রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাব যে আর্থিক বৃদ্ধির পথে বড় বাধা, গত কাল স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সে কথা উল্লেখ করেছিলেন। আজ শুধু তার পুনরাবৃত্তিই করলেন না, তার ব্যাখ্যাও করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। সরকারের শরিকদের মধ্যেও যে মতান্তর রয়েছে, উল্লেখ করলেন সে কথাও। তবে শুধু সমস্যার কথা বলাই নয়, তা সমাধানের লক্ষ্যেও পদক্ষেপ করতে চাইছেন তিনি। সে কারণেই সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শরিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য তিনি কলকাতায় পাঠাচ্ছেন এ কে অ্যান্টনিকে। |
দিন কয়েকের মধ্যেই ফের বৈঠকে বসছে ইউপিএ-র সমন্বয় কমিটি। তার আগে গুরুত্বপূর্ণ শরিকদের সঙ্গে সেই সমন্বয়ের পথই ‘মসৃণ’ করতে তৎপর কেন্দ্র। সে জন্যই আগামী পরশু, ১৮ তারিখ প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যান্টনি কলকাতায় আসছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে অ্যান্টনিই এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অলিখিত দু’নম্বর। এই দু’নম্বর হতে না পারার জন্য আবার এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার কংগ্রেসের উপরে ক্ষুব্ধ। একই সঙ্গে তিনি ক্ষুব্ধ সুশীলকুমার শিন্দেকে লোকসভার নেতা করার জন্যও। সেই ক্ষোভের কথা তিনি কংগ্রেস নেতৃত্বকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি অন্য শরিকদেরও নিজের দিকে টানার চেষ্টা করছেন। আজ পওয়ারের দূত হিসেবে প্রফুল্ল পটেল এসে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী যতই সম্পর্ক মসৃণ করার চেষ্টা করুন, রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন, সেই পথে এখনও বিস্তর কাঁটা।
রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, সমন্বয় কমিটির বৈঠকে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ, ফরওয়ার্ড ট্রেডিংয়ের মতো বিষয়গুলি নিয়েও আলোচনা হবে। এই সমস্ত ক্ষেত্রে মমতার আপত্তি সুবিদিত। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যখন আর্থিক সঙ্কট সামাল দেওয়াকে প্রধানমন্ত্রীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন, তখন এই বিষয়গুলির গুরুত্ব অপরিসীম। বৈঠকের আগে অ্যান্টনি তাই আসছেন এই নিয়ে মমতাকে বোঝানোর জন্য।
প্রধানমন্ত্রী এত উদ্বিগ্ন কেন?
রাজধানীতে এক ইফতার পার্টিতে মনমোহন এ দিন বলেছেন, ৯ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে গেলে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলিকে একযোগে কাজ করতে হবে। আর ৯ শতাংশ বৃদ্ধি না হলে দেশে নতুন চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগই তৈরি করা যাবে না। জাতীয় উন্নতির প্রশ্নকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাতীয় দলগুলি যাতে একজোট হয়ে কাজ করতে পারে, তেমন একটি বাতাবরণ তৈরি করাই তাঁর লক্ষ্য বলে জানান মনমোহন। খুচরোয় বিদেশি বিনিয়োগ মূলত তৃণমূলের আপত্তিতেই আটকে রয়েছে। তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর, “আমি কোনও মন্তব্য করব না। সংসদ চলছে।” |
প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের খবর, সমন্বয় কমিটির বৈঠকে মমতা উপস্থিত থাকবেন। তিনি তাঁর দিল্লিতে থাকার কয়েকটি সম্ভাব্য তারিখ জানিয়েছেন। বস্তুত, ওই বৈঠকে মমতার উপস্থিতি কার্যকর ভূমিকা নেবে বলে শরদ পওয়ারও যে মনে করছেন, তা এ দিন কলকাতায় জানিয়েছেন প্রফুল্ল পটেল। মমতার সঙ্গে এ দিন তাঁর খুচরোয় বিদেশি লগ্নি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে বলে জানিয়ে প্রফুল্ল বলেন, “এই দু’টি বিষয়ে যে ভাবে কংগ্রেস একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে, এনসিপি তার বিরোধী। তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এটা জোটের পক্ষে মারাত্মক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তা মানেন। এ নিয়ে তিনিও বারবার প্রতিবাদ জানিয়েছেন।”
বস্তুত, গত মাসে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের রাষ্ট্রপতি পদে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কলকাতায় ফিরেই তেলের দাম বৃদ্ধির খবর পেয়েছিলেন মমতা। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী সে দিন অভিযোগ করেছিলেন, দিল্লিতে থাকা
সত্ত্বেও তাঁদের এ ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, মমতার এই অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে কংগ্রেসকে মিলিত শরিকি চাপের মুখে ফেলতে চাইছেন পওয়ার। প্রফুল্ল তাই বলেছেন, “আগামী দিনে এই বিষয়গুলিতে কংগ্রেস যাতে একা কোনও সিদ্ধান্ত নিতে না-পারে, সে ব্যাপারে আমরা সব শরিক মিলে চাপ দেব। ওই বৈঠকে মমতা থাকলে যে সম্মিলিত ভাবে শরিকদের পক্ষে ভাল, সেটা পওয়ারও মানেন।”
রাজনৈতিক কথাবার্তার ফাঁকেই প্রফুল্ল জানাতে ভোলেননি, কলকাতার সঙ্গে তাঁর ‘নাড়ির যোগ’। ১৯৫৭ সালে ভবানীপুরে জন্ম তাঁর। তাৎপর্যপূর্ণ এই যে, ভবানীপুর খোদ মুখ্যমন্ত্রীর বিধানসভা কেন্দ্র! |