নিজস্ব সংবাদদাতা • দুবরাজপুর |
মাস ছয়েক আগেই প্রায় সব কাজ শেষ হয়েছিল। বিদ্যুতের খুঁটি পোঁতা, তার টানা, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য সেই সব খুঁটি থেকে বাড়িতে বাড়িতে তার পৌঁছে দেওয়া, মিটার বসানো হয়েছিল। এমন কী ওয়ারিংয়ের কাজও হয়েছে। অথচ রাজীব গাঁধী বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের অধীনে এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ মেলেনি।
তাই দুবরাজপুরের সাহাপুর পঞ্চায়েতের মোট ১৪৪টি বিপিএল পরিবারের কাছে একটাই প্রশ্ন, তাঁদের বাড়ইতে আর কবে আলো জ্বলবে? উত্তরটা অবশ্য স্পষ্ট নয়। কারণ গ্রামেরই কিছু গ্রাহকদের বাধায় আটকে রয়েছে ওই পরিবারগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কাজটি।
কেন?
যাঁদের বাধায় কাজ আটকে আছে ওই সব গ্রাহকদের দাবি, ২টি চালকল, ৮টি সাবমার্সিবল, স্কুল, ব্যাঙ্ক, গ্রন্থাগার ও গ্রামের ১৫০টির বেশি বাড়ি মিলিয়ে যতগুলি বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে, সবই একটি মাত্র ট্রান্সফর্মার থেকেই দেওয়া হয়েছে। গ্রামে লোভোল্টেজের সমস্যা রয়েছে। তার উপর এতগুলি নতুন সংযোগ দিলে সবাই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবে। তাঁদের আরও দাবি, একটি আতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার বসানো হোক। খেলাফৎ হোসেন, শেখ রকিব, বুড়ো বাগদিদের কথায়, “এই গ্রামে প্রায় আড়াই-তিন হাজার মানুষ বাস করেন। তার মধ্যে একটা বড় অংশ বিপিএল তালিকাভুক্ত। তাই আমরাও চাই সকলের বাড়িতেই বিদ্যুৎ আসুক। কিন্তু এমন ভাবে নয় যাতে সকলকেই পরিষেবা নিয়ে ভুগতে হয়। এ ব্যাপারে বহুবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও লাভ হয়নি। উল্টে অতিরিক্ত ট্রান্সফর্মার না বসিয়েই বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে চেয়েছিল বলে আপত্তি জানিয়েছি।” |
বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে বিদ্যুতের তার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত। |
রাজীব গাঁধী বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়র বিশ্বজিৎ বাগদি বলেন, “অন্যান্য গ্রামে যে ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল এখানেও সে ভাবেই সংযোগ দিতে গেলে গ্রাম থেকে আপত্তি উঠেছে। যেহেতু এই প্রকল্পের মধ্যে ট্রান্সফর্মারের খরচ ধরা নেই তাই বিষয়টি বিদ্যুৎ দফতরকে জানিয়েছি।” অন্য দিকে, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের দুবরাজপুর শাখার স্টেশন ম্যানেজার স্বপন মণ্ডল বলেন, “ওই গ্রামের বাসিন্দারা যে আশঙ্কা করছেন সেটা অমূলক নয়। সেই জন্য পাশের গ্রামের একটি ট্রান্সফমার্রকে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন করে সেখান থেকে ওই বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে চাওয়া হয়েছিল। যাত্রা গ্রামের বাসিন্দারা তাতে রাজি না হওয়ায় নতুন ট্রান্সফর্মারের জন্য জেলায় জানানো হয়েছে। সেটি বরাদ্দ হলেই সমস্যা মিটবে।”
তবে সব কিছু হওয়ার পরেও যে সব বিপিএল পরিবারে বিদ্যুৎ আসেনি সেই পরিবারগুলির কয়েকজন সদস্য নারায়ণ বাউড়ি, নির্মল বাগদি, মনিমালা লোহাররা বললেন, “এ বার অন্তত আলো জ্বলুক আমাদের বাড়িগুলিতে। আর ধৈর্য নেই।”
সাহাপুর পঞ্চায়েতের ভগবতীপুর গ্রামের পাশে থাকা ধানখেতের উপর দীর্ঘ দিন ধরে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলে রয়েছে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতবাহী তার। ওই গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, চাষের ভরা মরসুমে ওই তারের নীচ দিয়ে পারাপার করতে গিয়ে যে কোনও দিন দুর্ঘটনা ঘটবে। অথচ বহুবার সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েও ফল হয়নি। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির দুবরাজপুর শাখার স্টেশন ম্যানেজার তথা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়রের দায়িত্বে থাকা স্বপন মণ্ডল অবশ্য বলেন, “এ ব্যাপারে ওই গ্রামের মানুষ অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জনা নেই। কারণ এ ধরনের খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।” |