মিলখা, উষার দুর্ভাগ্যই
তাড়া করল জয়দীপকেও
৯৬০-এর রোম।
১৯৮৪-র লস অ্যাঞ্জেলেস।
২০১২-র লন্ডন যেন টাইম মেশিনে ফিরিয়ে আনল এই দুই অলিম্পিকের চেনা এক ছবিকে। মিলখা সিংহ, পিটি উষার অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হওয়ার মুহূর্ত ফের মনে পড়িয়ে দিলেন নাগেরবাজারের অমরপল্লীর বাসিন্দা জয়দীপ কর্মকার।
’৬০-এর রোম অলিম্পিকে চারশো মিটার দৌড়ে পদক ফস্কেছিলেন ‘উড়ন্ত শিখ’ মিলখা সিংহ। হিটে সব চেয়ে ভাল করেও। ’৮৪-র লস অ্যাঞ্জেলেস একই দুর্ভাগ্য ডেকে আনে পিটি উষার জন্য। চারশো মিটার হার্ডলে ০.০১ সেকেন্ডের জন্য পদক হাতছাড়া। ’৮৪-এর পর ২০১২। মাঝে আঠাশটা বছর। আর আঠাশ বছর পরেও কাপ আর ঠোঁটের দূরত্বটা রয়েই গেল। মিলখা-পিটি উষাদের দুর্ভাগ্যের ‘ঐতিহ্য’ তাড়া করল জয়দীপকেও। ব্রোঞ্জজয়ী প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে জয়দীপের পয়েন্টের ফারাক থেকে গেল মাত্র ১.৯! বাঙালি শ্যুটার শেষ করলেন চতুর্থ স্থানে। ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে। এবং মিলখা যদি মনে রাখেন দক্ষিণ আফ্রিকার মাইকেল স্পেনসকে, পিটি উষা যদি ভুলতে না পারেন ক্রিশ্চিয়ানা কোজোকারুকে, তা হলে শুক্রবারের পর থেকে যত বার রাইফেল তুলবেন জয়দীপ, তত বার মনে পড়বে স্লোভানিয়ার রেজমন্ড দেবেভেককে। কী করা যাবে, মিলখা-উষা-জয়দীপদের ব্রোঞ্জজয় তো এঁরাই থামিয়ে দিয়েছেন!

বিমর্ষ জয়দীপ।
—নিজস্ব চিত্র
শোনা যায়, রোম অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বীকে পিছন ফিরে দেখতে গিয়ে পদক হারিয়েছিলেন মিলখা সিংহ। জয়দীপ সেই ভুল করেননি। বরং ৫০ মিটার এয়ার রাইফেল ‘প্রোন’ বিভাগের যোগ্যতা-অর্জন পর্বে ৬০০-তে ৫৯৫ স্কোর করে ফাইনাল রাউন্ডে নামার আগে বেশ আত্মবিশ্বাসীই দেখাচ্ছিল বঙ্গসন্তানকে। দেখে বোঝার উপায় ছিল না, এই প্রথম তিনি অলিম্পিকে নামছেন। আর নামছেন ভারতের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে। ততক্ষণে বিদায় ঘটে গিয়েছে দিন কয়েক আগে ব্রোঞ্জ জয়ী নারঙ্গের। ফাইনাল পর্বের যোগ্যতাই যিনি পেলেন না!
রয়্যাল আর্টিলারি ব্যারাকে আটটা শরীর পাশাপাশি শুয়ে। মাঝে এক বাঙালি। হাতে দশটা সুযোগ। গোটা দেশের চোখ টিভিতে। নারঙ্গ পারলেন না, জয়দীপ পারবেন রাইফেল শ্যুটিংয়ে দেশকে আরও একটা পদক দিতে? বাংলার হাত ধরে কি লেখা হবে ভারতের আরও একটা গর্বের ইতিহাস? কিন্তু জয়দীপের কপাল মন্দ। দশ রাউন্ডের শেষে তাঁর পয়েন্ট দাঁড়াল ১০৪.১। যোগ্যতা-অর্জন পর্বের পয়েন্ট ধরলে মোট ৬৯৯.১। আর ব্রোঞ্জজয়ী দেবেভেক ফাইনাল রাউন্ডে তুললেন ১০৫। বাঙালি শ্যুটারের চেয়ে এক পয়েন্টের কমে এগিয়ে। সব মিলিয়ে ৭০১। অথচ রুপোজয়ী বেলজিয়ান লিওনেল কক্সের চেয়ে ফাইনাল পর্বে পয়েন্ট বেশি ছিল জয়দীপের। কক্সের ১০২.২। জয়দীপ ১০৪.১। ফাইনাল রাউন্ডের পয়েন্টের বিচারে তৃতীয়। কিন্তু যোগ্যতা-অর্জন পর্বের পয়েন্ট যোগ করতেই ভাগ্যে ওলট-পালট।
তাই ‘ট্র্যাজিক নায়ক’ হয়ে থাকলেও জয়দীপের কৃতিত্ব কমছে না। অলিম্পিকের ইতিহাসে কোনও বাঙালি পদকের এত কাছে আসতে পারেনি। ঝামেলাও কি কম পোহাতে হয়েছে তাঁকে? গুলির বাক্স চুরি হয়েছে। পুরোনো গুলি দিয়ে প্র্যাক্টিস করেছেন দিনের পর দিন। ক্রীড়ামন্ত্রক থেকে বিন্দ্রা-রঞ্জন সোধীরা বিশাল অঙ্কের টাকা পেয়েছেন অলিম্পিকের প্রস্তুতি বাবদ। জয়দীপ-ই শুধু পাননি! এমনকী অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জন করার পরেও তাঁকে ধন্ধে রাখা হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তিনি লন্ডন যাবেন কি না তা নিয়ে।
এই অবস্থা থেকে চতুর্থ! গগন নারঙ্গ ছাড়া চলতি অলিম্পিকে কোনও ভারতীয় রাইফেল শ্যুটারের সেরা পারফরম্যান্স। সাধে জয়দীপের ‘মেন্টর’ স্বপন স্যান্যাল বলছেন, বাঙালি শ্যুটাররা এ বার তেতে যাবেন জয়দীপকে দেখলে।
যাবেনই তো। যাওয়াই উচিত। পদক আসুক না আসুক, একটা ব্যাপার জয়দীপ বুঝিয়ে দিলেন। ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি’ এই অপবাদ অন্তত শ্যুটিংয়ে আর কোনও দিন দেওয়া যাবে না!

আজ
ব্যাডমিন্টন
• সাইনা-ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচ (সন্ধে ৬-০০)
রোয়িং
• সন্দীপ-মনজিৎ (দুপুর ২-১০)
২০ কিমি হাঁটা
• বলজিন্দর, গুরমিত, ইরফান (রাত ৯-৩০)
বক্সিং
• দেবেন্দ্র সিংহ (সন্ধে ৬-৪৫)
• মনোজ কুমার (রাত ২-০০)
স্টিপলচেজ
• সুধা সিংহ (বিকেল ৪-০৫)
শ্যুটিং
• শগুন চৌধুরি (দুপুর ২-১০)

গত কাল
শ্যুটিং
• বিজয় কুমার- রুপো
• জয়দীপ কর্মকার- চতুর্থ‌্
ব্যাডমিন্টন
• হার সাইনার
হকি
• জার্মানির কাছে ২-৫ হার
রোয়িং
• হার স্বর্ণ সিংহ ভির্কের
ডিসকাস থ্রো
• ফাইনালে কৃষ্ণা পুনিয়া
শট পাট
• বিদায় ওমপ্রকাশের
ট্রিপল জাম্প
• বিদায় ময়ুখা জনির





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.