|
|
|
|
|
|
পূর্ব কলকাতা |
ট্যাক্সি-রাজ |
...কিন্তু কেন যাব |
কাজল গুপ্ত |
গন্তব্য কাঁকুড়গাছি। জরুরি প্রয়োজনে দ্রুত পৌঁছতে ট্যাক্সি খুঁজছিলেন হাতিবাগানের বাসিন্দা রমাপদ গুহ। বিধাননগর পাঁচ নম্বর সেক্টরের টেকনোপলিস মোড়ে হা পিত্যেশ করে বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়ানোর পরে যা-ও বা ট্যাক্সি পেলেন, তারও চালক কাঁকুড়গাছি যেতে নারাজ। পরপর প্রত্যাখ্যান করলেন আরও কয়েক জন। অবশেষে এক জন রাজি হলেন, তবে কুড়ি টাকা বেশি দেওয়ার শর্তে। রাত নয়, সময়টা বিকেল সাড়ে পাঁচটা।
শুধু পাঁচ নম্বর সেক্টরই নয়, ট্যাক্সির প্রত্যাখ্যান এখন গোটা বিধাননগরেই নিত্যদিনের ঘটনা। অন্তত অভিযোগ তেমনই। অথচ বিধাননগরের ক্ষেত্রে চলতি প্রবাদ ট্যাক্সি এখানে আসতে চায় না, কারণ ফেরার সময়ে যাত্রী মেলে না। যাত্রী পেলে সল্টলেক থেকে কোনও চালকই প্রত্যাখ্যান করেন না। এমনটাই ট্যাক্সিচালকদের দাবি। যদিও যাত্রীদের অভিযোগ, ন্যূনতম দেড়শো টাকা ভাড়ার কম দূরত্বে সাধারণত কেউ যেতে রাজি হন না। অথচ, অভিযোগ জানাতে গেলে থানায় যেতে হবে। থানা খুঁজে পাওয়া বহিরাগতদের পক্ষে সময়সাপেক্ষ। তাই কলকাতার মতো বিধাননগরেও দ্রুত অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
শুধু একটি এলাকা নয়, বিধাননগর কমিশনারেটের ন’টি থানা এলাকাতেই দুর্ভোগের ছবিটা একই রকম। বাগুইআটি, কেষ্টপুর, বাঙুর, দমদম পার্ক, রাজারহাট, নিউটাউন ঘুরে নিত্যযাত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে একই অভিযোগ মিলেছে। |
|
নিউটাউনের বাসিন্দা অতনু ঘোষ বলেন, ‘‘নতুন করে শহর তৈরি হচ্ছে। এ দিকে, পরিবহণের বালাই নেই। রাত দশটা দূর অস্ৎ, সকালবেলাতেই মিটারের পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া চাইছেন ট্যাক্সিচালকেরা।” ট্যাক্সিচালকের অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক এলাকার বাসিন্দা পুষ্পেন্দু বসাকেরও। তাঁর বক্তব্য: “সল্টলেকে ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি রাস্তা আছে। ফলে সল্টলেক থেকে কাঁকুড়গাছি, হাতিবাগান, শিয়ালদহ কিংবা শ্যামবাজার পর্যন্ত গেলে এমনিতেই মিটারে অনেকটা ভাড়া ওঠে। তা সত্ত্বেও চালকেরা অতিরিক্ত ভাড়া চান।’’ ট্যাক্সিচালকদের এই ‘স্বেচ্ছাচারিতা’র প্রতিবাদ করছে ট্যাক্সি ইউনিয়নগুলোও। উত্তর ২৪ পরগনায় সিটু সমর্থিত ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের নেতা প্রমোদ ঝা যেমন বললেন, “আমরা সংগঠনগত ভাবে যাত্রী প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে। সকলে নয়, কোনও কোনও চালক এই কাজ করছেন। আসলে তেলের দাম বাড়ছে। এই অবস্থায় ট্যাক্সি চালিয়ে খরচ পোষাতে পারছেন না অনেকেই। সে জন্যই বেশি ভাড়ার দূরত্ব ছাড়া যেতে না চাওয়া বা বাড়তি ভাড়া চাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। তবে আমরা চালকদের বার বার এ নিয়ে সতর্ক করি। আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ জানালে সংশ্লিষ্ট চালককে তিন থেকে পাঁচ দিনের জন্য সাসপেন্ডও করি।” সল্টলেকে তৃণমূল সমর্থিত ট্যাক্সি ইউনিয়নের এক নেতা দিলীপ ঘোষও বলেন, “আমাদের স্ট্যান্ডগুলোতে তীব্র নজরদারি চালাচ্ছি। রোজই চালকদের অনুরোধ করছি যাত্রী প্রত্যাখ্যান না করতে।
অভিযোগ পেলে ব্যবস্থাও নিচ্ছি। তবু এমন ঘটতে থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক।” |
|
শুধু ট্যাক্সিচালকদের নিয়ে সমস্যা নয়, যাত্রীরা ক্ষুব্ধ পুলিশি ব্যবস্থার উপরেও। অতনুবাবু যেমন বললেন, “ট্যাক্সিচালকদের নিয়ে অভিযোগ করার কোনও ব্যবস্থা নেই। কমিশনারেট তৈরি হয়েছে। কিন্তু কলকাতার মতো ভিআইপি রোড, রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে কিংবা সল্টলেকে পুলিশ কিয়স্কগুলোতে অভিযোগ জানানোর ফর্ম নেই।” ১৩ নম্বর ট্যাঙ্ক এলাকার আর এক বাসিন্দা শুভেন্দু রাহার কথাতেও, ‘‘রাতের সল্টলেকে ট্যাক্সি মানেই আতঙ্ক। রাত ন’টার পর থেকে কাছাকাছি গেলেও সাধ্যের বাইরে ভাড়া চাওয়া হয়। কিন্তু দ্রুত পুলিশকে অভিযোগ জানানোর মতো ব্যবস্থা আছে কি না জানি না।’’
ট্রাফিক কর্মীদের অবশ্য দাবি, নির্দিষ্ট দূরত্বের ব্যবধানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গ্রিন পুলিশ থাকে। থাকেন পুলিশকর্মীরাও। তাঁদের কাছেও অভিযোগ করা যায়। ট্রাফিক বিভাগের নিজস্ব ওয়েবসাইট কিংবা ফেসবুকে কমিশনারেটের সাইটে ট্রাফিক সংক্রান্ত যোগাযোগের নম্বর আছে। এ ছাড়াও আছে একশো ডায়াল। বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর প্রচার করার কথা ছিল। কিন্তু সল্টলেকে তা নেই। ফলে অধিকাংশ বাসিন্দাই পুলিশকে যোগাযোগের নম্বর জানেন না।
আবাসিক সংগঠন ‘বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘কমিশনারেট এখনও সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে উঠতে পারেনি। বিশেষত বেসরকারি হাসপাতালে আসা রোগীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’
বাসিন্দাদের অভিযোগের জবাবে বিধাননগর কমিশনারেটের নবনিযুক্ত ডিসি (ট্রাফিক) প্রণব কুমার বলেন, “পুলিশে অভিযোগ জানানোর ফোন নম্বরগুলি যাতে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছয়, সেই প্রচারের দিকে আমরা বেশি গুরুত্ব দেব। পাশাপাশি পরিকাঠামো আরও ভাল করার দিকেও নজর দেওয়া হবে।”
|
ছবি: শৌভিক দে |
|
|
|
|
|