হামলার গুজব শুনে দক্ষিণ ভারত থেকে পালাচ্ছেন উত্তর-পূর্বের শিক্ষার্থী ও কর্মীরা। সরকারি আশ্বাসেও তাঁদের আতঙ্ক কাটছে না।
অসমের গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে দক্ষিণ ভারতে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের উপরে হামলা হচ্ছে বলে খবর ছড়িয়েছে এসএমএস ও অন্য মাধ্যমে। তা-ই কর্ণাটক-সহ দক্ষিণের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পালানো শুরু করেছেন উত্তর-পূর্বের বাসিন্দারা।
হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু, সেকেন্দ্রাবাদ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার অসমীয় ছাত্র ও কর্মী গুয়াহাটি বা হাওড়া ফিরেছেন। বেঙ্গালুরু স্টেশনে অন্তত হাজার পাঁচেক উত্তর-পূর্বের যাত্রী ভিড় করে আছেন। তাঁদের আনতে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পরিস্থিতি সামলাতে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। পাশাপাশি উত্তর-পূর্বের সাংসদদের সঙ্গে কথা বলেছেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। কেন্দ্রের বক্তব্য, গুজব ছড়ানো হচ্ছে। যে ভাবেই হোক তা বন্ধ করতে হবে।
কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ সেত্তারের সঙ্গে কথা বলেন অসম, অরুণাচল, নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রীরাও। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের বক্তব্য, “অন্য রাজ্যে কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা হলেও বড় কিছু ঘটেনি। অসমের শিক্ষার্থী ও কর্মীদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই।” বেঙ্গালুরুতে স্টেশনের ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেম” থেকে উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর অশোক। |
আজ একটি মামলার শুনানির সময়ে এই বিষয়টি প্রশ্ন তুলেছেন কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিক্রমজিৎ সেনও। অ্যাডভোকেট জেনারেল এস বিজয় শঙ্কর জানান, হামলার গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
কিন্তু, এই আশ্বাসে আতঙ্ক কাটছে না। বরং সরকার তেমন কিছুই ঘটেনি বলায় ক্ষুব্ধ উত্তর-পূর্বের অনেকে। গুয়াহাটি স্টেশনে হায়দরাবাদ থেকে আসা অসমীয়দের অভিযোগ, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা তাদের রাজ্য ছাড়ার হুমকি দিয়ে যায়। এক অসমীয় নিরাপত্তারক্ষীকে মারধরও করা হয়েছে। এরপর তাঁরা থাকার ভরসা পাচ্ছিলেন না। পুলিশও কোনও সাহায্য করেনি।
গত কাল অন্ধ্রের পালাসা ও সিম্পাত স্টেশনের মধ্যে কোকরাঝাড়ের বাসিন্দা সঞ্জয় রায়কে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় আগুনে ঘি পড়ে। অল কোচ রাজবংশী ছাত্র সংগঠনের অভিযোগ, ৭ অগস্ট খনিন রায় নামে কোকরাঝাড়ের ডিমালগাঁওয়ের বাসিন্দাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গতকাল সঞ্জয়, কৈলাশ রায় ও দীপক রায় সিম্পাত থেকে খনিনকে নিয়ে তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেসে ফিরছিলেন। তখনই চলন্ত ট্রেন থেকে সঞ্জয়বাবু পড়ে যান। অল কোচ রাজবংশী ছাত্র সংগঠনের দাবি, তাঁকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
সঞ্জয়ের মৃত্যুর খবর চাউর হতেই পালানোর হিড়িক বেড়েছে। মূলত সিদ্দিক নগর ও আঞ্জাইয়া নগরে বহিরাগতদের বাস। অধিকাংশই নিরাপত্তারক্ষী ও পিওনের কাজ করেন। দুই জায়গাতেই পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। গুয়াহাটি ফেরা যুবকেরা জানান, ৭০ শতাংশ অসমীয়ই পালিয়ে গিয়েছেন। কেউ কাউকে আক্রমণের করেছে তেমনটা কেউই দেখেননি। কিন্তু, লোকমুখে ও এসএমএস-এর মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। ‘জয়েন্ট স্টুডেন্ট্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র ক্ষোভ, পুণেতে ছাত্ররা মার খাচ্ছে। অথচ কেন্দ্র বলছে তেমন কিছুই ঘটেনি। পুণের আঞ্জুমন খইরুল ইসলাম কলেজের মণিপুরি ছাত্র প্রেমানন্দ খোমদ্রাম ইম্ফলে ফিরে এসেছেন। তাঁর দাবি, কলেজের কিছু ছাত্র তাঁকে অসমের বাসিন্দা বলে মারধর করেছে। আবার পার্টটাইম চাকরি সেরে ফেরার পথেও লাঠি নিয়ে কয়েক জন তাঁর উপরে চড়াও হয়। ভিন রাজ্যে অসমীয়রা হুমকির মুখে পড়ার প্রতিবাদে আজ আলোচনাপন্থী আলফা অসমে বহিরাগত সংস্থাগুলির কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আলোচনাপন্থী আলফা নেতাদের মতে, রাজ্য অনুপ্রবেশ রুখতে না পারার ফলেই এই ঘটনা। |