মালদহের চাঁচলের ডমনভিটা এলাকায় কালাজ্বরে আক্রান্ত ৯ বছরের বালিকা দুকড়ি মাঝির চিকিৎসা শুরু করল স্বাস্থ্য দফতর। শুক্রবার সকালে গাড়ি পাঠিয়ে দুকড়ি ও তার মা লোহারি দেবীকে মালতিপুরে চাঁচল-২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে কালাজ্বরের প্রতিষেধক ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। জেলার অন্য একটি হাসপাতাল থেকে ওই প্রতিষেধক নিয়ে আসা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। তবে স্বাস্থ্যকর্তারা চাইলেও পারিবারিক সমস্যার কথা জানিয়ে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে থাকতে রাজি হননি লোহারি দেবী। ফলে দুকড়িকে তার বাড়িতে গিয়েই বাকি ২৭টি প্রতিযেধক খাওয়ানো হবে বলে স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন। পাশাপাশি, এ দিন দুপুরে একজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে ৫ জন স্বাস্থ্যকর্মী ওই এলাকায় যান। তাঁরা প্রতিটি বাড়িতে ঘুরে জ্বরে আক্রান্তদের পরীক্ষা করেন। তবে এলাকাটি কালাজ্বর প্রবণ এলাকা বলে পরিচিত হলেও পানীয় জল, রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তারা। |
চাঁচলের মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন বিশ্বাস বলেন, “জেলার মোথাবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কালাজ্বরের প্রতিষেধক মিল্টেফোসিন মিলেছে। দুকড়িকে হাসপাতালে ভর্তি করেই চিকিৎসা করানোর পরিকল্পনা হয়। ওর মা ওকে হাসপাতালে না রেখে বাড়িতেই চিকিৎসা করাবেন বলে জানিয়েছেন। এলাকায় চিকিৎসক-সহ স্বাস্থ্যকর্মীদের পাঠানো হয়েছে। রোগ যাতে না ছড়ায় সেজন্য সপ্তাহে একদিন করে স্বাস্থ্য শিবিরের পরিকল্পনা হয়েছে।”
দুকড়ির মা বলেন, “মেয়ের চিকিৎসার জন্য ৩টি হাসপাতালে হন্যে হয়ে ঘুরেও ওষুধ মেলেনি। মেয়েটা মরতে বসেছিল। এদিন ওকে ওষুধ দেওয়া হয়। হাসপাতালে থাকলে ভাল হত। বাড়িতে ৪ ছেলেমেয়ে রয়েছে। বড় ছেলেরও জ্বর। ওদের কে দেখবে। আমি ছোট মেয়ের সঙ্গে থাকলে ওরা কী খাবে।” ২০০২ সালে কালাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান দুকড়ির বাবা ফিটকালু মাঝি। দুকড়িও কালাজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরে বেরিয়েছেন লোহারি দেবী। কোথাও ওষুধ মেলেনি বলে অভিযোগ। এদিন ঘটনার কথা চাউর হতেই স্বাস্থ্য কর্তাদের মধ্যে হইচই পড়ে যায়। জেলার অন্য একটি হাসপাতাল থেকে প্রতিষেধক জোগাড় করে দুকড়িকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। দুপুরে এলাকায় যান চাঁচল-২ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক দেবর্ষি সেনগুপ্তের নেতৃত্বে ৫ স্বাস্থ্যকর্মী। দেবর্ষিবাবু বলেন, “এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই মশারি ছাড়া ঘুমোন। এ ছাড়া বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। যত্রতত্র খানাখন্দে নোংরা দূষিত জল জমে রয়েছে। ফিরে গিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট দেব।” ২০০২ সালে এলাকায় ব্যাপক ভাবে কালাজ্বর ছড়ানোর পরে নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। আদিবাসী অধ্যুষিত ওই এলাকাটি ফের নরকতুল্য হয়ে উঠেছে বলে স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি বাসিন্দারাও অভিযোগ তুলেছেন। লোহারি দেবীর মতো অধিকাংশ পরিবারই বিপিএল তালিকাভূক্ত। এলাকার ৫টি নলকূপ অকেজো হয়ে রয়েছে। পানীয় জলের পাশাপাশি নোংরা আবর্জনার গন্ধে বেশিক্ষণ টিঁকে থাকা দায়। তারপরও কারও ভ্রূক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ। মালতিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান মিনারুল হোসেন বলেন, “নলকূপ অকেজো হয়ে থাকার কথা জানা নেই। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” চাঁচল-২ ব্লকের বিডিও ভাস্কর মজুমদার বলেন, সমস্যা মেটে তা আমি দেখছি।”
|