রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা বরাবরই হকার উচ্ছেদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে। আর এ বার হকারদের জীবিকা সুনিশ্চিত করতে যে বিল আনতে চলেছে কেন্দ্র, তাতে শহরের ব্যস্ত রাস্তা থেকে হকার উচ্ছেদ আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলেই মত নানা মহলে। হকারদের জীবিকা সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি শহরে হকারি নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রস্তাবিত ওই বিলে কাল অনুমোদন দিতে চলেছে মনমোহন মন্ত্রিসভা।
কেন্দ্রের ওই বিল পাশ হলে শহরের হকারেরা যেমন বৈধতা পাবেন, তেমনই লাইসেন্স-রাজের থেকে মুক্তি পাবেন তাঁরা। সেই সঙ্গে তাঁদের ব্যবসায় ঋণ পাওয়ার সুবিধা, স্বাস্থ্য বিমা-সহ সামাজিক সুরক্ষার দিকটিও সুনিশ্চিত করতে চাইছে কেন্দ্র। এমনকী, এর পরে রাজ্য সরকার বা সংশ্লিষ্ট পুরসভা চাইলেই পুলিশ দিয়ে তাদের আর উচ্ছেদ করতে পারবে না। কেন্দ্রের এই প্রস্তাবিত বিল নিয়ে উৎসাহী সর্বভারতীয় হকার সংগঠন। বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিতে কেন বিলম্ব হচ্ছে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করে সে ব্যাপারে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন হকার সংগঠনের নেতারা। |
তবে প্রস্তাবিত বিলটি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সরকারের মধ্যেই মন্ত্রী-আমলাদের একাংশ। তাঁদের মতে, মহানগরগুলির ব্যস্ত রাস্তায় ইতিমধ্যে যে সব হকারেরা ব্যবসা করছেন, প্রয়োজনে সেখান থেকে তাঁদের উচ্ছেদ করা আর সহজ হবে না। কারণ প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী, প্রতিটি শহরে বাধ্যতামূলক ভাবে স্ট্রিট ভেন্ডিং কমিটি গঠন করতে হবে। সেটিতে হকারদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে চল্লিশ শতাংশ। কেন্দ্রীয় আবাসন ও শহরের দারিদ্র দূরীকরণ মন্ত্রকের এক আমলার কথায়, “এমনিতেই হকার উচ্ছেদ করতে গেলে রাজনৈতিক বাধা আসে। কমিটিতে হকারদের ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব রাখায় তারা আরও বল পাবেন।” তিনি আরও বলেন, এটা ঠিকই যে শহরের কোথায় কোথায় এবং কখন হকারি করা যাবে, বিল অনুযায়ী তা নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে ভেন্ডিং কমিটির হাতে। কিন্তু এটা বোঝাই যাচ্ছে যে, ব্যস্ত রাস্তা থেকে হকারেরা এর পরে আর কোনও ভাবেই সরতে চাইবেন না। নিজেদের সুবিধা মতো হকারির সময় নির্ধারণের জন্যও চাপ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়বে তাঁদের। তা ছাড়া, প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী ওই হকারদের নাম সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করা হবে। তাঁদের সরকারি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তাদের কাছ থেকেও ‘ফি’ আদায় করবে পুরসভা। ফলে পাকাপোক্ত ভাবে তাঁরা থেকে যাওয়ার একটি ক্ষেত্র তৈরি হতে চলেছে।
বস্তুত ২০০৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই জাতীয় হকার-নীতি প্রণয়ন করেছিল মনমোহন সিংহ সরকার। পরবর্তী কালে ২০০৯ সালে সেই নীতির সংশোধন করা হয়। কিন্তু হকারদের জীবিকা সুনিশ্চিত করার ব্যাপারে এর মাঝেই হস্তক্ষেপ করেন সনিয়া গাঁধীর নেতৃত্বে জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদ। সর্বোচ্চ আদালতও সরকারকে জানিয়ে দেয়, হকার-নীতিকে আইনে রূপান্তরিত করা হোক। আদালতের সেই রায়ের পরে উপদেষ্টা পরিষদের তরফে আরও বেশি করে চাপ আসে সরকারের উপরে। অবশেষে প্রস্তাবিত বিলটির খসড়া তৈরি করে কেন্দ্রীয় আবাসন ও শহরের দারিদ্র দূরীকরণ মন্ত্রক।
সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত বিল অনুযায়ী বৈধ হকারদের সুরক্ষার জন্য শহর এলাকায় একটি স্থায়ী কমিটি গঠন করা হবে। তাতে এক জন ম্যাজিস্ট্রেটও থাকবেন। কোনও বৈধ হকারের ব্যবসা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হলে ওই কমিটিতে তার শুনানি হবে। জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য হর্ষ মন্দারের কথায়, “কেন্দ্রের বিল নিয়ে পরিষদ সন্তুষ্ট। এর ফলে দেশের বহু লক্ষ হকারের জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হবে। সেই সঙ্গে লাইসেন্স-রাজ ও অযথা হেনস্থা থেকে মুক্তি পাবেন তাঁরা।” |