বিধানসভায় সংবর্ধনা
সুশান্তকে এড়াতে বিধায়ক তালিকা বদল ৭৫ পূর্তিতে
বিধানসভার প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীর সংবর্ধনা-তালিকা থেকে ‘প্রকারান্তরে’ বাদ দেওয়া হল জেল-ফেরত সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষকে। প্রাথমিক তালিকায় থেকেও সুশান্তর সঙ্গেই বাদ পড়লেন শাসক-বিরোধী মিলিয়ে আরও কয়েকজন বিধায়ক।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল, পাঁচ বার (একটানা বা দফায় দফায়) বা তার বেশি সময়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিধায়কদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে বিধানসভার প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীতে। কিন্তু দেখা যায়, সেই তালিকায় পড়ে যাচ্ছেন কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত ও জেল-ফেরত সুশান্তবাবুও। তারপরই শাসক তৃণমূলে ‘গুঞ্জন’ শুরু হয়।
ভোটের আগে জঙ্গলমহলে প্রচারে গিয়ে বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুশান্তবাবুকেই আক্রমণ করেছেন। বিরোধী শিবিরে থাকাকালীন বর্তমান পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম তো সরাসরি সুশান্তবাবুকে ‘নিগ্রহে’র হুমকি দিয়েছিলেন। গড়বেতা-কান্ড থেকেই সুশান্তবাবু তৃণমূলের চক্ষুশূল। বিধানসভার অধিবেশনেও অহরহ সুশান্তবাবুকে আক্রমণ করে থাকেন তৃণমূল বিধায়করা। বিধানসভা চত্বরে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেই সুশান্তবাবুকেই সংবর্ধনা দেওয়া নিয়ে শাসক শিবিরে ‘আলোড়ন’ চলছিল। শেষ পর্যন্ত দল ও সরকারের ‘বিড়ম্বনা’ এড়াতে পাঁচ বারের জায়গায় আট বার বা তার বেশি মেয়াদের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিধায়কদের সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। সেই মাপকাঠিতে বাদ পড়লেন সুশান্তবাবু।
সুশান্তবাবুর নাম-সহ প্রাথমিক তালিকাটি অনুমোদনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়েছিল বিধানসভার সংশ্লিষ্ট কমিটি। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন-সাপেক্ষেই শুক্রবার কমিটির বৈঠকে বিধায়ক-তালিকার রদবদল হয়েছে বলে বিধানসভা সূত্রের খবর। তাঁকে ‘বাদ’ দিতেই যে আটবারের বিধায়কদের বাছাইয়ের ‘কৌশল’ সরকার নিয়েছে, তার ইঙ্গিত দিয়ে সুশান্তবাবু বলেন, “পঁচিশ বছরের জায়গায় হঠাৎ করে চল্লিশ বছর হয়ে গেল! এদের (তৃণমূলের) সিদ্ধান্ত সম্পর্কে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। এদের গুরুত্ব দেওয়া অর্থহীন। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্যের মানসিকতা আমার নেই।”
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য সুশান্ত-প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলেছেন, “কমিটি সর্বসম্মতভাবে এই তালিকা ঠিক করেছে। কমিটিতে বাম প্রতিনিধিও ছিলেন। সেখানে কাউকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গ আসেনি। কোনও বিতর্ক হয়নি। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করতেই ১৫ থেকে কমিয়ে সাত জনের নাম স্থির হয়েছে।”
মেয়াদ-বিচারে বাদ পড়লেন আরও ক’জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ওমর আলি (তৃণমূল), সুভাষ নস্কর (আরএসপি), সাধন পান্ডে (তৃণমূল), নর্মদাচন্দ্র রায় (আরএসপি), নাজমুল হক (সিপিএম), উপেন কিস্কু (সিপিএম)। সুশান্তকে ‘এড়াতে’ গিয়ে অন্যরা বাদ পড়ায় কিঞ্চিৎ ‘ক্ষুন্ন’ তৃণমূলের একাংশ। দলের কিছু প্রবীণ নেতার বক্তব্য, “সুশান্তবাবুর নামে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া নিয়ে আপত্তি উঠতেই পারে। কিন্তু ওঁকে বাদ দিতে গিয়ে আরও কিছু বিধায়ক বাদ পড়লেন। এটা অসৌজন্যমূলক।”
কিন্তু তারপরেও সংবর্ধনা তালিকায় থাকলেন যে সাত জন, তাঁরা প্রাথমিক তালিকাতেও ছিলেন। কংগ্রেসের প্রবীণতম বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপাল, আব্দুল গফ্ফর, তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, গ্রন্থাগার মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী, বাম বিধায়ক প্রবোধ সিংহ, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা এবং নারায়ণ মুখোপাধ্যায়রা প্রাথমিক তালিকাতেও ছিলেন। প্রত্যেকেই বর্তমান বিধানসভারও সদস্য। ১৩ এবং ১৪ অগস্ট বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন এবং মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সংবর্ধিত হবেন এঁরা। সংবর্ধিত হবেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম এবং তিন প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার ভক্তিপদ ঘোষ, কৃপাসিন্ধু সাহা ও কলিমুদ্দিন শামস। রাজনীতির বৃত্তের পাশাপাশি বিধানসভার সচিব-সহ সব কর্মীকেও সম্মান জানানো হবে ওই অনুষ্ঠানে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার। কিন্তু সংসদের অধিবেশন চলায় তিনি থাকতে পারবেন না। উদ্বোধন করবেন রাজ্যপাল।
বর্তমান বিধায়কদের মধ্য থেকে ‘প্রবীণতম’দের ‘সংবর্ধনা’ দিতেই ওই সাত জনকে বাছা হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের যুক্তি। যা শুনে এক বিরোধী বিধায়কের সহাস্য বক্তব্য, “যে সময়ের মাপকাঠিতেই সংবর্ধনা দেওয়া হোক তালিকায় বামেরাই বেশি থাকবেন!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.