প্রথম অলিম্পিকেই স্নায়ুর লড়াইয়ে জয়
নামীদামি শ্যুটারদের ভিড়ে তিনি ছিলেন পিছনের সারিতে। মাত্র ছ’দিন আগে এই অলিম্পিকেই দশ মিটার এয়ার পিস্তল ফাইনালে ৩১ নম্বর হয়ে যোগ্যতা অর্জনকারী পর্বেই ছিটকে যেতে হয়েছিল তাঁকে। স্বভাবতই আজ লন্ডনের রয়্যাল আর্টিলারি ব্যারাকে ২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ার পিস্তলে কেউই তাঁর কাছ থেকে পদকের আশা করেননি। কিন্তু অলিম্পিকে রুপোর ‘বিজয়’মুকুট তাঁর জন্যই অপেক্ষা করছিল।
বৃহস্পতিবার এই ইভেন্টের যোগ্যতা অর্জনকারী প্রথম পর্বটা শেষ করেছিলেন চতুর্থ হয়ে। আজ ফাইনালে ওঠার পথে স্কোর ৫৮৫! অলিম্পিক রেকর্ড ভেঙেই যাত্রা শুরু করেছিলেন বিজয় কুমার। হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর জেলার হারসৌর গ্রাম থেকে উঠে আসা ভারতীয় সেনাবাহিনীর অনামী সুবেদার তিনি। তত ক্ষণে ছিটকে গিয়েছেন গগন নারঙ্গ। ফাইনালে সংকল্পে অটল আর লক্ষ্যে অবিচল থেকে ভারতকে লন্ডন অলিম্পিকের প্রথম রুপোটা এনে দিলেন ২৭ বছরের বিজয়।
২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে তিনটে সোনা ও একটা রুপো জিতেছিলেন বিজয়। গুয়াংঝু এশিয়াডে জেতেন ব্রোঞ্জ। কিন্তু অলিম্পিক হল অলিম্পিক। খেলাধুলোর সর্বোচ্চ মঞ্চ। আর এটাই বিজয়ের প্রথম অলিম্পিক। মাত্র চার পয়েন্টের জন্য কিউবার লিউরিস পুপো-র কাছে হেরে সোনা হারিয়েছেন বিজয়।
হাতের মুঠোয় রুপো। পিস্তলে ২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ারে পদক
ছিনিয়ে আনার পর বিজয় কুমার। ছবি: উৎপল সরকার
২০০৪ আথেন্স অলিম্পিকে ডাবল ট্র্যাপ শ্যুটিংয়ে রুপো জিতেছিলেন রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌর। তার পরে এই প্রথম কোনও ভারতীয় ব্যক্তিগত ইভেন্টে রুপো জিতলেন। “জীবনের প্রথম অলিম্পিকে দেশকে পদক দিতে পেরে অভিভূত লাগছে। মানসিক ভাবে এই মুহূর্তটার জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলাম। সেনাবাহিনীতে থাকার জন্য মানসিক কাঠিন্য ছিলই। ওটা খুব কাজে দিয়েছে। যা পরিকল্পনা করেছিলাম, করতে পেরেছি,” বলেছেন বিজয়। সঙ্গে সংযোজন, “স্বপ্ন ছিল অলিম্পিক পদকের। এটাই আমার কাছে খেলায় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। আমার বাড়ির দেওয়ালে অনেক পদক আছে, কিন্তু অলিম্পিক পদকটা ছিল না।” বিজয় জানাচ্ছেন, একেবারে শেষে নার্ভ ধরে রাখাটাই ছিল আসল। আর যোগ্যতা অর্জন পর্বে তাঁর লক্ষ্য ছিল, প্রথম ছয়ের মধ্যে থাকা। “কখনওই আপনি ভুলতে পারেন না এটা অলিম্পিক। ফোকাস থেকে এক মুহূর্তের জন্য সরতে পারেন না। নিজের নার্ভাস সিস্টেমের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারাটা খুব জরুরি। এটা আমার প্রথম অলিম্পিক বলে আরও সতর্ক ছিলাম। নার্ভ ধরে রেখেছিলাম আগাগোড়া।”
বিজয় কুমার জানিয়েছেন, এই রুপো জয় তাঁর রাজ্য হিমাচল প্রদেশের জন্য সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি। ‘‘আমার রাজ্যের জন্য এটা বিরাট ব্যাপার। এর পর আমাদের দেশের আরও অনেকে শ্যুটিংয়ে আগ্রহী হবে,” বক্তব্য বিজয়ের। পদক জয়ের খবর আসার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হিমাচল সরকার বিজয়ের জন্য এক কোটি টাকার পুরস্কার ঘোষণা করেছে।
২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ার পিস্তল ফাইনালে পদক জয়ের দৌড়ে অদ্ভুত ভাবে পিছিয়ে পড়েন যোগ্যতা-অর্জন পর্বে বিশ্বরেকর্ড করা রাশিয়ার আলেক্সি ক্লিমভ। ফাইনালে আটটি রাউন্ড থাকে, প্রতি রাউন্ডে পাঁচটি করে গুলি পরপর ছুঁড়তে হয়। মোট ৪০টি শট মারতে পারেন প্রতিযোগীরা। লক্ষ্যভেদ করতে পারলে এক পয়েন্ট, না পারলে ০। এর ভিত্তিতেই ঠিক হয় চূড়ান্ত পয়েন্ট-সংখ্যা। কিউবার পুপো আর চিনের দিং ফেঙের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয় বিজয়ের। ছিলেন জার্মানির ক্রিস্তিয়ান রেইটজ-ও। কিন্তু ফাইনালে প্রায় নিখুঁত শ্যুটিংয়ের নমুনা পেশ করেন বিজয়। কখনওই প্রথম তিনের বাইরে যাননি। বেশ কিছুক্ষণ চিনা প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে যুগ্ম দ্বিতীয় ছিলেন। তার পর দিং ফেঙকে পিছনে ফেলে দেন বিজয়। বিশ্বরেকর্ড স্পর্শ করে ৪০-এর মধ্যে ৩৪ স্কোর করে সোনা জেতেন পুপো। ৩০ স্কোর করে রুপো নিশ্চিত হয় বিজয়ের।

বিজয়-কথা
• জন্ম: ১৯ অগস্ট, ১৯৮৫, বাড়িহারসৌর, হিমাচলপ্রদেশ

• পেশা: ভারতীয় সেনার সুবেদার

• সেরা সাফল্য:
২০১২ অলিম্পিকে রুপো
২০১০ কমনওয়েলথ গেমসে ৩ সোনা, ১ রুপো
২০০৯ আইএসএসএফ বিশ্বকাপে রুপো
২০০৬ এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ
২০০৬ কমনওয়েলথ গেমসে দুটো সোনা

• সেরা স্বীকৃতি: অর্জুন, ২০০৭
২৫ মিটার র‌্যাপিড ফায়ার পিস্তল
• ২৫ মিটার দূর থেকে প্রতিযোগীকে পরপর পাঁচটি টার্গেট লক্ষ করে গুলি ছুড়তে হয়। গুলি টার্গেটে লাগলে পয়েন্ট।
• যোগ্যতা অর্জন পর্ব দু’দিন ধরে হয়। নির্দিষ্ট সময়ে প্রথম পর্বে ৩০টি গুলি ছুড়তে হয়। দ্বিতীয় দিন ৩০টি। ছ’জন
সেরা পরের পর্বে যাবেন।
• ফাইনালে চার রাউন্ডে ২০টি গুলি মারার পরে এক জন করে ছাঁটাই শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত শেষ দু’জনকে আটটা রাউন্ডে ৪০টি গুলি মারতে হয়।
• ফাইনালে আটটি রাউন্ডে সর্বোচ্চ ৪০ পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব। সোনা জয়ী কিউবান পান ৩৪ পয়েন্ট। বিজয় কুমার পান ৩০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.