দুর্ঘটনার পরে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফের ধসের আতঙ্ক পরাশকোলে। ছাই দিয়ে ভরাট করা এলাকায় আবার ধস নামল সোমবার ভোরে। ফাটল ধরেছে সংলগ্ন একটি বাড়ির দেওয়ালেও। যেখানে এই ধস নেমেছে, গত বছর জুলাইয়ে সেই এলাকাতেই ছাই ধসে সন্তান-সহ তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল দুই যুবকের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন ভোরের দিকে ধস নামার আওয়াজ পান আশপাশের বাসিন্দারা। সকালে দেখা যায়, গ্রামের দিকেই ছাই দিয়ে ভরাট করা এলাকায় প্রায় পঁচিশ ফুট ব্যাস ও দশ ফুট গভীর একটি জায়গা বসে গিয়েছে। যেখানে ধস নেমেছে তার কুড়ি ফুট দূরেই মানুষজনের বাস। কাছেই একটি বাড়ির দেওয়ালেও ফাটল নজরে পড়ে। খবর পেয়ে ইসিএলের তরফে ওই এলাকায় নিরপত্তারক্ষী পাঠানো হয়।
এই ঘটনার পরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকায়। গত বছর এক বিকেলে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বেড়ানোর সময়ে ছাই ধসে তলিয়ে গিয়েছিলেন বাবন বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারক বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এলাকার দুই যুবক। রাতভর মাটি কাটার পরে সকালে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনার পরে ইসিএলের ধস ভরাটের পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন বাসিন্দারা। ইসিএলের তরফে এলাকাটি তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছিল। সেই বেড়ার অনেকটা অংশই অবশ্য এখন উধাও। এ দিন ফের ধস নামার পরে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। তারকবাবুর কাকা অনিল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “ধস নামা এলাকা ছাই দিয়ে ভরাট করা হলে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর ফের ছাই-ভরাট করতে হয়। এখানে তা করা হয়নি। তাই ফের ধস নামছে।” |
পরাশকোল ইসিএলের যে এরিয়ার অন্তর্গত, সেই কাজোড়ার জেনারেল ম্যানেজার নারায়ণ দাস বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, ভরাট করা ছাইয়ের মধ্যে বর্ষার জল ঢুকেছে। তার ফলেই এমন ধস নেমেছে। তবে এর পিছনে অন্য কোনও কারণ আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “ওই এলাকা যে বিপজ্জনক তা আমরা আগেই ঘোষণা করেছি। সেখানে কাউকে যেতে বারণ করে বিজ্ঞপ্তি বোর্ডও টাঙানো হয়েছে। পুরো জায়গাটি বেড়া দিয়ে দেওয়া হবে। মাটি ভরাটও করা হবে।”
এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও। আসানসোলের সিপিএম সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, “ওই এলাকায় তৃণমূলের নেতৃত্বে অবৈধ খনন চলছে। তার জেরেই এমন ঘটনা বলে আমরা মনে করছি।” অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্রের পাল্টা দাবি, “বাম জমানায় এখানে এত অবৈধ খনন হয়েছিল যে শেষ পর্যন্ত ইসিএল কয়লা কেটে নিয়ে এলাকা ভরাট করার কাজে নামতে বাধ্য হয়। সেই সময়ে কাদের নেতৃত্বে অবৈধ খনন হয়েছে, তা সাংসদ নিশ্চয়ই জানেন।” কাজোড়া এরিয়ার জিএম নারায়ণবাবুর দাবি, বর্তমানে এই এলাকায় অবৈধ খনন হচ্ছে বলে তাঁর অন্তত জানা নেই। তাঁর কথায়, “যা হওয়ার তা আগেই হয়েছে। তার জেরে মাটির তলা ফাঁপা হয়ে রয়েছে। বারবার ধসের পিছনে সেটিও অন্যতম কারণ হেতে পারে।” |