|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে... |
|
পিঙ্কি তো অনেকেই আছেন
ঠিক সময়ে ধরা পড়লে তার সমাধানও সম্ভব। ডা. গৌতম
খাস্তগীরের সঙ্গে কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়। |
|
|
তাঁকে নিয়ে তোলপাড় কাণ্ড। তিনি আসলে কে? পুরুষ না মহিলা?
যাঁকে নিয়ে এত প্রশ্ন, আসলে তিনি পিঙ্কি প্রামাণিক। কিন্তু এ রকম অনেক ‘পিঙ্কি’ রয়েছেন আমাদের আশেপাশে। আমার বা আপনার বাড়িতে। পিঙ্কির সমস্যা সে উভলিঙ্গ (হার্মাফ্রোডাইট)। একই শরীরে ছেলে ও মেয়ে উভয়ের অঙ্গ বহন করছেন। যা কি না এক ধরনের শারীরিক ত্রুটি বলে জানাচ্ছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গৌতম খাস্তগীর। প্রতি ১০০০ জনের মধ্যে অন্তত এক থেকে দুই জন এ রকম শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্মায়। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। কিন্তু এঁরা আড়ালেই থেকে যান।
এমন ঘটনা নতুন নয়। ২০০৯-এর ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতা শুরুর আগে দৌড়বিদ কাস্টার সেমিনিয়ার ওপর নজর পড়েছিল ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের। এক বছরের মধ্যে তাঁর বিশাল পেশাগত সাফল্য দেখে আইএএএফ তাঁকে লিঙ্গ পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। জানা যায় সেমিনিয়া আসলে ইন্টার সেক্স। ঘটনা হল, এঁদের অনেকেই জানেন না, তাঁদের এ রকম কোনও সমস্যা আদৌ রয়েছে। কারও কাছে ব্যাপারটা ঝাপসা। ছোটবেলায় সব কিছু ঠিকঠাক ছিল। বয়ঃসন্ধিকালে দেখা গেল কিছু একটা গণ্ডগোল হচ্ছে। কেউ মেয়ে। দশ-বারো বছর বয়সে হঠাৎই মেয়েলি অঙ্গগুলি পুরুষাঙ্গে পরিণত হয়ে গেল। সারা দেহে লোম গজাল। যেন ম্যাজিক! আবার কোনও নবজাতক মেয়ে না ছেলে তার যৌনাঙ্গ দেখে ঠিক ঠাওর হল না। বিচ্ছিরি অবস্থা। কিছু না বুঝেই আন্দাজে ছেলে হিসেবে বড় করা হল। ভবিষ্যতে জানা গেল, সে আসলে মেয়ে। আবার শারীরিক ভাবে মেয়ে হয়েও, কারও মতিগতি পুরুষের মতো। এমনই গোলমেলে ব্যাপারস্যাপার। এরা উভলিঙ্গ। সহজ কথায় ইন্টার সেক্স।
|
|
রহস্যের গভীরে |
বাইরে থেকে কোনও মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বলছে সে মেয়ে। কিন্তু পেটের ভেতরে রয়েছে শুক্রাশয়। যা থেকে পুরুষ হরমোন বেরিয়ে তাঁকে পুরুষের মতো করে তুলছে। অথবা উল্টো ঘটনা। কোনও ব্যক্তিকে এক ঝলক দেখলে মনে হচ্ছে ছেলে। অথচ শরীরের ভেতর রয়েছে ডিম্বাশয়। এর থেকেই যাবতীয় বিভ্রান্তি। আফ্রিকায় বান্টু জনজাতির মানুষদের শরীরের ভেতর ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয় দুটোই মিলেমিশে থাকতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে সমস্যা আরও জটিল। এত সব ঝামেলার পেছনে কলকাঠি নাড়ছে কোনও ক্ষেত্রে হরমোন, আবার কোনও ক্ষেত্রে এনজাইম। গর্ভাবস্থায় বিশেষ কিছু ওষুধ খাওয়ার জন্যও এমন হতে পারে বলে জানাচ্ছেন ডা. খাস্তগীর। যে সব মেয়েরা খেলাধুলো করেন, তাঁদের শারীরিক শক্তি ও ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যে সব ওষুধ (অ্যানাবলিক স্টেরয়েড) দেওয়া হয়, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও পুরুষালি ভাব দেখা যায়। কোনও ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু স্থানে টিউমার তৈরি হয়েও হিসেব গড়বড় করে দেয়।
|
ত্রুটি পুষে রাখলে |
সমস্যা হতে পারে বিবাহিত জীবনে। যিনি মেয়ে হিসেবে বড় হয়েছেন, তাঁর দেহে শুক্রাশয় থাকলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রজনন ক্ষমতা থাকবে না। স্বাভাবিক মানুষের শরীরে শুক্রাশয় থাকে পুরুষাঙ্গের কাছে স্ক্রোটাম থলির ভেতর। উভলিঙ্গ মানুষের শরীরে এটি থাকে পেটের ভেতর। এ রকম শুক্রাশয়ে ক্যানসারের সমূহ সম্ভাবনা বলে জানালেন ডা. খাস্তগীর। তাই যৌনাঙ্গের অস্বাভাবিক গঠন দেখা গেলে, মেয়েদের শরীরে অতিরিক্ত লোম গজালে, সময়মতো পিরিয়ড শুরু না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
|
এখানেই শেষ নয় |
কিন্তু এ ভাবেই বেঁচে থাকা নিয়তি নয়। এরও সমাধান রয়েছে। যথাযথ চিকিৎসায় অনেকেই স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন বলে দাবি করলেন ডা. খাস্তগীর। হরমোন বা এনজাইমের জন্য সমস্যা হলে ওষুধের মাধ্যমেই তা ঠিক করে দেওয়া যায়। টিউমারের জন্য সমস্যা তৈরি হলে সেটি বাদ দিলে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে পারে।
তবে যাদের বাইরে-ভেতরে দুই রকম অঙ্গ, তারা ছেলে বা মেয়ে যাই-ই হোক, চেষ্টা করা হয় তাদের মহিলা হিসেবে জীবনযাপন করাতে। কারণ সেটাই সহজ উপায়। এদের শরীরের ভেতর শুক্রাশয় থাকলে অপারেশন করে সেটি বাদ দিয়ে বাইরে থেকে ইস্ট্রোজেন (মেয়েলি হরমোন) দেওয়া হয়, যাতে শারীরিক গঠনে মেয়েলি ভাব ফুটে ওঠে। মা হতে না পারলেও এরা বিয়ে করলে, স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি হতে বাধা থাকবে না। আর যে মেয়ের শরীরের ভেতর ডিম্বাশয় থাকা সত্ত্বেও তা কাজ না করায় সমস্যা তৈরি হয়, তাদের মেয়েলি হরমোন দিলেই সমস্যা অনেকটাই মিটে যায়। ডিম্বাশয়ের কাজের খামতির জন্য এদের ওভাম তৈরি হয় না। কিন্তু বাকি প্রজনন অঙ্গ যেমন জরায়ু ঠিক থাকলে ওভাম ডোনেশন করে এদেরও প্রেগন্যান্সি এনে দেওয়া যায়।
|
তা হলে? |
সমাজ ওকে মেয়ে হিসেবে জানে। অথচ এক দিন জানা গেল সে মেয়ে নয়, কোনও দিন মা হতে পারবে না। এই সমস্যার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে যুক্ত মানসিক ব্যাপার। ছোট বেলায় বোধ না থাকায় মানসিক সমস্যা হয় না। সে অবস্থায় চিকিৎসা করলে বাচ্চাটি বড় হতে হতে সমস্যা মিটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু যে মানুষটি এক ভাবে নিজেকে জেনে এসেছেন, দুম করে যদি জানেন যে তিনি তা নন, মানসিক ভাবে বিশাল ধাক্কা খেতে পারেন। আইডেনটিটি ক্রাইসিস তৈরি হয়ে যায়। ২০০৬-এ দোহায় এশিয়ান গেমস-এ যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় দৌড়বিদ শান্তি সৌন্দরাজন। প্রতিযোগিতায় তিনি রৌপ্য পদক পান। কিন্তু সে বারই লিঙ্গ নির্ণায়ক পরীক্ষায় জানা যায়, শান্তি আসলে ছেলে। ঘটনা জানাজানি হতে শান্তির পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনে প্রচুর সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। শেষমেশ শান্তি আত্মহত্যা করেন।
|
অতএব |
তাই এ রকম সমস্যা থাকলে সে ব্যক্তি ছেলে না মেয়ে তা জেনে বা জানিয়ে প্রকৃতপক্ষে তার বা সমাজের কোনও লাভ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এটি জেনে চিকিৎসায় কোনও পরিবর্তন হবে না। কিন্তু অযথা খবরটি জানাজানি হওয়ায় তিনি মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন। শুধু দরকার, তার কোনও রকম শারীরিক সমস্যা যাতে না হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
|
কী ভাবে ধরা পড়ে |
বাহ্যিক পরীক্ষায় অনেক সময় সমস্যা না-ও বোঝা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে
১) আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখা হয় শরীরের ভেতরে কী রয়েছে? ডিম্বাশয় না শুক্রাশয়।
২) আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করেও যদি বোঝা না যায় ভেতরের অঙ্গগুলির চরিত্র আসলে কী তবে ল্যাপরোস্কোপি করে সেই অঙ্গের কিছু অংশ বের করে নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
৩) হরমোনের কার্যকলাপ দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। তাতে সমস্যা ধরা পড়লে করা হয় এনজাইম টেস্ট।
৪) ছেলে কী মেয়ে তা বোঝার মোক্ষম অস্ত্র ক্রোমোজোম পরীক্ষা। দুটো এক্স ক্রোমোজোম হলে মেয়ে, এক্সের সঙ্গে ওয়াই হলে জিনের দিক থেকে সে ব্যক্তি ছেলে। |
কী করবেন |
কারও যৌনাঙ্গ বা জিন কী বলছে, সেটা বড় নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল, ছেলে না মেয়ে কী হিসেবে পরিচিত হয়ে এসেছেন, তাই
১) জন্মের পরে কোনও বাচ্চা ছেলে না মেয়ে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হলে, নিজেরা সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
২) বয়ঃসন্ধিকালে দ্বন্দ্ব তৈরি হলে, চিকিৎসকের সাহায্য নিয়ে চেষ্টা করুন সে যে ভাবে বড় হয়েছে, পরিচয়টা ধরে রাখতে।
৩) ইন্টার সেক্স-এর সমস্যা খুবই স্পর্শকাতর। তাই চিকিৎসা করে সমস্যা মেটান, কিন্তু বাস্তবটা তাকে না জানানোই বাঞ্ছনীয়।
৪) এত দিন তুমি মেয়ে ছিলে, এখন থেকে ছেলে এ রকম কিছু যেন তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়। আগে জানতে
হবে সেই মানুষটি কী চান? প্রয়োজনে মনঃচিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।
৫) সমস্যা মেটাতে কিছু অস্ত্রোপাচারের প্রয়োজন হতে পারে। বাইরে থেকে হরমোন দিয়েও চিকিৎসা করা যায়। |
|
যোগাযোগ-৯৮৩০৬৬৬৬০৬ |
|
|
|
|
|