রাস্তার খানাখন্দ সংস্কারের দাবি আগে থেকেই ছিল। বুধবার রাস্তার গর্তে পড়ে একটি স্কুল ভ্যান উল্টে গিয়ে খুদে পড়ুয়ারা জখম হওয়ায় বাসিন্দাদের ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। তাঁরা জাতীয় সড়ক ঘণ্টা চারেক ধরে অবরোধ করে রাখলেন। বুধবার সকালে বাঁকুড়া শহরের বিষ্ণুপুর-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জতীয় সড়ক লাগোয়া কেরানিবাঁধে দুর্ঘটনা দু’টি ঘটে। জনা দশেক পড়ুয়ার হাতে-পায়ে কমবেশি চোট লাগে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। রিকশা উল্টে দুই শিশু-সহ এক মহিলা সামান্য জখম হন। পরে পুলিশের আশ্বাসে বাসিন্দারা অবরোধ প্রত্যাহার করেন।
এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ বাঁকুড়া গালর্স স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের পড়ুয়াদের নিয়ে স্কুল ভ্যানটি কেরানিবাঁধে যাচ্ছিল। বাসিন্দারা জানান, একটি বড় গর্তে ভ্যানটি বেসামাল হয়ে রাস্তার পাশে উল্টে যায়। এই ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা পূর্ত দফতরের উপরে চটে ওঠেন। তাঁরা দৌড়ে গিয়ে স্কুলভ্যানে আটকে পড়া পড়ুয়াদের উদ্ধারে হাত লাগান। ঠিক সেই সময়েই কাছেই অন্য একটি গর্তে একটি রিকশা উল্টে যায়। |
রিকশার সওয়ারি এক মহিলা ও তাঁর দুই ছেলে-মেয়ে পড়ে গিয়ে চোট পান। তাঁদেরও বাসিন্দারা উদ্ধার করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়ায় বাসিন্দারা জড়ো হয়ে কেরানিবাঁধ মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু করেন। দু’পাশে সারি দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে মেরামতি না হওয়ায় যান চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে কেরানিবাঁধ এলাকার মেদিনীপুর-রানিগঞ্জ রাস্তা। তাঁরা রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বেশ কয়েকবার জেলা প্রশাসনের দারস্থ হলেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। পরপর দু’টি দুর্ঘটনার পরে বাসিন্দারা অবিলম্বে রাস্তা সারানোর দাবিতে অবরোধ করেন। এই রাস্তা দিয়েই বাঁকুড়া শহরে জেলা ও অন্য জেলার অধিকাংশ গাড়ি আসে। অবরোধের জেরে সেই সব গাড়ি শহরে ঢুকতে পারেনি।
হয়রানির শিকার হন হাজার হাজার মানুষ। অন্য দিকে, অবরোধ শুরু হওয়ার পরে পুলিশ সেখানে পৌঁছলেও অবরোধ না তুলে হাত গুঁটিয়ে বসে থাকে বলে অবরোধে আটকে পড়া যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রশাসনেরই কোনও আধিকারিক কেন সেখানে যাননি, তা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। পরে ঘণ্টা তিনেক পরে বাঁকুড়া সদর থানার আইসি প্রভাত সরকার সেখানে গিয়ে বাসিন্দাদের রাস্তা মেরামতের ব্যাপারে আশ্বাস দেওয়ায় অবরোধ ওঠে। জেলাশাসক মহম্মদ গুলাম আলি আনসারি বলেন, “রাস্তায় গিয়ে অবরোধ তোলাই শুধু আমাদের কাজ নয়।” তবে রাস্তা কেন সংস্কার করা হচ্ছে না, জেলাশাসক অবশ্য সে প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি।
অবরোধকারী জগু রায়, সচিত্র বেসরারা অবশ্য দাবি করেছেন, “আমরা এই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে একাধিকবার জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি। তাতেও কাজ হয়নি। তাই এ দিন অবরোধ আন্দোলনের পথে নামলাম।” স্কুল ভ্যান উল্টে জখম হওয়া ছাত্রের বাবা মঙ্গল মালাকার, গঙ্গাধর গরাইরা বলেন, “নেহাত ভাগ্য ভাল বলে বড় কিছু ক্ষতি হয়নি। তবে কিছু হয়ে গেলে কে দায় নিত?” দুর্ঘটনাগ্রস্ত ভ্যানের চালক সুকুমার দাস ও রিকসা চালক কানাই দাস বলেন, “এই রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে আমরা গাড়ি চালাই। কবে কী ঘটে সেই আতঙ্কে থাকতে হয়।” বাঁকুড়া পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার এ কে সিং-এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি। তাঁর দফতরের এক অফিসার আশ্বাস দিয়েছেন, “শীঘ্রই রাস্তাটি সংস্কার করা হবে।” |