মাটির মানুষ ছিন্নমূল মানুষের বদলে যাওয়া
সংস্কৃতি লিপিবদ্ধ করেন অলোক
দিবসত ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে বর্ধমান। কিন্তু সেখানেও থিতু হওয়া গেল না। এমন ঠাঁইনাড়া হতে হতেই হালিশহরের পাকাপাকি বাসিন্দা হলেন অলোক। বাংলার লোকসংস্কৃতির গবেষক অলোক মৈত্র।
ছিন্নমূল মানুষের জীবন-জীবিকা ও সংস্কৃতির যে বদল ঘটে চলে প্রতিনিয়ত, তাই গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয় ছিল অলোকের। কাজের সীমানাও নিজেই স্থির করে নিয়েছিলেন গবেষক। নদিয়া জেলার মদনপুর থেকে ইছাপুর নবাবগঞ্জের খাল পর্যন্ত একদা পরিচিত ছিল ‘হাবেলি শহর’ নামে। ছিল অসংখ্য গ্রাম এবং গ্রামীণ মানুষের জীবিকাশ্রয়ী কুটির শিল্প। ব্রিটিশ শাসনকালে সময়কালে গড়ে উঠেছিল শিল্পাঞ্চল। কিন্তু স্বাধীন ভারতে মানুষের জীবন বদলে গেল দ্রুত। যত দিন গেল সেই বদলের গতি হল আরও দ্রুত। “এই বদলটা দীর্ঘকাল সময় ধরে ঘুরে ঘুরে দেখতাম এবং লিখতাম। এক সময় স্থির বিশ্বাসে দাঁড়ালাম যে এই সংস্কৃতিক পরিবর্তন, মানুষের কর্মের পরিবর্তন, কুটির শিল্পের বদলএগুলোই তো আমার চর্চার বিষষ। এ সব নিয়ে লিখতে হবে। কোনও অনুদান নয়, নিজের উদ্যোগেই এই কাজ আমাকে করতে হবে।” বললেন ষাটোর্ধ্ব লোকগবেষক অলোক। স্থায়ী বসত, রেলওয়ে বাউন্ডারি রোড, হালিশহর। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী। স্কুলজীবন থেকেই বাউন্ডুলে। পেয়েছিলেন লেখক সমরেশ বসুর স্নেহ। সে কথা স্মরণ করে বলেন, “বাউন্ডুলেপানা নিয়ে প্রশ্রয় পেয়েছি ওঁর কাছে। ওঁর সঙ্গে বহু জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি। আবার একা একাও ঘুরেছি।”
শুধু তথ্য সংগ্রই একমাত্র লক্ষ ছিল না। প্রয়োজনে ভেঙে পড়া মন্দির সংস্কারেও উদ্যোগী হয়েছেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী গবেষণা কেন্দ্রের সদস্য হয়ে তাঁর রচনা সংগ্রহের কাজেও যুক্ত হয়েছেন। অঞ্চলের মুসলিম সমাজের সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে শালিদহের ‘শাহেদল করিম’ শিরোনামে কুরসিনামা সংগ্রহ করেছেন। কেমন করে হাবেলি শহরের লৌকিক দেবদেবী কেন্দ্রিক মানুষের আচার আচরণ বদলে গেল, শিল্পাঞ্চলের ছোঁয়ায় তারই সূত্র ধরে লিখে ফেলেন একটি গোটা বই। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হল ‘হাবেলি শহরের লৌকিক ধর্মে সংস্কৃতি ও সমাজ।’ সাধারণত গবেষণাধর্মী গ্রন্থ নিয়ে কেউ খুব একটা খোঁজ নেন না। কিন্তু ২০০৯ সালে দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ হল ‘হাবেলি শহরের লৌকিক ধর্মে সংস্কৃতি ও সমাজ’-এর। “বৃত্তিনির্ভর আচার-অনুষ্ঠান দিয়ে অনেক সময় একটা আঞ্চলিক সমাজকে চেনার চেষ্টা করেছি। তারই ফল, ‘বাংলার লৌকিক ধর্মাচারের ঐতিহ্য সন্ধানে’। এই গ্রন্থটিও ২০০০ সালে এবং পরে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় সংস্করণ হয়েছে।” জানালেন হালিশহরের লোক গবেষক অলোক মৈত্র। অথচ কাজ যখন শুরু করেছিলেন তখন পকেটে ‘ফুটো’ পয়সাও ছিল না। তবে হেঁটে কোনও গ্রামে, তা সে বাংলার হিন্দু-মুসলমান অধ্যুষিত কোনও গ্রাম হোক বা আদিবাসীদের গ্রাম, কাছে পৌঁছে গেলে আশ্রয় ও আহার মিলত। জানা গেল গবেষকের কথায়। বহু পরে ব্যাঙ্কের চাকরি আর্থিক অবস্থায় বদল ঘটায়। তবুও সমীক্ষা, ঘোরাঘুরি যা জীবনের মূল সুর ছিল তা বিলীন হয়নি। শনি-রবিবার, দেড়দিন এবং অন্যান্য ছুটির দিনগুলো কাজে লাগাতেন গবেষক অলোক। ২০০২ সালে আরও একটি গ্রন্থ, ‘ক্ষীয়মান মৃত্তিকার রস’ প্রকাশ পেয়েছে। ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসের আজীবন সদস্য পদ লাভ করে গবেষণা পত্র পেশ করেছেন। এখন প্রতিনিয়ত গবেষকের চিন্তা, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লেখাপত্রগুলি সুসম্পাদিত করে বই আকারে প্রকাশ। যা আগামীতে পথ দেখাবে আর এক লোক-সংস্কৃতির গবেষককে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.