পিঠে আস্ত একটা খুন্তি বেঁধা অবস্থায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়েছিল তিন বছরের মেয়েটিকে। সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেও ‘রেফার’ না করে খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই জটিল অস্ত্রোপচার করে খুন্তিটি বার করলেন চিকিৎসকেরা। আপাতত বিপন্মুক্ত মেদিনীপুর কোতয়ালি থানা এলাকার বেঙ্গাই গ্রামের ছোট্ট রাখি। তার বাবাই পিঠে খুন্তি বিঁধে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। ঘটনার পর থেকেই পলাতক মানসিক ভারসাম্য হারানো বাবা তিরকা মুন্ডা। থানায় অবশ্য অভিযোগ জানায়নি ওই পরিবার। |
বুধবার রাতে ‘সফল’ ওই অস্ত্রোপচারের পরে স্বস্তির হাসি চিকিৎসকদের মুখে। চিকিৎসক দলের নেতৃত্বে থাকা মৃত্যুঞ্জয় পাল জানান, এক ফুটেরও বেশি লম্বা খুন্তিটি ‘লিভার’ ক্ষত করে ‘ডায়াফ্রাম’ ফাটিয়ে পেটে গিয়ে আঘাত করেছিল। খুন্তি বার করার পাশাপাশি ‘লিভার’ ও ‘ডায়াফ্রামের’ ক্ষত সারানোসব মিলিয়ে জটিল এই অস্ত্রোপচারে মেয়েটির প্রাণের ঝুঁকি ছিলই। মৃত্যুঞ্জয়বাবু বলেন, “ঝুঁকি থাকায় এই ধরনের অস্ত্রোপচার সাধারণত কলকাতায় রেফার করা হয়। কিন্তু দরিদ্র ওই পরিবারের কলকাতায় যাওয়ার সামর্থ্য নেই। তাই পরিবারের অনুমতি নিয়ে আমরাই অস্ত্রোপচার করি।” মৃত্যুঞ্জয়বাবুর সঙ্গে অপারেশন টেবিলে ছিলেন মালা মিস্ত্রি, আনসার আহমেদ, জীবন কর্মকাররা। তাঁরা জানান, অজ্ঞান করার কাজটাও কঠিন ছিল। পিঠে আঘাত হওয়ায় উল্টোদিকে শুইয়ে অজ্ঞান করতে হয়েছে ওই শিশুকন্যাকে।
রাখির সঙ্গে থাকা পড়শিরা জানান, বেঙ্গাই গ্রামের তিরকা ও রুনুর এক ছেলে, এক মেয়ে। বছর দু’য়েক আগে অবসাদ থেকে মানসিক ভারসাম্য হারান তিরকা। তখন থেকেই দিনমজুরি করে সংসার চালাচ্ছিলেন রুনু। বুধবারও ছেলে, মেয়েকে স্বামীর কাছে রেখে কাজে বেরিয়ে যান তিনি। বিকেলে মুড়ি খাওয়ার সময় তিরকা তাঁর মেয়ের পিঠে খুন্তি বিঁধে দেন বলে অভিযোগ। পাঁচ বছরের ছেলের চিৎকারে ছুটে আসেন পড়শিরা। রাখিকে নিয়ে যাওয়া হয় মেদিনীপুর মেডিক্যালে। প্রতিবেশী বসন্ত রানার কথায়, “ছোট্ট মেয়েটার শরীরে খুন্তি দিয়ে এফোঁড়-ওফোড় করা ছিল। যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল ও।” রাখির দিদিমা জ্যোৎস্নাদেবীর কথায়, “কিছুদিন ধরেই ওর বাবার মাথাটা গোলমাল করছিল। না হলে কেউ এত বড় খুন্তি সন্তানের পিঠে ঢুকিয়ে দিতে পারে!” |