বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলছিলই। সোমবার সকাল থেকে যেন আকাশ ভেঙেই চলল বর্ষণ। আর সেই অঝোর বৃষ্টিতে ভিজেই ঈদের উৎসবে মাতল কলকাতা।
সকাল থেকে মসজিদে মসজিদে সমবেত প্রার্থনা। বাহারি আলোয় সেজে উঠেছে ঘরবাড়ি, ধর্মস্থান। ছুটির আমেজ নগরময়। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় শুধু খুশি খুশি মুখ।
মুষলধারায় বৃষ্টি নেমেছিল সকালেই। তারই মধ্যে নতুন পাটভাঙা কুর্তা-পাজামা ভিজিয়ে রেড রোডে ঈদের জমায়েতে সামিল হন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বললেন, “দুর্গাপুজো আর বকরি ঈদ এ বার একই সময়ে পড়েছে। আমরা সবাই মিলেমিশে দুই উৎসবই পালন করব।” সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়নে রাজ্য সরকারের কয়েকটি পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। জানান, মুসলিম যুব সম্প্রদায়ের জন্য জেলায় ‘মাইনরিটি কমপ্লেক্স’ তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে। সরকারি চাকরির খবরাখবর জেলা স্তর থেকেও পাওয়া যাবে। |
বৃষ্টি উপেক্ষা করে রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: অশোক মজুমদার |
সংখ্যালঘু বেকারদের জন্য স্বরোজগারের নতুন ব্যবস্থার চিন্তাভাবনাও রয়েছে রাজ্য সরকারের। সংখ্যালঘু উন্নয়নে সরকারি বরাদ্দ বৃদ্ধির কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
সকালের নমাজের পরে অনিঃশেষ কোলাকুলি। নাখোদা মসজিদ, টিপু সুলতান মসজিদে বিশেষ প্রার্থনা। বেলা গড়াতেই একবালপুর, মোমিনপুর, খিদিরপুর, মেটিয়াবুরুজ, গার্ডেনরিচের এ-দিক, ও-দিকের অলিগলিতে বিরিয়ানি, লাচ্ছা পরোটা, মাংসের খুশবু। বড় হাঁড়িতে খাবারদাবার রাখা ছিল অতিথি আপ্যায়নের জন্য। ঘি-দুধের মিশেলে তৈরি সেমুইয়ে মশগুল আট থেকে আশি। দিনভর আড্ডা আত্মীয়, বন্ধুদের। পাড়ার মোড়ের ক্লাবে ক্লাবে ক্যারমের আসর। সঙ্গে সাউন্ডবক্সে বলিউডি গান। শহরের মাল্টিপ্লেক্সে সলমন খানের নতুন ছবি দেখার ভিড়। দুপুর থেকেই ‘হাউসফুল’ মধ্য কলকাতার প্রায় সব সিনেমা হলেই।
নতুন পোশাক, নতুন টুপি। উৎসবের উচ্ছলতায় এগিয়ে যেন ছোটরাই। বড়দের ঈদ মুবারক জানানোর পরে ‘পরবি’ (টাকা) পেয়েই ছুটল তারা ফুচকা, তেলেভাজার দোকানে। খুদে মেয়েদের হাতে সদ্য কেনা লিপস্টিক, পাউডার, নেলপালিশ, মেহেন্দির রং। নতুন জামাকাপড়ে রাত পর্যন্ত অনাবিল উচ্ছ্বাসে মেতে থাকল তারা।
বড়কর্তাদের মৌখিক নির্দেশে এ বার ঈদে ‘সামিল’ পুলিশও। সাতসকালেই জেলার মসজিদে মসজিদে ফুল, মিষ্টি নিয়ে হাজির থানার ওসি, আইসি-রা। ইমামদের হাতে তো বটেই, নমাজে যোগ দিতে আসা আরও অনেকের হাতেই ফুল, মিষ্টি তুলে দেন তাঁরা।
পরবের ছুটিতে অফিসপাড়া অবশ্য সুনসান। সপ্তাহের প্রথম দিনের চেনা ভিড় উধাও শিয়ালদহ আর হাওড়া স্টেশন চত্বরেও। প্রায় ফাঁকাই ঘুরল হাতে গোনা বাস, ট্রাম। |