এত দিন ঘুরিয়ে বলা হচ্ছিল, ‘পরিবর্তনে’র পরিবর্তন চাই। এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানার ১৫ মাসের মাথায় রাজ্য সরকার ‘পরিবর্তনে’র ডাক দিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। কৃষির সঙ্কট থেকে আইনশৃঙ্খলার ‘চরম অবনতি’, যাবতীয় প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে শুক্রবার বিমানবাবু সরাসরিই ওই ‘পরিবর্তনে’র ডাক দিয়েছেন। রাজ্যে বিভিন্ন উপনির্বাচনে ফল যা-ই হোক, গত কয়েক মাস যাবৎ সককারের বিরুদ্ধে সুর চড়াচ্ছে বিরোধী শিবির। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এ বার বিমানবাবুর সরাসরি আহ্বান সেই দিক থেকেই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং খাদ্য নিরাপত্তার দাবিতে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বামফ্রন্টের তিন দিনের ধর্না-অবস্থানের শেষ দিনে বিমানবাবু বলেছেন, “এই রাজ্যে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দফারফা হচ্ছে! চার দিকে যা হচ্ছে, কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এই সরকারের পরিবর্তন প্রয়োজন।” অবস্থানের শেষ দিনে উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা করলেও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য অবশ্য সরকার বদলের ডাক দেওয়ার দিকে যাননি। পেট্রোল, ডিজেলের উপরে রাজ্য সরকার কেন কর ও শুল্কে ছাড় দিতে পারল না, সেই প্রশ্ন তোলা ছাড়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে তাঁর যাবতীয় আক্রমণের অভিমুখ এ দিন ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, তৃণমূল ইউপিএ-র শরিক। দিল্লির ব্যর্থতার ‘দায়’ তাই তারাও এড়াতে পারে না। |
মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও খাদ্য নিরাপত্তার দাবিতে রানি রাসমণি রোডে
বামফ্রন্টের সভায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র |
বিমানবাবু অভিযোগ করেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এ বার রাজ্যে চাষবাসের হাল খারাপ। ‘সবুজ বিপ্লবে’র ‘ম্যাচিং গ্রান্ট’ দিতে না-পারায় কেন্দ্রের টাকা ফেরত গিয়েছে। রাজ্যে ৪০-৫০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কম উৎপন্ন হওয়ার আশঙ্কা। অথচ রাজ্য সরকার এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিকে গুরুত্বই দিচ্ছে না। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ‘নীতি’র জন্যই এই অবস্থা বলে অভিযোগ করেছেন বিমানবাবু। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে বলেছেন, “মুখে মানবতার কথা বলেন উনি। রাখিবন্ধন উৎসব উপলক্ষেও গত কাল কত মানবতার কথা শুনলাম! কিন্তু ক্ষুধাতুর মানুষের জন্য একটি কথাও তো কেন্দ্রকে বলছেন না! মুখে মাঝে মাঝে বামপন্থার কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন মানুষের মনে।” মুখ্যমন্ত্রীর বাজার-সফরের প্রতিও ফ্রন্ট চেয়ারম্যানের কটাক্ষ, “ওই ভাবে বাজারে ঘুরলে সংবাদ শিরোনামে আসা যায়। কিন্তু তাতে লবডঙ্কা হয়!” |