পকেট-ফ্রেন্ডলি ফ্যাশন
ভেজা পথের সাথী
নীল ক্যাপ্রির সঙ্গে স্মাইলি লাগানো স্লিপার। সালোয়ারের সঙ্গে কম হিলের পা-ঢাকা চটি। শর্ট স্কার্টের সঙ্গে ন্যুড পাম্পস্ না হলে ‘লুক’টাই মাটি! কিন্তু বর্ষা যে এসে গেল। দামি জুতো পরে তো আর জলে-কাদায় পা ডোবানো যায় না!
তবে কি জলেই যাবে ফ্যাশন?
নাঃ, সে ভয় নেই। এই বর্ষায় ‘স্টাইলিশ’ হয়ে উঠতে পারেন পকেট সুরক্ষিত রেখেই। সৌজন্যে, নিউমার্কেট থেকে হাতিবাগান কিংবা গড়িয়াহাটের ফুটপাথে অজস্র জুতোর দোকানগুলো। হাওয়াই চটি থেকে কোলাপুরি, বুট থেকে কিটো মিলছে সবই। কলেজপড়ুয়া থেকে মধ্যবয়সী, সকলের জন্যই রয়েছে মানানসই জুতো।
হাতিবাগানে নামী জুতোর দোকানের সামনেই এমন বেশ কিছু ‘পকেট-ফ্রেন্ডলি’ জুতোর দোকান। কিন্তু নামী কোম্পানির জুতোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে কী ভাবে বিক্রি হচ্ছে এ সব জুতো? এক দোকানি দীপ্ত দাসের কথায়: “বড় দোকানের তুলনায় আমাদের জিনিসের দাম কম। তাই ক্রেতাদের কাছে কদর বেশি।” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস কমিউনিকেশনের ছাত্রী উমা চট্টরাজের কথাতেও সেটাই পরিষ্কার “বর্ষা মানে তো ভাল জুতোর বারোটা! এই সব দোকানের জুতোগুলো দেখতেও সুন্দর, আবার দামে কম বলে অনেকগুলো কিনে পাল্টে পাল্টে পরা যায়।” দীপ্তবাবু জানালেন, সব মরসুমেই বিভিন্ন রকম জুতো রাখেন তাঁরা। যেমন, শীতে পা ঢাকা জুতো বেশি থাকে। বর্ষায় আবার জলে-কাদায় হাঁটার উপযোগী জুতো রাখা হয়।
বর্ষা মানেই যে সব পুরনো ডিজাইনের রবারের জুতো চোখে ভাসে, সে সব এখন অতীত। উজ্জ্বল রং আর নানা মজাদার আকারে জুতো মিলছে বছরভর। কোনওটা কম্পিউটার কি-বোর্ডের আকারে তো কোনওটা গাছের পাতার মতো। কোনও কোনও জুতো আবার সাজছে স্ট্রবেরি, আঙুরে। ডিজাইনার অভিষেক দত্ত যেমন বললেন, “প্রিন্টেড বা প্যাটার্নসের ফ্লিপ ফ্লপ, নিওন কালার্ড ক্রক্স বর্ষার জুতোর ছবিটা বদলে দিয়েছে। মেয়েদের জন্য আছে হাই অ্যাঙ্কেল বুটস্। তবে বর্ষার রাস্তায় হিল একেবারেই উপযোগী নয়।” আর এক ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালের কথাতেও, “এখন বাজারে খুব কম দামে রবার বা প্লাস্টিকের সুন্দর সুন্দর বর্ষার জুতো পাওয়া যাচ্ছে। পরলেও বেশ স্মার্ট আর ফাঙ্কি দেখায়। ক্রক্স যেমন একইসঙ্গে স্মার্ট ও আরামদায়ক। এ ছাড়া, রঙিন স্ট্র্যাপওলা হাওয়াই ও বিভিন্ন ধরনের সিক্যুইনের কাজ করা প্লাস্টিক চটি সব রকম পোশাকের সঙ্গেই দারুণ মানায়।” তাঁর মতে, আর এ সময়টায় যেহেতু চারদিক মেঘলা, বিষণ্ণ হয়ে থাকে, তাই রংবাহারি অ্যাকসেসরিজ ব্যবহার করা উচিত। নিওন বা ফ্লুরোসেন্ট রঙের জুতোয় বর্ষায় লুকটা ইন্টারেস্টিং করে তোলা যায়।
ক্রেতা বেশির ভাগই স্কুল-কলেজের পড়ুয়া। রাষ্ট্রবিদ্যার ছাত্রী পম্পা মান্না বলেন, “খানাখন্দ ভরা রাস্তায় হাঁটার পক্ষে এই সব জুতো অনেক আরামদায়ক, টেঁকসইও।” পিছিয়ে নেই অন্যরাও। তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী জ্যৈষ্ঠা উপাধ্যায় যেমন সাফ বলছেন, “বিভিন্ন জামার সঙ্গে ম্যাচ করে কিনে রাখি এই জুতো।” আর বছর তিরিশের গৃহবধূ টুম্পা দাসের কথায়: “বর্ষায় ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যাতায়াত থেকে বাজারহাট, সবের ভরসা নিত্যনতুন ডিজাইনের এই সব রবারের জুতোই। একটু ধুয়ে নিলেই পরিষ্কার।”
তবে নিউ মার্কেট চত্বরের দোকানি মহম্মদ মুস্তাকের মতে, নজরকাড়া এই সব জুতোর চাহিদা থাকে সারা বছরই। তিনি বলেন, “যখন যে ডিজাইন বেশি চলে, তখন সেটাই বেশি রাখি। এই বর্ষায় যেমন ভাল চলছে স্লিপ-অন এবং ছেলে ও মেয়েদের ক্রক্স জুতো।” ফুটপাথের এ সব দোকানের সম্ভারে এমন অনেক পছন্দসই ডিজাইন মেলে যা অনেক বড় দোকানেও মেলে না, জানাচ্ছেন পম্পা। গড়িয়াহাটের এক দোকানি প্রদীপ্ত দে বলেন, “ম্যাঙ্গালোর আর মুম্বই থেকে আনা নতুন ডিজাইনের নানা জুতো রাখি আমরা। সব বয়সের তো বটেই, বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গেও মানানসই।”
রাস্তার সঙ্গে তাল মেলাতে বাজারে নেমে পড়েছে নামী সংস্থাও। সেখানেও হাজির ‘পকেট-ফ্রেন্ডলি’ সম্ভার। “শুধু ফ্যাশনই নয়, আমরা জোর দিই আরাম ও টেঁকসই জুতোর উপরে,” বললেন ধর্মতলার নামী দোকানের কর্ণধার। ফুটপাথের জুতোয় পা গলাতে মন না চাইলে ঢুকে পড়া যায় এ সব দোকানেও। যেমন, হো চি মিন সরণির এক শপিং মলের বেশ কিছু দোকান সেজে উঠেছে এ মরসুমের উপযোগী হরেক জুতোয়। দোকানের কর্মী ইরফাক জানালেন, ক্রকস ও স্লিপ অন ছাড়াও তাঁরা রাখছেন ফ্লুরোসেন্ট রঙের ‘বেলি শু্য’। এই মলেরই তিনতলায় মিলছে কচিকাঁচাদের বর্ষার জুতো। এ ছাড়া, সব বয়সের ক্রেতাদের ক্ষেত্রেই ন্যুড পাম্প ও স্লিপ অনের বিক্রি সবচেয়ে বেশি।
পকেট-ফ্রেন্ডলি ফ্যাশনের এই দৌড়ে অবশ্য একটু হলেও পিছিয়ে ছেলেরা। বিক্রেতাদের মতে, ছেলেদের তুলনায় মেয়েরাই কেনেন বেশি।” প্রমাণও মিলল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অভীক চৌধুরীর কথায়, “মেয়েরা ফ্যাশনের খাতিরে একাধিক জুতো কেনে। আমি এখান থেকে বাড়িতে পরার জুতোই কিনি। রাস্তায় বেরোতে চাই ব্র্যান্ডেড জুতোই।”
তাতে অবশ্য ভাটা পড়ছে না ফুটপাথের ফ্যাশন-জুতোর বিক্রিতে। তবে মেঘলা দিনে নানা রঙে পা ঢাকতে ব্র্যান্ডেড জুতোর চেনা আশ্রয় না রাস্তার ধারের নিত্যনতুন রঙিন পাদুকা সিদ্ধান্ত আপনারই।




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.