রাতে বাতি লাগানো স্টিল রঙের স্করপিওটিকে হুটার বাজিয়ে থানা-চত্বরে ঢুকতে দেখে নিজের ঘর থেকে শশব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন নিমতার আইসি। বড়কর্তারা কেউ এসেছেন ভেবে এগিয়ে গিয়েছিলেন গাড়ির দিকে। ডিউটি অফিসারের ঘরের সামনে বসে ঢুলছিলেন বন্দুকধারী কনস্টেবল। হুটারের আওয়াজে ধড়মড়িয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে তিনিও ঠুকে দিলেন স্যালুট।
গাড়ির বনেটের নীচে তাকাতেই আইসি-র চোখ ছানাবড়া। লাল প্লেটে পিতলের হরফে লেখা ‘ভাইস চেয়ারম্যান ইউএস এমব্যাসি’। দরজা খুলে যিনি নামলেন, তাঁর বয়স বড়জোর ১৯। সুঠাম চেহারা। পোশাক নামী ব্র্যান্ডের। গায়ে ভুরভুর করছে দামি সুগন্ধি। সামনের আসনে চালকের পাশে বসা বছর পঁচিশের যুবকটি আগেই নেমে পড়েছিলেন। আইসি-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে বছর উনিশের তরুণটি নিজের নাম বললেন, শৌমিক মুখোপাধ্যায়। নিজেকে পরিচয় দেন ‘ইউএস এমব্যাসি’র ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে। অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় নামে সঙ্গী যুবক তাঁর সহকারী বলে জানান শৌমিক। |
আইসি খাতিরযত্ন করে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসালেন দু’জনকেই। শৌমিক জানালেন, মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের নির্দেশেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কয়েকটি জায়গা দেখতে এসেছিলেন তাঁরা। ফিরে যাওয়ার পথে নিমতা থানা দেখে আইসি-র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে এসেছেন। এলাকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মিনিট কয়েক কথা বলার পরে আইসি শঙ্করপ্রসাদ বিশ্বাস আগন্তুকদের কাছে ভিজিটিং কার্ড চান। দু’জনেই জানান, গাড়িতে ব্যাগের মধ্যে ভিজিটিং কার্ড আছে। তার পরেই আইসি-র সঙ্গে করমর্দন করে গাড়িতে চেপে বেরিয়ে যান তাঁরা।
মঙ্গলবার রাতের এই পুরো ব্যাপারটাই গোলমেলে মনে হওয়ায় শঙ্করবাবু বেলঘরিয়ার এডিসি বিশ্বজিৎ ঘোষকে সব জানান। বিশ্বজিৎবাবু নির্দেশ দেন, যে-কোনও ভাবে ওই দু’জনকে গাড়ি-সহ থানায় ফিরিয়ে আনতে হবে। পড়িমরি করে আইসি নিজেই ছোটেন লাল বাতি লাগানো, হুটার বাজানো গাড়িটির খোঁজে। শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার রাস্তার কাছে গাড়িটির দেখা পান তিনি। এমন মহামান্য অতিথিদের চা না-খাইয়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বড়কর্তারা বকাবকি করছেন, এই বলে অনুরোধ-উপরোধ করে তাঁদের ফিরিয়ে আনেন থানায়।
ইতিমধ্যে নিমতা থানায় পৌঁছে গিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু এবং বেলঘরিয়ার এসিপি-২ মৌমিতা বিশ্বাস। জেরা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন শৌমিক। তিনি জানান, মিত্র ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেছেন গত বছর। বাড়ি ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া রোডে। আর সঙ্গী যুবক সম্পর্কে তাঁর কাকা। ফুলবাগানে বাড়ি। মানিকতলায় একটি মনোহারী দোকান চালান। নেহাতই মজা করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। গাড়িটা নিজেদের বলে তাঁদের দাবি। গাড়িচালক সন্তোষ করণকে জেরা করে জানা যায়, এর আগেও একাধিক বার লাল বাতি জ্বালিয়ে ‘মজা’র সফরে বেরিয়েছিলেন শৌমিক ও অরিন্দম। গাড়ির কোনও কাগজপত্র নেই।
কিন্তু সরাসরি থানায় ঢুকে পুলিশের সঙ্গে আলাপ করা কেন?
শৌমিকের জবাব, “কাউকে তো ঠকাইনি। পুলিশের সঙ্গে আলাপ করতে চাওয়া কি অপরাধ? থানা কেমন, আগে দেখা হয়নি। তাই কৌতূহলবশে দেখতে এসেছিলাম।” এডিসি বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “কোনও প্রতারক থানায় ঢুকে এ ভাবে আলাপ করে, আগে কখনও দেখিনি। প্রতারণার অভিযোগে চালক-সহ তিন জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। জেরা চলছে। ওঁদের বাড়ির লোকজনকে ডেকে পাঠানো হয়েছে।” |