বছর দশেক আগে মূলত স্থানীয় ট্রাক মালিক ও বেকারদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে গড়া হয়েছিল ট্রাক মালিকদের সংগঠন ‘কাঁকসা ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’। অভিযোগ, ওই সংস্থা বেকারদের কাজ করিয়ে ঠিকঠাক বেতন ও অন্য সুবিধা দিচ্ছে না। দুর্গাপুরের ডেপুটি লেবার কমিশনারের শরণাপন্ন হয়েছেন এখানকার এক কর্মী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মী অভিযোগের ব্যাপারে সহমত পোষণ করেছেন। ডেপুটি লেবার কমিশনারের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্রুত ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের ডেকে কৈফিয়ত তলব করা হবে। সংস্থার কর্মকর্তারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসার ইপিআইপি লাগোয়া একটি বেসরকারি সিমেন্ট কারখানাকে কেন্দ্র করে ২০০১-এর ডিসেম্বরে গড়ে ওঠে কাঁকসা ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। সিমেন্ট কারখানার পরিবহণের কাজে যাতে স্থানীয় ট্রাক মালিকেরা সুবিধা পান, সেই সঙ্গে এলাকার বেকাররা কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতেই গড়ে ওঠে সংস্থাটি। কিন্তু পরের দিকে ওই সংস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। অভিযোগ, এখানে দীর্ঘ দিন ধরে কর্মরত কর্মীদের কোনও স্বীকৃতি নেই। নেই পিএফ, ইএসআই, ছুটির ব্যবস্থা। বেতন দিলেও কোনও ‘পে স্লিপ’ দেওয়া হয় না। সই করানো হয় না ভাউচারেও। খাতায় কলমে এখানকার কর্মী সংখ্যা ৭ জন। কিন্তু এর বাইরেও অনেকে আছেন যাঁরা কাজ করেন এই সংস্থায়। কর্মীরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের ছাঁটাই করার হুমকি দেওয়া হয়, এমনকী বেতনও আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তাই সামনাসামনি কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না বলে দাবি তাঁদের।
এখানকার কর্মী, কাঁকসা থানার খাঁটগোড়িয়ার বাসিন্দা মোহিত মণ্ডলের অভিযোগ, “গত দুই বছর ধরে এখানে কাজ করি। কিন্তু পরিচয়পত্র, পিএফ, ইএসআই-এর সুবিধা এখনও মেলেনি।” তাঁর আরও অভিযোগ, “প্রতিবাদ করায় এপ্রিল মাসে আমাকে কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দুই মাস বেতন দেওয়া হয়নি।” পরে শ্রমিক সংগঠনের এক নেতাকে ধরে তিনি বেতন আদায় করেন বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, “দিনে সিমেন্ট কারখানায় গড়ে দু’শোরও বেশি ট্রাক ‘লোডিং’ করা হয়। প্রতিটি ৬ চাকার ট্রাক পিছু ২০ টাকা এবং ১০ চাকার ট্রাক পিছু ৫০ টাকা নেয় সংস্থা। সেই অর্থ দিয়ে ঠিক কি হয় কেউ জানে না। অনেক সদস্য পরিবারের বাকিদের নামেও সদস্যপদ করিয়ে নিয়েছে। মূলত সদস্যদের পারিবারিক রোজগারের অন্যতম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে সংস্থাটি।” তিনি জানান, বিষয়টি লিখিত ভাবে দুর্গাপুরের ডেপুটি লেবার কমিশনারকে জানিয়েছেন। ডেপুটি লেবার কমিশনারের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে কৈফিয়ত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ রকা হবে।
কাঁকসা ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এর কর্মকর্তারা অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সংস্থার সম্পাদক সনৎ মণ্ডল জানান, সংস্থার বর্তমান সদস্য সংখ্যা ১৬০ জন। প্রত্যেকেই ট্রাকের মালিক। তাঁর দাবি, “ওই সিমেন্ট কারখানায় অনুমোদিত ৬টি পরিবহণ সংস্থায় আমাদের ট্রাকগুলি খাটে। সংস্থার কাজকর্ম চালানোর খরচ তুলতে ও এখানকার কর্মীদের বেতন মেটাতে নিজেদের ট্রাক থেকেই সামান্য পরিমাণ অর্থ নিয়ে থাকি।” তবে কর্মীদের ঠিকঠাক বেতন বা অন্য সুবিধা না দেওয়ার অভিযোগ তিনি স্বীকার করতে চাননি। তাঁর দাবি, “ট্রাক মালিকদের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি এলাকার বেকারদের কাজের সুযোগ করে দিতেই সোসাইটি আইনে সংস্থাটি আমরা গড়েছি। যা করা হয় সেই আইন মেনেই করা হয়।” |