসবের মেজাজে ছিলেন না শিবিরবাসী। ধুবুরির শিবিরগুলিতেও খুশির ঈদে খুশি অমিল। মিষ্টি বিতরণ, শুভেচ্ছা বিনিময় হলেও শিবিরবাসী জানেন না কবে গ্রামে ফিরতে পারবেন, কবে ফের ঘর গড়া হবে।
অসমে ব্রহ্মপুত্র ও বরাক উপত্যকা জুড়ে, সব সংবেদনশীল এলাকায় এ দিনও অতিরিক্ত পুলিশ ও আধা সেনা মোতায়েন করা ছিল। মাছখোয়ার ঈদগাহে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “বহিঃশত্রুর প্ররোচনায় পা দিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে রেষারেষি বন্ধ করুন। শঙ্করদেব, আজান ফকিরের রাজ্যে, সর্বত্র শান্তি-সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রথম কর্তব্য।” বড়োভূমিতে হিন্দু ও মুসলিম এক সঙ্গে মিষ্টি বিতরণ করেন। চিরাং, কোকরাঝাড়, ধুবুরি, বঙ্গাইগাঁওয়ে সংঘর্ষে নিহতদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধাও জানানো হয়।
এ দিন বেঙ্গালুরু থেকে আরও দুটি বিশেষ ট্রেন গুয়াহাটি পৌঁছয়। প্রায় দু’হাজার মানুষ ঘরে ফেরেন। তবে বেঙ্গালুরু থেকে আর কোনও ট্রেন গুয়াহাটির উদ্দেশে গত দু’দিনে ছাড়া হয়নি। বরং গুয়াহাটি থেকে এ দিন তথ্যপ্রযুক্তির শহরে ফেরার জন্য ট্রেন ধরেন অনেকে। এ দিন উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের জন্য চেন্নাইয়ে সেন্ট্রাল স্টেশনে হাওড়াগামী করমণ্ডল এক্সপ্রেসের সঙ্গে অতিরিক্ত বগি জুড়তে হলেও রেলের কর্তারা জানান, গত কয়েক দিনের তুলনায় এটা সামান্য। ঘরে ফেরার হিড়িক এখন নেই বললেই চলে।
তবে এতেই রাশ আলগা করছে না দিল্লি। সাইবার-ছায়াযুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে। পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী রেহমান মালিক কালই জানান, আতঙ্ক ছড়ানোর পিছনে পাক সংগঠন থাকার প্রমাণ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ কুমার সিংহ বলেন, “আমরা পাকিস্তানের হাতে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ তুলে দেব। কোন কোন ওয়েবসাইটে পাকিস্তান থেকে ভুয়ো ছবি-ভিডিও দেওয়া হয়েছে, তা-ও জানানো হবে। বেশ কিছু ছবিতে দু’একটি সংগঠনের নাম মিলেছে।” সাইবার-ছায়াযুদ্ধ রুখতে সার্ট-ইন (কম্পিউটার এমার্জেন্সি রেসপন্স টিম)-কেও কাজে লাগাচ্ছে কেন্দ্র। পাকিস্তান থেকে কী ভাবে ভারতবিরোধী সাইবার-ছায়াযুদ্ধ চলছে, তার প্রমাণ আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তুলে ধরা হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.