লেখাপড়া করতে চেয়ে বিয়েতে আপত্তি জানিয়ে দৃঢ মানসিকতার পরিচয় ইতিমধ্যে সকলের জানা। তবে তপনের একটি ঘটনা একটু ব্যতিক্রম হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছে আদালত থেকে প্রশাসন ও পাড়া-পড়শি মহলে। কারণ, পড়াশুনার জন্য সদ্য বিবাহিত এক কিশোরী নিয়েছে চরম সিদ্ধান্ত। সাত দিন পর বিয়ে ভেঙে স্বামীর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসার সাহস দেখিয়েছে ১৩ বছরের এক কিশোরী। নাম ফতেমা খাতুন। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন থানার ধাইনগর এলাকার বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া ফতেমার মনের জোরকে এখন সকলে সম্মান জানাচ্ছেন। সহায়তার আশ্বাস জানিয়ে তার পাশে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক দুর্গাদাস গোস্বামী বলেন, “অভাবের কারণে নাবালিকা ছাত্রীকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই ছাত্রী এখন তার দিদির আশ্রয়ে রয়েছে। ওর লেখাপড়ার জন্য যাবতীয় সহায়তা করা হবে। বিডিওকে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে।” ফতেমার দিদি ফরিদা বিবি বলেন, “কষ্ট হলেও বোনের সমস্ত দায়ভার নিয়ে যতদূর পড়তে চায় পড়াব।” |
ছোটবেলায় বাবা মাকে হারিয়ে গরিব দাদার কাছে মানুষ ফতেমা। ভ্যিান চালক দাদা হায়দর আলি চোখে কম দেখেন। তিনি বলেন, “স্ত্রী-পুত্র নিয়ে তার অভাবের সংসার। তাই ভাল পাত্র পেয়ে বোনের বিয়ে দিয়ে ভারমুক্ত হতে চেয়েছি।” চলতি জুলাইয়ের শুরুতে কুমারগঞ্জ থানার তিরন গ্রামের সম্পন্ন কৃষক পরিবারের ছেলে আলমাস আলির সঙ্গে বিয়ে হয় ফতেমার। বিয়ে করবে না বলে আগাগোড়া আপত্তি জানিয়েছিল ফতেমা। জুলাইয়ের ১০ তারিখে বাড়িতে এসে স্বামীর কাছে ফিরবে না বলে সে জানায়। গরিব দাদার কাছে সাড়া না পেয়ে সে তার ধাইনগর স্কুলের প্রধানশিক্ষিকা স্বপ্না চক্রবর্তীর দ্বারস্থ হয়। ফতেমা পড়তে করতে চায় শুনে এগিয়ে আসেন তিনি। শেষে স্কুলের শিক্ষিকাদের পরামর্শে দিদি ফরিদা বিবি বালুরঘাট আদালতে চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্টে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে মুক্তি মেলে। কিশোরী ফতেমার জেদের কাছে হার মানেন বিএ প্রথম বর্ষের পড়ুয়া তথা স্বামী আলমাস। প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্না দেবী বলেন, “ফতেমার কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে যাই। ওর আগ্রহ-উদ্দীপনা দেখে চুপ থাকি কী করে?” বিডিও জর্জ লেপচা বলেন, “সকলকে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলাম। মেয়েটির মনের জোরকে সম্মান জানাতে হয়। ওকে সব সহায়তা করা হবে। ফতেমার কথায়, “লেখাপড়া করে শিক্ষিকা হতে চাই।” |