লাঠির আঘাতে পা ফেটে রক্ত ঝরছে। বেধড়ক পেটানোর দরুন গোটা শরীরে কালশিটের চিহ্ন স্পষ্ট। হাওড়া হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছিলেন শ্রীরামপুরের যুবক বিভাস পাল।
যুবকটির এই হাল কেন?
বিভাসের বক্তব্য, তিনি প্রতিবন্ধী আসনে বসে ট্রেনে ভ্রমণ করেছেন। সেই ‘অপরাধ’-এ আরপিএফ টাকা দাবি করেছিল। টাকা দিতে না-চাওয়ায় তাঁকে আট ঘণ্টা ধরে একটি ঘরে আটকে রেখে বেধড়ক পিটিয়েছে আরপিএফ। মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়া স্টেশনে নতুন কমপ্লেক্সের ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। রেল পুলিশের কাছে আরপিএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন বিভাসের বাবা। আহত বিভাসকে হাওড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। রেল পুলিশ তদন্তে নেমেছে। তদন্ত শুরু করেছেন আরপিএফ কর্তারাও। |
বিভাসের বাবা বিমলকুমার পাল জানান, এ দিন বিকেলে তিনি একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন পান। বিমলবাবু বলেন, “বিভাসই ফোনটি করেছিল। ফোনে সে আমাকে ব্যাপারটা জানায়।” বিমলবাবু হাওড়া আদালতের এক উকিল-বন্ধু অভিষেক যাদবকে সব জানান। অভিষেকবাবু বিকেল ৪টে নাগাদ হাওড়া স্টেশনে গিয়ে বিভাসকে ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি জানান, ওই সময় অনেক যাত্রীও ওই যুবককে আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছিলেন। কিন্তু কেউই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি। অভিষেকবাবু স্টেশন ম্যানেজারের কাছে গিয়ে বিভাসকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুল্যান্স চান। তিনি জানান, রেল-কর্তৃপক্ষ অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে পারেননি। পরে একটি ট্যাক্সিতে বিভাসকে হাসপাতালে নিয়ে যান অভিষেকবাবুই। পরে বিমলবাবু রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
রাতে হাওড়ার রেল পুলিশ সুপার মিলনকান্ত পাল বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা হাসপাতালে গিয়ে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর গায়ে অনেক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।”
বিভাস জীবন বিমার এজেন্ট। রাতে হাসপাতালে শুয়ে ওই যুবক জানান, তিনি ওড়িশার জলেশ্বর থেকে ফিরছিলেন। জগন্নাথ এক্সপ্রেসে সংরক্ষিত আসন না-পেয়ে ওই ট্রেনেরই একটি সাধারণ কামরায় হাওড়ায় আসেন। সকালে হাওড়ায় ট্রেন থেকে নামতেই আরপিএফের তিন-চার জন কর্মী তাঁকে ধরে। বিভাসের অভিযোগ, আরপিএফ জওয়ানেরা তাঁকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করে, প্রতিবন্ধী না-হয়েও কেন তিনি ওই আসনে বসে এসেছেন? বিভাস বলেন, “তার পরেই ওই জওয়ানেরা আমাকে টানতে টানতে ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দোতলার একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে আমার কাছে টাকা চায়। টাকা না-দেওয়ায় আমাকে আটকে রেখে মারধর শুরু করে। বিকেল ৪টে পর্যন্ত আমাকে ওরা ওই ঘরেই আটকে রেখেছিল।” বিভাসের অভিযোগ, ওই জওয়ানেরা তাঁর মোবাইল ফোন এবং ৫০০ টাকা কেড়ে নেয়। পরে তাঁকে ঘর থেকে বার করে দেয় তারা। বিভাস কোনও মতে প্ল্যাটফর্মে এসে এক যাত্রীর মোবাইল থেকে বাড়িতে সব জানান।
রাতে পূর্ব রেল জানায়, রেল পুলিশের কাছ থেকে ওই ঘটনার কথা শুনে আরপিএফ-কর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। অবিলম্বে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত করতে বলেছে রেল। |