ঢোকা-বেরোনোর মুখে সশস্ত্র জওয়ানদের কড়া প্রহরা। তার উপরে স্বাধীনতা দিবসের জন্য অতিরিক্ত সতর্কতার ব্যবস্থা হিসেবে এখন দর্শকদের প্রবেশাধিকারও বন্ধ। কিন্তু এমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ঘেরাটোপ থেকেও চুরি হয়ে গেল ২৬ ইঞ্চির এলসিডি টিভি! তা-ও আবার কলকাতা বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক বিল্ডিং-এর ভিআইপি লাউঞ্জে। আর এ প্রসঙ্গে বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা শুধু বললেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। যে বা যারা এর সঙ্গে যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।”
মঙ্গলবার সকালে প্রথম জানা যায়, টিভি উধাও। সন্ধ্যায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বিষয়টি থানায় জানানো হয়েছে। অভিযোগ, টেবিলের উপরে রাখা অত বড় একটা টিভি কেউ নির্বিঘ্নে খুলে বগলদাবা করে বিমানবন্দর থেকে হেঁটে বেরিয়ে গিয়েছেন। কাজেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রতিটি গেটে সিআইএসএফ জওয়ানেরা পাহারায় থাকা সত্ত্বেও কী করে তা সম্ভব হল? তা হলে কি বিমানবন্দরের ভিতরেই কোথাও ‘নিরাপদ’ জায়গায় টিভি লুকিয়ে রাখা হয়েছে? মঙ্গলবার সন্ধ্যার পরে আন্তর্জাতিক বিল্ডিং-এর বিভিন্ন দফতরে তল্লাশি করতে শুরু করেছেন নিরাপত্তা আধিকারিকেরা। সেই সঙ্গে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তার জন্য বিমানবন্দরের বিভিন্ন জায়গায় সিসিটিভি বসানো থাকলেও ভিআইপি লাউঞ্জে তা নেই। এমনকী, সেখান থেকে বেরিয়ে কেউ প্রধান লাউঞ্জ দিয়ে টিভি নিয়ে হেঁটে গেলেও তা ক্যামেরাবন্দি হওয়ার কথা নয়।
এ প্রসঙ্গে সিআইএসএফ-এর যুক্তি, প্রধানত নাশকতামূলক কাজকর্ম আটকানোর জন্যই তাঁরা পাহারা দেন। কেউ অস্ত্র বা বিস্ফোরক নিয়ে ঢুকছেন কি না, তা-ই তাঁদের দেখার দায়িত্ব। কেউ টিভি চুরি করলে তার দায় সিআইএসএফ-এর নয়।
এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই একটি চুরির মামলা শুরু করেছে পুলিশ। সোমবার সারা দিন বাইরের কোনও দর্শক বিমানবন্দরে ঢোকেননি। কোনও বিমানযাত্রী ভিআইপি লাউঞ্জে ঢুকে টিভি খুলে নেবেন, এমনও মনে করছে না পুলিশ। এমনিতেই আন্তর্জাতিক উড়ানের সংখ্যা এখন কমে গিয়েছে। পাল্লা দিয়ে কমেছে যাত্রীদের সংখ্যাও। আন্তর্জাতিক বিল্ডিংয়ে ভিআইপি-দের আসা-যাওয়া অনেক কম। তাই দোতলায় ওঠার সিঁড়ির নীচে ওই লাউঞ্জটি বেশির ভাগ সময়ে খালিই থাকে। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, “খালি পড়ে থাকলেও ২৪ ঘণ্টা ওখানে কোনও না কোনও কর্মীর পাহারা দেওয়ার কথা।” অবশ্য ইদানীং কর্মী কম থাকায় লাউঞ্জের কর্মীকে অন্যত্র পাঠানো হত বলে জানা গিয়েছে। ওই অফিসার বলেন, “কারও মাথাতেই আসবে না যে, ওই লাউঞ্জে ঢুকে কেউ টিভি নিয়ে পালাবে।”
আন্তর্জাতিক বিল্ডিং-এর অন্যান্য তলার কর্তৃপক্ষের দফতরগুলি এখন অন্যত্র সরে গিয়েছে। ফলে কমেছে অফিসারদের আনাগোনাও। একমাত্র দোকান, রেস্তোরাঁ ও কনভেয়ার বেল্ট চালানোর জন্য ঠিকাদারের কর্মীরাই নিয়মিত যাতায়াত করেন। তাঁদের অস্থায়ী পাস থাকে। স্থায়ী পাস থাকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মীদের কাছে। তাঁরা সাফাই, নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও লিফ্ট চালানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত। রয়েছেন বিমান সংস্থার কর্মীরাও। পুলিশের অনুমান, এঁদের মধ্যেই কেউ টিভি চুরি করেছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক বিল্ডিংয়ে যে দু’টি গেট দিয়ে যাত্রীরা ঢোকেন এবং বেরোন, সেগুলি ছাড়াও আর একটি বেরোনোর রাস্তা রয়েছে। ওই বিল্ডিংয়ের দোতলা দিয়ে পাশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) বিল্ডিংয়ের একটি যোগ রয়েছে। সেখান দিয়ে কেউ নির্বিঘ্নে বেরোতে পারেন। তবে, দুই বিল্ডিংয়ের মাঝে কোলাপ্সিবল গেটে তালা মারা থাকে। বহু দিন ওই পথ ব্যবহারও হয় না। সেই তালার চাবি কার কাছে থাকে, খোঁজ চলছে তারও। |