|
|
|
|
|
|
|
মনোরঞ্জন ১... |
|
কালো রাত্রির অভিশাপ |
‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’ -এর গোথাম শহর আসলে আজকের পৃথিবী।
যেখানে হিংসাত্মক রাজনীতিই শেষ কথা। লিখছেন অঞ্জন দত্ত |
ক্রিস্টোফার নোলান-এর ব্যাটম্যান আবার ফিরে এল। তার প্রথম শো’তে, ডেনভারে, অরোরা থিয়েটার-এ শো’ চলাকালীন, ব্যাটম্যান-এর ভিলেন জোকার-এর কায়দায় ২৪-বছরের জেমস্ হোমস্ একটা মুখোশ পরে কাঁদানে গ্যাস এবং এ-কে-৪৭ নিয়ে মঞ্চ থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাল। ১২ জন নিরীহ দর্শক খুন হল। সব মিলিয়ে ৫০ জন গুরুতরভাবে আহত। পৃথিবী স্তম্ভিত। এফডিআই চিন্তিত। নির্দেশক নোলান নিজেই মর্মাহত। কিন্তু এই ঘটনা কি প্রমাণ করছে না যে পর্দার গোথাম শহর আসলে ছেলে-ভোলানো কমিক বইয়ের পটভূমিকা নয়? গোথাম আসলে আমেরিকা স্বয়ং।
নোলান-এর ‘ব্যাটম্যান’ সিরিজ (‘ব্যাটম্যান’, ‘দ্য ডার্ক নাইট’, ‘দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস’), বার বার আমাদের সামনে যে গথাম শহরকে দেখায়, তা কোনও ভাবেই অলীক নয়। গোথাম এই পৃথিবী। যেখানে হিংসাত্মক রাজনীতিই শেষ কথা। যেখানে সাম্রাজ্যবাদ, পুঁজিবাদ এবং চরম ভোগবাদের চূড়ান্তে এসে সমাজ বার বার করে হিংসাত্মক রাজনীতিকেই বেছে নিয়েছে। নিপীড়িত মানুষের প্রতীক এখন আর রবিন হুড নয়। তারা ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন। তাই বার বার ব্যাটম্যানের ভিলেনদের ধ্বংসের রাজনীতি একটা দর্শন হয়ে ওঠে। ‘ব্যাটম্যান বিগিনস্’-এর ভিলেন রাস আল-গুল (লিয়াম নিসন) ব্যাটম্যানকে বার বার মনে করিয়ে দেয় যে গোথাম শুধরে যাওয়ার উর্ধ্বে। গোথামকে জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে শেষ করলেই নতুন কিছু জন্ম নেবে।
দ্বিতীয় পর্বে (দ্য ডার্ক নাইট) অনবদ্য জোকার এক জন খ্যাপা গেরিলার মতোই তাত্ত্বিক। তার তত্ত্বকে না পারা যায় গিলতে। না ফেলতে। জোকার এক জন মুজাহিদিনের মতোই অনড়। নিজেই একটা হিউম্যান বম্ব। ডেনভারের অরোরা থিয়েটারে ২৪-বছরের হত্যাকারী হোমস্ যখন নিজেকে ধরা দেয়, আমার মনে পড়ে যায় জোকারের অভিনেতা হিথ লেজারের কথা। হিথ (ব্যক্তিগত ভাবে আমার মতে ইদানীং কালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনেতা) অভিনয়ের শেষে ড্রাগ ওভারডোজ নিয়ে মারা যান। ... হয়ত আত্মহত্যা। সেই ভয়ঙ্কর অথচ তাত্ত্বিক জোকার মুজাহিদিন আতঙ্কবাদীদের কথাই বলে। |
|
সাম্প্রতিকতম ব্যাটম্যানের ভিলেন মুখোশ-পরা বেন। টম হার্ডির অনবদ্য অভিনয় বেন-কে করে তোলে আরও একটা ওসামা। এবং তাই এই নতুন ছবির গোথাম ওই ‘নাইন-ইলেভেন’-এর আতঙ্কবাদী হামলার পর একটা বিধ্বস্ত নিউ ইয়র্ক সিটি। বেন-এর লম্বা বক্তৃতা আমাকে রোবস্পিয়ারের কথা মনে করায়। কিংবা ফরাসি বিপ্লবের জাঁ পল মারা’র হিংসাত্মক কবিতা। নোলান-এর সব চেয়ে বড় কৃতিত্ব এখানেই। আমরা মানি আর না মানি ব্যাটম্যান-এর ভিলেনরা শুধুমাত্র একটা খ্যাপা পাগল নয়। তাদের তত্ত্ব আছে, দর্শন আছে। তাদের উৎপত্তির পেছনে ইতিহাস আছে। তাই আজকের ব্যাটম্যান বার বার হেরে যায়। আজকের ব্যাটম্যান-এ তাই স্পেশাল এফেক্টস-এর বালাই নেই। সরাসরি ঘুসোঘুসি। নোলান-এর ব্যাটম্যান-এ কেউ সম্পূর্ণ ভাল নয়। সবার রং হয় কালো, নয় ছাই। ব্যাটম্যান নিজেই ডার্ক। তাই সে ধ্বংসের রাজনীতির সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে। তিনটি ছবির পর নোলান-এর ব্যাটম্যান-এর সমাপ্তি হল।
সব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আলো নয়। ধ্বংসের মধ্যেও আমরা আশার আলো দেখতে পাই। নোলান-এর দর্শন শেষ-মেশে সব কিছু পুড়িয়ে ফেলার দর্শন নয়। এই পচা, ধসা সমাজটাকেই এর মধ্যে থেকে দাঁড় করানোর দর্শন। ব্যাটম্যান থাকবে না। গোথাম থাকবে। চব্বিশ বছরের হোমস্ থাকবে। মুজাহিদিন আতঙ্কবাদী থাকবে। হিংসা বাড়বে। কিন্তু এরই মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকবে হয়তো ব্যাটম্যানের শাগরেদ রবিন অথবা এক জন সৎ পুলিশ অফিসার (জন ব্লেক)। এরই মধ্যে তৈরি করার কাজ চলবে। |
|
|
|
|
|