|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত |
সংস্কার কবে |
প্রাণ হাতে পথে |
সত্যজিৎ চক্রবর্তী |
রাস্তা জুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। কোথাও বা পিচ উঠে এবড়োখেবড়ো। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় অল্প বৃষ্টিতেই জল জমে। দুর্ঘটনাও লেগেই রয়েছে। অলিগলি নয়, এ চেহারা যশোহর রোডের এয়ারপোর্ট দু’নম্বর গেট সংলগ্ন বিরাটি মোড় থেকে বেলঘরিয়া যাওয়ার প্রধান সড়ক মধুসূদন ব্যানার্জি রোডের (এমবি রোড)। অভিযোগ উঠছে, দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবেই রাস্তাটির এই হাল। দায় নেওয়া দূরে থাক, পুরসভা ও পূর্ত দফতর অবশ্য আঙুল তুলছে একে অন্যের দিকেই।
এই পথেই যাতায়াত করে বারাসত-দক্ষিণেশ্বর, বিরাটি-বাবুঘাট, নিমতা-হাওড়া এবং বেলঘরিয়া-করুণাময়ী ভায়া বিরাটি রুটের বাস। পাশাপাশি চলে বিরাটি-নিমতা-বেলঘরিয়া রুটের অটোও। ছ’কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তার বেশির ভাগ অংশেই পিচের আস্তরণ উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। ছড়িয়েছিটিয়ে ইট-পাথরের টুকরো। ফলে অনেক সময়েই ব্রেক কষলে চাকা পিছলে যাচ্ছে। কখনও আবার পাশের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লেগে ঘটছে দুর্ঘটনা। এ দিকে, বর্ষায় রাস্তা তৈরি করতে গেলে পিচ-পাথরের বাঁধন নষ্ট হয়। তাই এ সময়টায় রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ থাকে। |
|
এম বি রোডের উপরেই রয়েছে পাঁচটি স্কুল, একটি কলেজ। অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী এই পথেই সাইকেলে যাতায়াত করে। ফলে রাস্তাটির এই বিপজ্জনক হালে চিন্তিত অভিভাবকেরাও। স্থানীয় বাসিন্দা স্বরূপ শীল বলেন, “এই রাস্তার অবস্থা এমনই যে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয়। ছেলেমেয়েরা যতক্ষণ না স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে, ততক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকি।” ওই পথেই একটি কলেজ, বিরাটি মৃণালিনী দত্ত মহাবিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রী তানিয়া ভৌমিক বলেন, “আমি অটোয় যাতায়াত করি। ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে চলার সময়ে মাঝেমধ্যেই ভয় হয়, এই বুঝি পড়ে যাব! স্কুল-কলেজ শুরু বা ছুটির সময়ে এই রাস্তা ধরে যাতায়াত করাটাই বেশ বিপজ্জনক।” |
|
ওই রাস্তায় নিত্য যাতায়াতকারী, বিরাটির বাসিন্দা শ্যামাপদ দাসের কথাতেও উঠে এল সেই ছবিই “রাস্তা খারাপ থাকায় সাইকেল-মোটরবাইকে যাতায়াত করতে গেলে মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষত রাতে যাতায়াত করলে দুর্ভোগ পোয়াতে হয়।”
ওই রাস্তায় চলাচলকারী অটো ইউনিয়নের বক্তব্য, অটোরিকশা তিন চাকা হওয়ায় খানাখন্দ ভরা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করার সময় দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি বেশি থাকে। খানাখন্দের কারণে যে কোনও মুহূর্তে যাত্রী-বোঝাই গাড়ি উল্টে বড় দুর্ঘটনার চেহারা নিতে পারে। তখন সমস্ত দায়ভার অটোচালকের উপর এসে পড়বে। আইএনটিটিইউসি সমর্থিত ওই ইউনিয়ন, প্রোগ্রেসিভ অটো ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট তথা ২০১ রুটের ভাইস প্রেসিডেন্ট বাণীপ্রসাদ চন্দ্রের অভিযোগ, “পুরসভার গাফিলতিতেই এই রাস্তার এমন হাল। এই রাস্তা দিয়ে বিভিন্ন রুটের বাস ও অটো ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করে। স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাও সাইকেলে যায়। মাঝেমধ্যে ছোটখাটো দুর্ঘটনায় কমবেশি আহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে সে দিক দিয়ে রাস্তাটি সময়মতো সংস্কার বা তদারকি খুবই জরুরি। আমরা বহু বার পুরসভায় ডেপুটেশন দিয়েছি পূর্ত দফতরকে রাস্তা সারানোর কথা বলার জন্য। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”
উত্তর দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান সিপিএমের সুনীল চক্রবর্তী অবশ্য দায় চাপিয়েছেন পূর্ত দফতরের উপরেই। তাঁর কথায়: “রাস্তাটি পূর্ত দফতরের। সংস্কারের দায়িত্বও তাদের। পুরসভার তরফে একাধিক বার চিঠি দিয়ে রাস্তাটি সারানোর কথা বলা হয়েছে। বেশ কিছু জায়গায় গর্তে চাকা পড়ে অটো উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমরা ইটের টুকরো দিয়ে রাস্তার গর্ত ভরাট করেছি। কিন্তু পূর্ত দফতরের গাফিলতির কারণেই এমবি রোড এ ভাবে সংস্কারহীন হয়ে পড়ে আছে।”
পূর্ত দফতরের তরফে বিভাগীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত ধরের পাল্টা অভিযোগ, “এম বি রোডের উত্তর দমদম পুরসভা এলাকাভুক্ত অংশ বেহাল হয়ে রয়েছে কারণ পুরসভা জলের পাইপ সারাতে গিয়ে আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই ওই রাস্তা কেটেছিল। তার পরে আর সারানো হয়নি। তাই রাস্তা ভাঙতে শুরু করে।” সে কথা মানতে নারাজ সুনীলবাবু বলেন, “রাস্তার পাশে জলের পাইপ ফাটলে সারানোর জন্য রাস্তা কাটতে হয়। তা সারানোর জন্য পূর্ত দফতরের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে সময় লাগে। তাই অনেক সময়েই আমরা নিজেরাই রাস্তা সংস্কার করে দিই।”
তা হলে রাস্তাটি কবে সারানো হবে?
দেবব্রতবাবু বলেন, “বর্ষায় পিচ-পাথরের কাজ করা যায় না। তবে খুব তাড়াতাড়ি আমরা প্রাথমিক সংস্কার করে দেব।” |
ছবি: সুদীপ ঘোষ |
|
|
|
|
|