সরকারি গুদামে মজুত থাকা সত্ত্বেও চড়া দামে খোলাবাজার থেকে স্যালাইনের পাইপ এবং ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ কেনার অভিযোগ উঠেছে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। গত বছর কেনা স্যালাইনের পাইপ এবং চলতি মাসে ইঞ্জেকশন সিরিঞ্জ কেনার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। অথচ সরকারি মজুত থেকে এই সরঞ্জামগুলি সংগ্রহ করলে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও খরচই লাগত না বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, ৩ অগস্ট সরকারি মজুতে ১৮ হাজার সিরিঞ্জ মজুত থাকলেও গত ৭ অগস্ট খোলাবাজার থেকে ১০ হাজার সিরিঞ্জ কিনেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সিরিঞ্জ কেনার পরেই সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোলাবাজার থেকে প্রায় সত্তর হাজার টাকার গজ কাপড় কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সরকারি গুদামে গজ কাপড় যথেষ্ট পরিমাণে মজুত ছিল। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পরে জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাইরে থেকে গজ কাপড় কেনার বরাত বাতিল করার নির্দেশ দেন। যদিও জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “অসত্য অভিযোগ। অনেক সময়েই সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ওষুধ বা সরঞ্জাম থাকে না। সে কারণে বাইরে থেকে কিনতে হয়। এর পেছনে অন্য কোনও কারণ নেই।” হাসপাতাল সরঞ্জামগুলি যখন কিনেছে তখন জেলার গুদামে সরঞ্জাম মজুত থাকা প্রসঙ্গে সুপার বলেন, “হাসপাতাল চালানোর মতো মজুত সবসময়েই তৈরি রাখতে হয়।” কেন অস্বচ্ছতার প্রশ্ন? নিয়ম অনুযায়ী জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করার জন্য সেই জেলারই স্বাস্থ্য দফতর কেন্দ্রীয় ভাবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের তালিকাভুক্ত বিভিন্ন সংস্থার থেকে ওষুধ এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনে। এই খাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরই জেলাকে টাকা বরাদ্দ করে। জেলার কেনা ওষুধই ডিআরএস তথা ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ স্টোর বা গুদামে রেখে, জেলার সব হাসপাতালে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। কোনও কারণে জেলার মজুতে ওষুধ বা চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুত না থাকলে তবেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ভাবে জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ কিনতে পারে। তবে জেলার সরকারি মজুতে কোনও ওষুধ বা সরঞ্জাম মজুত থাকলে সেই জিনিসটি কোনও ভাবেই খোলাবাজার থেকে কেনার নিয়ম নেই। এ ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙা হয়েছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি একটি হিসেব পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, গত বছর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বাজার থেকে প্রায় ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকার স্যালাইন কিট কেনেন। যে সময়ে এই স্যালাইন কিট কেনা হয়েছিল তখন জেলায় যথেষ্ট স্যালাইন কিট মজুত ছিল বলে অভিযোগ। অভিযোগ গিয়েছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেও। জেলা দফতর থেকে তদন্তের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “খোঁজ নিয়ে দেখছি।” স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি সুব্রত সরকার বলেন, “যে সরঞ্জাম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিনামূল্যে পেত তা কিনতেই লক্ষাধিক টাকা করেন খরচ করা হল তার জবাব দিতে হবে। এর পেছনে কী উদ্দেশ্য, তাও সামনে আসা উচিত।” |