ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফাঁকা আসন পূরণের জন্য আরও এক দফা কাউন্সেলিংয়ের আবেদন পেলে পরিস্থিতি যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আগেই জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু চতুর্থ দফার কাউন্সেলিং কার্যত অসম্ভব বলে মঙ্গলবার জানিয়ে দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। নতুন কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা হলে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ‘ব্যাপক গণ্ডগোল’ বাধার আশঙ্কা করছেন ওই দফতরের কর্তারা।
এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে ফের এক দফা বৈঠকে বসবেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা। আর শিবপুরের বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বা বেসু-র কর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেই পথ খুঁজতে চাইছেন।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ফাঁকা আসন পূরণের জন্য চতুর্থ দফায় ই-কাউন্সেলিংয়ের বন্দোবস্ত করার আবেদন জানিয়ে এ দিনই উচ্চশিক্ষা দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে বেসু। খালি আসনে কোন পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনার জন্য যাদবপুরের উপাচার্য শৌভিক ভট্টাচার্য এ দিন দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেও চতুর্থ কাউন্সেলিং নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ দিনও বলেন, “ওঁরা (বিশ্ববিদ্যালয়গুলি) কী চাইছেন, দেখি। তার পরে সিদ্ধান্ত হবে।”
কিন্তু উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়ে দিয়েছে, ফের এক দফা কাউন্সেলিং করা সম্ভব নয়। কেন?
মূলত দু’টি কারণে নতুন করে কাউন্সেলিংয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আবেদনে সাড়া দেওয়া সম্ভব নয় বলে সরকারি সূত্রের খবর। উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান: i তৃতীয় দফার কাউন্সেলিং শেষ হওয়ার পরেই অনেক কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই জন্য এখন আর নতুন করে কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ভর্তির বন্দোবস্ত করা সম্ভব নয়। i ভর্তি হয়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রীদের যদি আবার কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ দেওয়া হয়, তা হলে যে-২২ হাজার পড়ুয়া কোথাও না কোথাও ভর্তি হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ ফের অন্য জায়গায় ভর্তি হতে চাইবেন। এ ভাবে ক্রমশ এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির পদ্ধতি তো চলতেই থাকবে এবং ব্যাপক গণ্ডগোল হবে।
সারা রাজ্যে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ৩৩ হাজার আসনের মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি ফাঁকা রয়েছে। যাদবপুর ও বেসু-তেও বহু আসন ফাঁকা। বস্তুত, তিন দফায় কাউন্সেলিংয়ের পরেও ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসনের ৯০ শতাংশও পূরণ হয়নি। রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, জয়েন্ট এবং এআইইইই-র মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মেধা-তালিকা থেকে আসন না-ভরলে উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতেও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ছাত্র ভর্তি করা যাবে। সেই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মেধা-তালিকা থেকে সেই সব পড়ুয়াকেই ফাঁকা আসনে ভর্তি করা যাবে, যাঁরা ইতিমধ্যে অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি।
সরকারের এই দুই নির্দেশের ব্যাপারেই আপত্তি আছে যাদবপুর ও বেসু-র। প্রথমত, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে ছাত্র ভর্তি করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, মেধা-তালিকায় নাম থাকা যে-সব ছাত্রছাত্রী এখনও কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারেননি, তাঁদের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের। সেই কারণে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষই ফের এক দফা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করতে চান।
কিন্তু রাজ্য আর এক দফা কাউন্সেলিংয়ে রাজি না-হওয়ায় ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখন কী ভাবছে?
বেসু-র উপাচার্য অজয় রায় আপাতত দিল্লিতে। কাল, বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিরে এই নিয়ে বৈঠক করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। যাদবপুরের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ জানান, কাউন্সেলিং ছাড়া অন্য কোন পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি করা যায়, সেই ব্যাপারে এ সপ্তাহের শেষ দিকে ফের রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তাঁরা। তবে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে দুই বিশ্ববিদ্যালয়েই আসন ফাঁকা রেখে দেওয়া হতে পারে বলেও মনে করছেন অনেক শিক্ষক। তবে যাদবপুর ও বেসু-র কর্তারা এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। |